পাহাড়ের আরেক সাজেক ‘ভগবান টিলা’

 
 
নিজস্ব প্রতিবেদক, মাটিরাঙ্গা:
 
পাহাড়ে পর্যটনের আরেক সম্ভাবনা হয়ে উঠতে পারে মাটিরাঙ্গা উপজেলা সদরের শেষ প্রান্তে ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা তাইন্দংয়ে অবস্থিত ‘ভগবান টিলা’। ভগবান টিলাকে প্রর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হলে পাহাড়ের সৌন্দর্য্য ছড়িয়ে পড়বে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিশ্বময় এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা।
 
সামনের দিকে চোখ জুড়ানো দিগন্ত জোড়া সবুজ পাহাড়। পাহাড়ের চূড়া থেকে নেমে আসা ঝর্ণাধারা। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বহমান বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বিভাজন রেখা তৈরি করা ফেনী নদী। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৬’শ ফুট উপরে অবস্থিত ভগবান টিলা। আর এ ভগবান টিলা হয়ে উঠতে পারে পাহাড়ের আরেক সাজেক। জনশ্রুতি আছে ভগবান টিলা থেকে ডাক দিলে স্বয়ং ভগবান শুনতে পান। তবে স্থানীয়দের কাছে বি-টিলা নামেই অধিক পরিচিত ভগবান টিলা।
 
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলা থেকে সোজা উত্তরে বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তবর্তী ভগবান টিলা। খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে উত্তর-পশ্চিমে এর কৌণিক দূরত্ব আনুমানিক ৮৫ কিলোমিটার। সবুজের বুকে আকাবাঁকা আর উচুনিচু পথ শেষে অবস্থিত ভগবান টিলা যেন বিধাতার নিজ হাতে গড়া পর্বত রূপসী। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় এক হাজার ছয়’শ ফুট উঁচুতে অবস্থিত এ টিলায় রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। সবুজে ঘেরা বাঁশের ঝোঁপ, নাম না জানা নানান ধরনের পার্থিব ডাক আর পাহাড়ের নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝর্ণার কলকল জীবন্ত শব্দ সবকিছু মিলিয়ে হারিয়ে যাওয়ার এক অনন্য স্বপ্নপূরী ভগবান টিলা।
 
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ভগবান টিলায় বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন-বিজিবির একটি বিওপি বিদ্যমান আছে। নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে ভগবান টিলা-কে পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলার দাবি উঠেছে মাটিরাঙ্গার সচেতন মহল থেকে। তাদের মতে ভগবান টিলা-কে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হলে ভীড় করবে দেশ-বিদেশের হাজারো ভ্রমনপিপাসু পর্যটকরা। বদলে যাবে তাইন্দংয়ের আর্থ-সামাজিক অবস্থার।
 
বান্দরশিং এলাকার অধিবাসী নিহার বিন্দু চাকমা জানান, ভগবান টিলা ছাড়াও এখানে রয়েছে একাধিক ঝর্ণাধারা। যা ইতিমধ্যে স্থানীয়দের ভ্রমনের উৎস হয়ে উঠেছে। স্থানীয় স্কুল শিক্ষক মো. ইউনুছ মিয়ার মতে বগবান টিলা-কে ঘিরে পর্যটনের সম্ভাবনা রয়েছে। ভগবান টিলার পাশেই রয়েছে একাধিক ঝর্নাধারা। প্রকৃতির এক অপার সম্ভাবনাময় জনপদ ভগবান টিলা। এখানে কোন পর্যটক না আসলেও এখানে বেড়াতে আসা অনেকেই উপভোগ করছে এ প্রকৃতিধারা এমনটাই বললেন স্কুল শিক্ষক মো. ইউনুছ মিয়া।
 
তাইন্দং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, সাজেকে বসে মেঘের খেলা দেখতে দলে দলে পর্যটকরা সাজেক ছুটছে। ভগবান টিলাকে পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলা হলে এখানেও দলবেঁধে মানুষ সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে আসবে। তাইন্দংয়ের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে। এখানকার মানুষের নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। তার মতে নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে অবস্থিত ভগবান টিলা এ জনপদে অর্থনীতির দুয়ার খুলে দিতে পারে।
 
মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিভীষন কান্তি দাশ বলেন, পাহাড় আমাদের সম্পদ। সে পাহাড়ের ভাজে ভাজে সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। ভগবান টিলা সেরকমই এক সম্ভাবনাময় পাহাড়। ভগবান টিলাকে পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলার সম্ভাব্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
 
ভগবান টিলা আরেক সাজেক হতে পারে এমন মন্তব্য করে খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, অনেক আগেই ভগবান টিলার সৌন্দর্য্য’র কথা শুনেছি। তবে নিজের চোখে দেখা হয়ে উঠেনি। ভগবান টিলা-কে পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় সম্ভাব্যতা যাচাই করে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও পার্বত্যনিউজকে জানান তিনি। ভগবান টিলার সম্ভাবনা তুলে আনার জন্য পার্বত্যনিউজকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, নানা প্রতিকুলতার পরেও পাহাড়ের পর্যটন শিল্প দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখে আসছে।
 
Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন