পার্বত্য ৩ জেলায় নতুন অন্তবর্তী পরিষদ গঠনের প্রজ্ঞাপন ডিসেম্বরে

তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ

স্টাফ রিপোর্টার:
যে কোনো মুহূর্তে পার্বত্য তিন জেলায় নতুন অন্তবর্তী পরিষদ গঠন হতে পারে। সংসদে আইন সংশোধনের পরপরই নতুন পরিষদ গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। বর্তমানে প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। ডিসেম্বরের প্রথম দিকে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। সরকারের দায়িত্বশীল একটি সূত্র একথা জানা গেছে।

সূত্রমতে, সংশোধিত আইনে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রত্যেকটিতে চেয়ারম্যানসহ ১৫জন সদস্য নিয়োগ পাবে। এর আগে ছিলেন চেয়ারম্যানসহ ৫জন সদস্য। এবার ৫ থেকে ১৫-তে উন্নীত করে পরিষদের তিনটি আইন সংশোধন করেছে সরকার। সংশোধিত আইনে প্রত্যেক পরিষদে উপজাতিদের মধ্য হতে ১জন চেয়ারম্যান এবং সদস্য পদে ১৪ জনকে মনোনয়ন দেবে সরকার। তবে মূল আইনে নির্বাচনের কথা বলা আছে।

সরকার এরইমধ্যে নতুন পরিষদ তিনটি গঠন প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে। যে কোনো মুহূর্তে সেগুলো গেজেট আকারে প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রটি।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নিখিল কুমার চাকমা এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান কৈশহ্লা মারমা আবার নতুন করে পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পাচ্ছেন। তবে অপর জেলা খাগড়াছড়িতে চেয়ারম্যান কে হচ্ছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাইথো অং মারমাই নতুন করে পূর্ণাঙ্গ চেয়ারম্যান হতে পারেন।

রাঙামাটি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি চিংকিউ রোয়াজা বলেন, নতুন অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ গঠিত হলে জেলা পরিষদগুলোর গতিশীলতা বাড়বে। ৫সদস্য দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন চালানো হয়েছে। ১৫ সদস্য বিশিষ্ট যেটা করা হয়েছে সেটাও অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ।
তিনি এই আইন সংশোধনের মধ্যে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তা তাদের প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা হয়েছে। যেহেতু তিন পার্বত্য জেলায় জনপ্রতিনিধিত্বশীল সংস্থা, আমি মনে করি এই তিন পার্বত্য জেলা পরিষদে নির্বাচন হওয়া উচিত।

এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সঙ্গে কোন রকম আলোচনা না করে পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন (সংশোধন) করায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরূপা দেওয়ান। তিনি বলেন, চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইনটি আঞ্চলিক পরিষদেরও অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন ছিল। সেখানে আমরা যতটুকু জেনেছি আঞ্চলিক পরিষদের সাথে কোন পরামর্শ করা হয়নি। আমরা পার্বত্য এলাকার লোকেরা এমন একটা সময়ের মধ্যে যাচ্ছি যা হতাশার। আমরা যেটা চাচ্ছি, তা রাষ্ট্রের কাছে পাচ্ছি না।

উল্লেখ্য, সংসদে চলতি অধিবেশনে ‘রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন ২০১৪ ‘খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন ২০১৪’ এবং ‘বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ (সংশোধন) আইন ২০১৪’ নামে পৃথক তিনটি বিল উত্থাপন করার পর গত রোববার ওই তিনটি সংশোধনী বিল পাস হয়।
বিলে প্রত্যেক অন্তর্বর্তী পরিষদে চেয়ারম্যানসহ সদস্য সংখ্যা ৫ থেকে ১৫-তে উন্নীত করা হয়। এতে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে ১জন চেয়ারম্যান (উপজাতি) এবং সদস্য পদে উপজাতির মধ্যে ৪জন চাকমা, ২জন মারমা, ১জন খিয়াং, লুসাই ও পাংখোয়া, ১জন ত্রিপুরা, ১জন তঞ্চঙ্গ্যা, ৩জন অ-উপজাতীয়, ১জন উপজাতীয় মহিলা ও ১জন অ-উপজাতীয় মহিলা, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদে ১জন চেয়ারম্যান (উপজাতি) এবং সদস্য পদে উপজাতির মধ্য হতে ৩জন মারমা, ১জন তঞ্চঙ্গ্যা ও চাকমা, ১জন ম্রো, ১জন ত্রিপুরা, ১জন চাক, ১জন খিয়াং ও খুমি, ১জন বম, লুসাই, পাংখোয়া, ৩জন অ-উপজাতীয়, ১জন উপজাতীয় মহিলা ও ১জন অ-উপজাতীয় মহিলা এবং খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে ১জন চেয়ারম্যান (উপজাতীয়), সদস্য পদে উপজাতিদের মধ্য হতে ৩জন চাকমা, ৩জন মারমা, ৩জন ত্রিপুরা, ৩জন অ-উপজাতীয়, ১জন উপজাতীয় মহিলা ও ১জন অ-উপজাতীয় মহিলা মনোনয়ন দিয়ে অন্তর্বর্তী পরিষদ গঠনের কথা বলা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন