পালিয়ে আসা নির্যাতিতা রোহিঙ্গা মহিলা ‘মুহসিনা’ এবং তার শিশু ‘আরকান’
টেকনাফ প্রতিনিধি:
টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ধর্ষিতা রোহিঙ্গা তরুণী মুহসিনা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। মা, বাবা, স্বামী, শশুর, শাশুড়ী কেউ নেই। ৫ জনই মিয়ানমার সেনার হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন। মাথা গোঁজার ঠাই বসতবাড়িটিও পুড়িয়ে দিয়া হয়েছে। সব হারিয়েও সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া সহোদর ভাই খাইর আহমদের সাথে অন্ততঃ জীবনটা বাঁচার তাগিদে ও ‘আরকান’ নামে পাঁচ মাস বয়সী শিশু পুত্রের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে সর্বহারা অনাথ ২১ জনের সঙ্গে গত ২৭ নভেম্বর ভোর রাতে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের তুলাতলী পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে লেদা ক্যাম্পে চলে এসেছে। বুধবার (৩০ নভেম্বর) বিকালে সরেজমিন লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে তার সাথে কথা বলে জানা গেছে এতথ্য।
মুহসিনা জানান, মিয়ানমারের আরকান রাজ্যের মংডু টাউনশীপের আওতাধীন উত্তর জামবইন্যা গ্রামের বাসিন্দা আবদুস শুক্কুরের স্ত্রী। আবদুস শুক্কুরের বাবার নাম ছৈয়দ আহমদ ও মায়ের নাম নুর জাহান বেগম। প্রায় ৩ সপ্তাহ আগে মিয়ানমার সেনা তাদের গ্রামে অভিযান চালায়। এসময় ৭ জন সেনার হাতে পালাক্রমে ধর্ষনের শিকার হন। গ্রামের দুই শতাধিক বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়। মা, বাবা, স্বামী, শশুর, শাশুড়ী সকলকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, পালাক্রমে ধর্ষনের পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সেনা চলে যাবার পর স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করানো হয়েছে। সামান্য সুস্থ হলে জীবিত থাকা আত্মীয়দের সহযোগিতায় বাংলাদেশে পাড়ি জমান। এখানে এসেও চিকিৎসা করা হয়েছে এবং এখনও অব্যাহত আছে। বাংলাদেশে এসে স্বস্তি বোধ করলেও তিনি খাবার, বাসস্থান, পোষাক, শীত কাপড়ের সংকটে রয়েছেন বলে জানান।
লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা ডাঃ দুদু মিয়া জানান, মুহসিনা ছাড়াও মিয়ানমার সেনার হাতে ধর্ষনের শিকার আরও কয়েকজন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা নারী প্রথমে লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নিলেও পরবর্তীতে শামলাপুর এবং কুতুপালং চলে গিয়েছে। তাদের নাম ঠিকানা সংরক্ষণ করা হয়নি। তিনি আরও জানান, লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সরকারী বা বেসরকারীভাবে কোন রেশন ব্যবস্থা নেই। এমনিতেই নিজেদের বেহাল অবস্থা। উপরন্ত নতুন করে আরও প্রায় ২ হাজার অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের চাপে বিশেষতঃ খাবার সংকটে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। তাছাড়া প্রতি দিনই ঢুকছে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা। এক দিনে শুধু লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পেই আরও শতাধিক অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা ঢুকেছে। এদের জন্য সরকারী বা বেসরকারীভাবে কোন সাহায্য-সহযোগিতা আসেনি।
তবে সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, ধর্ষিতা মুহসিনাসহ আরও কিছু অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা নারী-শিশু-পুরুষ লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ‘এ’ ব্লকে ডাঃ কবিরের আশ্রয়ে রয়েছেন।
ডাঃ কবির জানান, এরা তার আত্মীয় এমনকি পরিচিতও নন। মানবিক কারণে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। মানুষের সাহায্য নিয়ে এদের জন্য কোন রকম খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এদিকে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে মিয়ানমারের কুমিরখালী, শীলখালী, ঝিমংখালী, শনখলা পাড়া, নাকফুরা ইত্যাদি মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামে নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। এতদিন গ্রামগুলো অক্ষত ছিল। নাকফুরা গ্রামের প্রসিদ্ধ আলেম মাওঃ নুরুল আলমের পুত্র হাফেজ মাওঃ আনাসকে (১৯) মিয়ানমার সেনারা প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছে। তাছাড়া বসতঘরে এখনও অগ্নিসংযোগ না করলেও মুসলমানদের চাষাবাদের ধানের স্তুপ এবং ফিশারী ঘর পুড়িয়ে দিয়েছে।