Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

পাহাড়ে ঢুকছে অস্ত্রের চালান

অস্ত্র

শাহজাহান আকন্দ শুভ ও ইউসুফ সোহেল:

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও কক্সবাজারের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা দিয়ে অস্ত্র পাচার হয়ে আসার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে বেড়ে গেছে। ভারী অস্ত্রের পাশাপাশি ছোট অস্ত্রের চালানও আসছে মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে।

সম্প্রতি অবৈধ অস্ত্রের বেশকিছু চালান এসেছে ৩ পার্বত্য জেলার সশস্ত্র গ্রুপগুলোর কাছে। এই অস্ত্র হাতবদল হয়ে সমতলের জেলাগুলোয় যাচ্ছে। আবার ৩ পার্বত্য জেলায় তৎপর বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপগুলোর হাতেও পৌঁছাচ্ছে। অস্ত্র ও গোলাবারুদের মজুদ গড়ে তারা নিজেদের শক্তি সঞ্চয় করছে। চাঁদাবাজি, অপহরণসহ নানা ধরনের অপরাধে ব্যবহারের মাধ্যমে পাহাড় অশান্ত করতে এ ধরনের অপতৎপরতা চলছে।

কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, পাহাড়ি এলাকায় অশান্তির দাবানল ছড়িয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন চক্র। তারা মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপগুলোকে নানাভাবে সংগঠিত হতে সহায়তাও করছে। আবার ৩ পার্বত্য জেলার সশস্ত্র গ্রুপগুলোকেও ইন্ধন দিচ্ছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত ও মিয়ানমারের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী/সন্ত্রাসী সংগঠনের সহায়তায় বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে প্রায়শই অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য পাচার করা হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এ প্রবণতা কিছুটা বেড়েছে। পার্বত্যাঞ্চলে তৎপর বিভিন্ন সশস্ত্র গ্রুপ তাদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য এসব অস্ত্র আমদানি করে থাকে।

এরই ধারাবাহিকতায় মিয়ানমারের বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান লিবারেশন পার্টির (এএলপি) সহযোগিতায় পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংহতি সমিতি (জেএসএস-সন্তু) অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা করছে। যা পার্বত্যাঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য খুবই উদ্বেগজনক।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে এএলপির সহায়তায় জেএসএস-সন্তু গ্রুপের কাছে রাইফেলের একটি চালান ঢুকেছে। গত ৯ ডিসেম্বর মিয়ানমারের কারেন প্রদেশে এএলপির অর্থ সম্পাদক ১৬টি একে-৪৭ রাইফেলসহ ধরা পড়ে। যে অস্ত্রগুলোর গন্তব্য ছিল ৩ পার্বত্য জেলায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার জেএসএস সভাপতি ও ভাইস চেয়ারম্যান চ সা থোয়াই মার্মা ওরফে পক্সের ছোট ভাই মাং ব্রা এবং রুমা উপজেলার জেএসএস সভাপতি লু প্রুর মাধ্যমে অস্ত্রের একটি চালান আসার কথা রয়েছে ভারতের মিজোরাম থেকে। এ জন্য ৮ জনকে ইতোমধ্যে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে চ সা থোয়াই মার্মা বলেন, একটি চক্র আগেও একবার আমাদের বিপদে ফেলেছিল। হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য চক্রটি ফের এ ধরনের অভিযোগ তুলছে; যা মিথ্যা, বানোয়াট ও দুরভিসন্ধিমূলক।

অভিন্ন মন্তব্য করে লু প্রু বলেন, ‘আমি টুকটাক ব্যবসা করে খাই। রুমা থেকে কোনো দুর্গম এলাকায়ও আমার যাতায়াত নেই। আমি একটি রাজনৈতিক দল করি। আমাদের কর্মকা- কোণঠাসা করতে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (সন্তু) তথ্য ও সহ-প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা বলেন, পার্বত্য ৩ জেলায় অবৈধ অস্ত্রের চালান আসছে তা অস্বীকার করার অবকাশ নেই। তবে এর সঙ্গে জনসংহতি সমিতির কোনো নেতাকর্মীর সম্পৃক্ততার বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে এ ধরনের যে খবর আসছে তা অনেকটাই অতিরঞ্জিত।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্ত্রের চালান এলে পার্বত্যাঞ্চলে চাঁদাবাজি, অপহরণসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কার্যক্রম বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তা ছাড়া অস্ত্রের চালান জেএসএসের আড়ালে অন্য কোনো জঙ্গিগোষ্ঠী বা সংগঠন ও তাদের পৃষ্ঠপোষকরাও আমদানি করে থাকতে পারে।

এসব অস্ত্র পার্বত্যাঞ্চলের গণ্ডি পেরিয়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও নাশকতার উদ্দেশ্যে ব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে। এ ধরনের অস্ত্রের চালান যাতে কোনোভাবেই বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সব গোয়েন্দা সংস্থাসহ সেনাবাহিনী, বিজিবি, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিবিড় এবং নিরবচ্ছিন্ন নজরদারিসহ সতর্কাবস্থায় থাকার পরামর্শ দেওয়া হয় গোয়েন্দা প্রতিবেদনে।

জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে যৌথবাহিনীর সদস্যরা খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষীছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমাকে ১টি ম্যাগাজিন, ৫ রাউন্ড গুলি ও আমেরিকার তৈরি ১টি ফাইভ স্টার পিস্তলসহ আটক করে। সুপার জ্যোতি চাকমা স্থানীয় সংগঠন ইউপিডিএফের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ইতোমধ্যে তিনি জামিনে এসেছেন। অনুরূপভাবে ইউপিডিএফ এবং জেএসএস নেতাকর্মীদের কাছে অস্ত্রের মজুদ বাড়ছে বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছে।

খাগড়াছড়ি জেলার পুলিশ সুপার আব্দুল মজিদ জানান, তার জেলায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে নিয়মিত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।

গোয়েন্দা তথ্যানুযায়ী বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকা দুর্গম হওয়ায় ওই অঞ্চলের বিস্তীর্ণ সীমান্ত এখনো অরক্ষিত। বিভিন্ন নামে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে সেখানে। এর মধ্যে আরাকান আর্মি (এএ), আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি) এবং রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) সবচেয়ে বেশি অপতৎপরতা চালাচ্ছে। এই ৩ সংগঠনের লোকবল এবং অস্ত্রশস্ত্রও বেশি।

এ ছাড়া ছোট-বড় আরও অনেক বিচ্ছিন্নতাবাদী ও জঙ্গি গ্রুপ পাহাড়ে সক্রিয় রয়েছে। তাদের নানাভাবে সংগঠিত করার চেষ্টা করছে দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহল। এসব সংগঠন ছাড়া দেশীয় বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপও পাহাড়ে অশান্তির আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করছে। বর্তমানে বাংলাদেশ-ভারত এবং বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ৩৬৯ কিলোমিটার অরক্ষিত পাহাড়ি এলাকা ওই অঞ্চলের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি বলে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সূত্র: আমাদের সময়

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন