পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দায়িত্ব যাদের ওপরে তারা এ থেকে সরে যাচ্ছে: সুলতানা কামাল

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক

পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের দায়িত্ব যাদের ওপরে তারা এ থেকে সরে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে মানবাধিকারকর্মী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, তাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছার যথেষ্ট অভাব রয়েছে।বিভিন্ন সময় শাসক গোষ্ঠীর অনাগ্রহের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরের ২০ বছর পর উদাহরণ দিয়ে দেখানোর মতো অর্জন নেই।

শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক গোলটেবিল আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি) এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশন।

সুলতানা কামাল বলেন, ‘পার্বত্য চুক্তি ২০ বছর পর অনেকটা বাস্তবায়ন হয়েছে বলে যে দাবি করা হয়েছে সেই কাজগুলো অগুরুত্বপূর্ণ। চুক্তি বাস্তবায়নের ফলাফল পাওয়ার বিষয়টা আমরা পৌঁছাতে পারছি না এখনো। লক্ষে পৌঁছাতে হলে আমাদের অনেক কাজ করতে হবে, অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।’

পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিনিধি জনসংহতি সমিতির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর এই চুক্তি স্বাক্ষর করে। এতে স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং শান্তি বাহিনীর পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতা সন্তু লারমা।

দিন দিন প্রতিবন্ধকতাগুলো আরও জটিল হয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শুরুতে চুক্তি বাস্তবায়ন করা যতটা সহজ ছিল এখন সেটা আর তত সহজ নেই। কারণ জনপ্রতিনিধির যে ব্যাপার আছে সেটা বদলে গেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগোষ্ঠীর অনুপাত বদলে গেছে। নানা আইনকানুন চলে এসেছে। যে আইনগুলো সংশোধন করা হয়েছে সেটাও যে খুব বেশি যথাযথ সংশোধন হয়েছে সেটাও না। যে প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তোলার কথা ছিল সেটা সেভাবে গড়ে উঠেনি।’

সুলতানা কামাল বলেন, ‘ক্রমশ চুক্তি বাস্তবায়ন বাধার সম্মুখীন হয়েছে। সামরিক-বেসামরিক যেসব পক্ষ রয়েছে তাদের যে আচরণ তাতে আমরা এ কথা বলছে বাধ্য হচ্ছি যে-যাদের ওপরে চুক্তি বাস্তবায়নের দায়িত্ব তারা এর থেকে সরে গেছে। তাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছার যথেষ্ট অভাব রয়েছে।’

মুসলিম দার্শনিক জালাল উদ্দিন রুমির কথার উদ্ধৃতি দিয়ে সুলতানা কামাল বলেন, ‘যখনই আমরা হতাশার অন্ধকারে নিমজ্জিত হই আশাই আমাদের একমাত্র আলো দেখাতে পারে। আমরা সেই আশা নিয়েই বসে আছি, সেই আশাই আমাদের পথ দেখাবে। এই আশা আমরা ছাড়বো না। এই দেশ আমাদের। পার্বত্য চট্টগ্রামের যে সমস্যা এটা আমাদের জাতীয় সমস্যা।

যতদিন পর্যন্ত জাতিগতভাবে এটার জন্য কাজ না করতে পারবো, সেইভাবে সমাধানের চেষ্টা না করবো, ততদিন পর্যন্ত এটা কিনারে পড়ে থাকবে। কিন্তু সেটা কখনো হতে পারে না। আমরা এ শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে কাজ করে যাবো, জনমত আরও জোরালো করবো। আমাদের কথা বলে যেতে হবে। চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য যে কাজ আছে সে কাজগুলো করতে হবে।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক গৌতম দেওয়ান- ‘পার্বত্য চুক্তির বিশ বছর: একটি পর্যালোচনা’ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

সেখানে চুক্তিতে বিষয় তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, চুক্তির বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণের উদ্দেশ্যে একটি তিন সদস্য বিশিষ্ট ‘চুক্তি বাস্তবয়ন কমিটি’ গঠন; কমিটির আহ্বায়ককে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া;চুক্তির আওতায় বিবৃতি ঐক্যমত্য ও পালনীয় দায়িত্ব অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আইন বিধানাবলী পরিবর্তন সংশোধন ও সংযোজনসহ চুক্তির বিষয় তুরে ধরতে হবে।

বাঞ্ছিতা চাকমা অভিযোগ করেন, ভূমি বিরোধ সমস্যা নিষ্পত্তি কমিশন আইন হয়েছে কিন্তু সেটা কার্যকর নয়। ভূমি বিরোধ সমস্যা সমাধান হলে ৮০ শতাংশ সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।এসময় তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে বলেন, রোহিঙ্গারা যদি পার্বত্য চট্টগ্রামে ঢুকে পড়ে সেটা আমাদের জন্য আরও সমস্যা হবে। এ ব্যাপারে সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার (সন্তু লারমা) চুল দুএকটি পেকেছিল, আজ তার চুল দু-একটি কাচা আছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পর ২০ বছর পার হতে চললেও এখনো পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি। মূল যে সমস্যা সেটা হলো ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি। এ ভূমি বিরোধ সমাধান হলেই ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে যাবে।

এছাড়া ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২০ বছর: পার্বত্যবাসীর ভূমি অধিকার সমস্যা ও সমাধান’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য দেন রিইব এর নির্বাহী পরিচালক ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, এএলআরডি’র চেয়ারপারসন খুশী কবির, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক বাঞ্ছিতা চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন