পার্বত্য ভূমি কমিশন আইন সংশোধন: চেয়ারম্যানসহ উপস্থিত সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সিদ্ধান্ত কমিশনের সিদ্ধান্ত বলে গণ্য হবে
সচিবালয়ে সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) আইন, ২০১৬’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের কোরাম ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে।
পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের কিছু সংশোধনের প্রস্তাব ছিল। সে বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান তিনি।
কি ঘটবে পার্বত্য ভূমি কমিশন আইন সংশোধন প্রস্তাব কার্যকর হলে?
আগে কমিশন চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তই কমিশনের সিদ্ধান্ত বলে গণ্য হত। আইন সংশোধন হলে চেয়ারম্যানসহ উপস্থিত সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সিদ্ধান্ত কমিশনের সিদ্ধান্ত বলে গণ্য হবে। চেয়ারম্যানের একক সিদ্ধান্তে আর কোনো বিষয় চূড়ান্ত হবে না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের নয় সদস্যের মধ্যে চেয়ারম্যানসহ দুইজন উপস্থিত থাকলেই এতোদিন কোরাম হত। আইন সংশোধনের হলে কোরামের জন্য চেয়ারম্যানসহ অন্তত তিন সদস্যের উপস্থিতি প্রয়োজন হবে।
ভেটিং শেষে মন্ত্রিসভার চূড়ান্ত অনুমোদন নিয়ে আইনটি পাসের জন্য সংসদে যাবে জানিয়ে সচিব বলেন, “সংসদ যেহেতু দুই মাস পরে বসবে, তাই ইমারজেন্সি বিবেচনায় এটাকে অধ্যাদেশ আকারে জারির সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
আইন সংশোধনের ফলে কমিশন চেয়ারম্যানের ক্ষমতা খর্ব হল কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “ঠিক খর্ব বলি না, একটু মডিফাই করা হয়েছে, এখন একক সিদ্ধান্ত নাই।
“পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সব প্রস্তাবই যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া সামরিক-বেসামরিক অন্যদেরও মতামত নেওয়া হয়েছে।”
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির শান্তিচুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ে কয়েক দশকের সংঘাতের অবসান ঘটে। সেই চুক্তি অনুযায়ী পাহাড়ের ভূমির অধিকার নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তিতে এই কমিশন গঠন করা হয়।
তবে কমিশনের চেয়ারম্যানের হাতে একক সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা থাকায় ওই কমিশন কার্যকর হচ্ছিল না বলে অভিযোগ করে আসছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা), যিনি জনসংহতি সমিতির সভাপতি।
১৯৯৯ সালের ৩ জুন গঠিত ভূমি কমিশনের প্রথম চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হক চৌধুরী দায়িত্ব নেওয়ার আগেই মারা যান।
২০০০ সালের ৫ এপ্রিল পুনর্গঠিত কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি আবদুল করিম দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন পর শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন।
২০০১ সালের ২৯ নভেম্বর পুনর্গঠিত কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি মাহমুদুর রহমান ২০০৭ সালে মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত তেমন কোনো কাজ করতে পারেননি।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার উল হক বর্তমানে এই কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন।
তবে মন্ত্রীসভার এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে পার্বত্য বাঙালী নাগরিক পরিষদ ও পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদ। পার্বত্য নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আলকাছ আল মামুন ভুঁইয়া, বাঙালী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাব্বির আহমেদ।
পার্বত্যনিউজকে নেতৃবৃন্দ বলেন, তিন পার্বত্য জেলার বেশিরভাগ জনগোষ্ঠী বাঙালীদের পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বের করার জন্য এটি একটি বড় ধরণের ষড়যন্ত্র। এই আইনের মধ্যদিয়ে পার্বত্য এলাকা বাঙালী মুক্ত করার সন্তু লারমার যে দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা তা সহজ হয়ে গেলো।
পার্বত্য বাঙালীরা এই আইন কখনই মেনে নেবে না। প্রয়োজনে বুকের রক্ত দিয়ে এই আইন প্রতিহত করা হবে।
নেতৃদ্বয় আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল বাঙালীরা এই আইন পুনর্বিবেচনার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছে। অন্যথায় প্রবল আন্দোলনের মাধ্যমে এই আইন বাতিল করতে বাধ্য করা হবে।