পাহাড়ে এত অবৈধ অস্ত্র এলো কোথা থেকে- রূপ কুমার চাকমা
নিজস্ব প্রতিনিধি : রবিবার ১৪ মে রাঙ্গামাটিতে ছিল পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের দ্বারা পার্বত্য চট্টগ্রামে নির্যাতিত নিপীড়িত পাহাড়ী-বাঙ্গালীর এক ঐতিহাসিক সমাবেশ। রাঙ্গামাটির জিমনেশিয়াম মাঠে অনুষ্ঠিত এ মহাসমাবেশটি পাহাড়ী-বাঙ্গালী প্রতিবাদী মানুষের বজ্রকণ্ঠের আওয়াজে ছিল মুখরিত। বক্তাদের কণ্ঠ থেকে ঝড়েছে প্রতিবাদের তীব্র ভাষা। বিশেষ করে পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে রূপ কুমার চাকমার বক্তব্য ছিল অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো।
সমাবেশের মঞ্চে দাঁড়িয়ে রূপ কুমার চাকমা বলেন, শান্তি চুক্তি হয়েছে, সন্তু লারমার নেতৃত্বে অস্ত্র জমা দেয়া হয়েছে তাহলে পাহাড়ে এত অবৈধ অস্ত্র এলো কোথা থেকে? চুক্তির ফলে পাহাড়ী বাঙালী মিলে পার্বত্য চট্টগ্রামে আমরা সুখে শান্তি ঘুমাতে পারবো বলে, দুমুঠো ভাত খেতে পারবো বলে অনেক আশা করেছিলাম, কিন্তু তার কোন দেখা নেই। বরং তার বদলে পাহাড়ে সন্ত্রাসীরা তিনভাগে বিভক্ত হলো। ইউপিডিএফ, জেএসএস ও সংস্কার পার্টির নামে। সন্ত্রাস আরো বেড়ে গেলো। জেএসএস অস্ত্র জমা দিয়েছে কিন্তু তারপরেও পাহাড়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি কোথা থেকে এলো? আর প্রশাসন কি চোখে দেখে না? প্রশাসন কি দেখে না পাহাড়ে দিন দুপুরে চাঁদাবাজি হচ্ছে? অস্ত্র নিয়ে পাহাড়ে ঘুরাঘুরি করছে? তাদের ধরছে না কেন?
১৯৮৫ সালে উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের দ্বারা গঠিত তথাকথিত সশস্ত্র শান্তিবাহিনীর সদস্য কিনা মোহন চাকমা গেরিলা জীবন হতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত ছিলেন। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে হয়েছিলেন উচ্চকণ্ঠ এবং পাহাড়ী জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করেছিলেন তিনি। কিন্তু সন্ত্রাসীদের দৃষ্টিতে এটা ছিল এক বড় অপরাধ। সে কারণেই ১ ডিসেম্বর, ২০০৬ সালে উপজাতীয় সন্ত্রাসী সংগঠন জেএসএস রাঙ্গামাটির জুড়াছড়িতে নির্মমভাবে হত্যা করেছিলো তাকে। সেই কিনা মোহন চাকমার ছেলে রূপ কুমার চাকমা, তিনি নিজেও নির্যাতিত হয়েছেন সন্ত্রাসীদের দ্বারা। অপরণ করা হয়েছিল তার মা-বোনকেও।
তাই প্রতিবাদের মঞ্চ পেয়ে রূপ কুমার চাকমা কোন জড়তা-ভয়-ভীতিহীন কণ্ঠে গর্জে উঠেছিলেন রবিবারের সমাবেশে। বক্তব্য দিতে এসেই অগ্নিমূর্তি ধারণ করে রূপ কুমার চাকমা বলেন, বাবাকে হত্যা করা হয়, মা বোনকে অপহরণ করা হয়, আমার ওপর চলে অকথ্য নির্যাতন। তিনি সরাসরি এসব ঘটনার জন্য সন্তু লারমাকে দায়ী করে বিচার দাবি করেন। তিনি বজ্রকন্ঠে প্রশ্ন রাখেন, শান্তি চুক্তির পরও পাহাড়ী সন্ত্রাসী দলগুলোর কাছে অস্ত্র কেন? কেন সমানতালে চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন, গুম হচ্ছে?
এসব সন্ত্রাসীরা অস্ত্র দিয়ে পার্বত্যাঞ্চলের সাধারণ নিরিহ জনগণকে জিম্মি করে রেখে, সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখাচ্ছে। তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, আমাদেরকে লাইসেন্সধারী অস্ত্র দিন, যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি, এবার যুদ্ধ হবে সন্ত্রাসী, খুনি ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে। প্রয়োজনে নিজের জীবন বিলিয়ে দিব। আমি সব হারিয়েছি, পাওয়ার আশা কিছুই করি না।
তিনি প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি ইউনিয়নে এসব চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তোলার আহবান জানান। তিনি সন্ত্রাসীদের উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, অস্ত্রের ঝনঝনানি শুধু সাধারণ জনগণের ওপর দেখাতে পারেন, সাহস থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর সে সাহসের নমুনা দেখান।
মানবাধিকার কমিশনকে পক্ষপাত দুষ্টু অভিহিত করে রূপ কুমার চাকমা বলেন, যখন আমার বাবাকে হত্যা করা হল, মা-বোনকে অপহরণ করা হল, আমার ওপর নির্যাতন নেমে আসল তখন আপনাদের মানবাধিকার কোথায় ছিল?
তিনি প্রশ্ন রাখেন, দেশে যদি সালাউদ্দিন কাদেরদের মত বাঘা বাঘা রাজাকারদের সরকার বিচার করতে পারে, তাহলে পার্বত্যাঞ্চলের এসব সন্ত্রাসীদের কেন সরকার বিচার করতে পারবে না।
রুপ কুমার চাকমা আরও বলেন, সরকার ৪৬ বছর পরে এসে যদি যুদ্ধাপরীধের বিচার করতে পারে, জঙ্গীদের সমূলে ধব্বংস করতে পারে তাহলে পার্বত্য এলাকায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি বন্ধ করতে পারবে না কেন? যারা মানুষকে খুন করে তাদের বিচার করতে পারবে না কেন? পাহাড়ে কোন হত্যার বিচার হয় না কেন? এই পিঁপড়ার মত পাহাড়ী সন্ত্রসী গ্রুপকে সরকার কেন দমন করতে পারছে না?
তিনি আরও বলেন, আমরা আর পাহাড়ে চাঁদাবাজি, গুম, হত্যা, অপহরণ চাই না। পার্বত্য অঞ্চল বাংলাদেশের ভূখন্ড। সারা দেশে চাঁদা বাজি, গুম, হত্যা, অপহরণের বিচার হতে পারলে এই পার্বত্য অঞ্চলের বিচার হয় না কেন? পাহাড়ের মানুষ কি বাংলাদেশের নাগরিক নয়?