পার্বত্য নাইক্ষ্যংছড়ি কেন্দ্রে শিক্ষকের ভুলে এসএসসি পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে পারেনি

বাইশারী প্রতিনিধি:

শিক্ষকের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) গণিত পরীক্ষাও দিতে পারেনি এসএসসি পরীক্ষার্থী রোমেনা বেগম।

এর আগে ৭ এবং ৮ ফেব্রুয়ারি দিতে পারেনি ইংরেজি দ্বিতীয় ও ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের পরীক্ষাও। বর্তমানে চরম হতাশায় রোমেনা ও তার পরিবার ।

ঘটনাটি ঘটেছে পার্বত্য নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরের ছালেহ আহমদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে। আর রোমেনা আক্তার রামুর কচ্ছপিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী। তার রোল- ৬২। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রবেশপত্রের সাথে তার প্রকৃত ছবির  মিল নেই।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রোমেনা আক্তার। মানবিক বিভাগের এসএসসি পরীক্ষার্থী সে । রামুর কচ্ছপিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্রী। তার সহপাঠীরাসহ সে পরীক্ষা দিচ্ছিলো পার্শ্ববর্তী বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরের ছালেহ আহমদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে । গত ১ ফেব্রুয়ারি বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা দেয় সে। এ পরীক্ষা তার খুব ভালো হয়। পরেরটি বাংলা দ্বিতীয় পত্রসহ সব পরীক্ষাই তার ভাল হয়।

এ কারণে সে হাসি-খুশি পরীক্ষা দিচ্ছিল নিজের মতো করে। এমতাবস্থায় গত ৭ ফেব্রুয়ারি ইংরেজি দ্বিতীয় বিষয়ের পরীক্ষার দিন পরীক্ষার কেন্দ্রে যাত্রাকালে তার স্কুলের এক শিক্ষকের ফোনের মাধ্যমে নির্দেশ পেয়ে সে আর পরীক্ষা দিতে কেন্দ্রে যায়নি। এরপর থেকে সে বাড়িতে বসে কাদঁছিল আর নিজেকে প্রশ্ন করছিল কেন সে পরীক্ষা দিতে পারছে না। তার কি অপরাধ।

রোমেনা আক্তার বলেন, অন্যান্য দিনের মতো তার শিক্ষক  নুরুল হাকিম স্যার ৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা ২০ মিনিটের সময়  ফোন করে পরীক্ষার কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করেন। আর বলেন, তুমি কেন্দ্রে গেলে পুলিশে ধরে ফেলবে। তাই কেন্দ্রে যেও না। আরও অনেক কথা। এভাবে হঠাৎ করে এ ধরনের নির্দেশনা পেয়ে সে (রোমেনা) শিক্ষকের কাছে জানতে চেয়েও কোন ধরনের সন্তোষজনক উত্তর না পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।

রোমেনা আরও জানায়, সেদিনের পর থেকে তার খাওয়া ও ঘুম হারাম হয়ে যায়। সে চলমান পরীক্ষায় আবারও কেন্দ্রে যেতে চায় এবং পরীক্ষা দিতে চায়। না হয় জুনিয়রদের সাথে আগামী বছর সে পরীক্ষা দিতে পারবে না।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক নুরুল হাকিমের সাথে বার বার যোগাযোগ করলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব ও নাইক্ষ্যংছড়ি ছালেহ আহমদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহাদাত হোসেন বলেন, একটি মেয়ের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা ঠিক হয়নি। সংশ্লিষ্ট শিক্ষক কেন রোমেনা আক্তারকে পরীক্ষার হলে আসতে বাধা দিল তা এখনও বুঝে উঠতে পারছি না। এখানে কোন রহস্য আছে।

তিনি আরও জানান, প্রথমে তিনি একাধিক সূত্র মারফত শুনেছিল যে, এ ছাত্রীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে ছবি নিয়ে কে বা কারা অভিযোগ দেয়। পরে সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক লিখিত ভাবে জানালেন অসুস্থতার কারণে এ ছাত্রী পরীক্ষা দিচ্ছে না। এ ছাড়া অন্য কোন কথা প্রধান শিক্ষক তার লেখায় উল্লেখ করেনি।

তবে এ বিষয়ে রোমেনা আক্তার এবং তার পিতা ছৈয়দ হোসেন  বলেন, সে সম্পূর্ণ সুস্থ। পরীক্ষা দিতে না পারার মতো তার কোন অসুখ নেই।

কোন ধরনের অভিযোগ সে বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রফেসর মুহাম্মদ শওকত আলম জানান, তার কাছে এ রোমেনা আক্তারের বিষয়ে কোন অভিযোগ নেই। আর যে কোন ধরনের ছোট-খাটো ভুলের কারণে শিক্ষার্থীর পরীক্ষা বন্ধ করা যায় না।

তিনি আরও বলেন, অসুখ হলে কী অসুখ সুনির্দিষ্ট করে জানিয়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হয়। আর বোর্ড উর্ধ্বমহলকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন, তার পরে ব্যবস্থা। এর আগে নয়। কিন্তু এ বিষয়ে কেন ব্যতিক্রম হলো তিনি জেনে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম সরওয়ার কামাল এ বিষয়ে বলেন, একজন শিক্ষার্থী কেন পরীক্ষা দিচ্ছে না, বিষয়টি বোধে আসছে না তার। তিনি খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন