Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন(সংশোধনী)-২০১৬: একটি অবিস্ফোরিত আনবিক বোমা

ভূমি কমিশন

॥ মোঃ মনিরুজ্জামান মনির ॥

দেশের এক ও অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ পার্বত্য চট্টগ্রাম। সুজলা, সুফলা, শস্যশ্যামলা প্রকৃতিক ঐশ্বর্য ভরপুর রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। ৫০৯৩ বর্গমাইল জুড়ে অসংখ্য গাছপালা, বন-বনানী, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, খালবিল ও খনিজ সম্পদের খনিতে আচ্ছন্ন আমাদের প্রানপ্রিয় বাংলাদেশের এই অংশ। স্বাধীনতার পরবর্তীকাল থেকেই এই অংশজুড়ে চলে আসছে সীমাহীন অস্থিরতা। দেশী-বিদেশী চক্রান্ত একদিকে পাহাড়ে বসবাসরত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠি অন্যদিকে সুদীর্ঘকাল থেকে তিন পার্বত্য জেলায় বাস করছেন বাংলাভাষী জনগোষ্ঠি। জনগনের ঐক্য, শান্তি ও সম্প্রীতির মাধ্যমে পাহাড়ে গড়ে উঠেছে নাগরিক জীবনের ছোঁয়া। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে আজ পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারতীয় সেভেন সিস্টার এরমত একটি জ¦লন্ত বাস্তবতা, এক ও অভিন্ন একটি বৈপ্লবিক মানচিত্র।

কিন্তু, সম্প্রতি একাধিক ঘটনার কারণে পাহাড়ের চির পরিচিত ঐকান্তিক গণজাগরণ, পারস্পরিক ভালবাসা, দেশপ্রেম, জাতীয় অখণ্ডতা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব যেন কিছুটা হলেও দ্বিধাদ্বন্দ্বের দোলাচলায় হাবুডুবু খাচ্ছে। ক্রমে যেন ফুটে উঠছে দেশের ভূমি, ভোট ও ভাতের অধিকার নিয়ে অধিকার হারা মানুষের আশংকা, সন্দেহ, দ্বিধা ও সংশয়।

গত ১ আগস্ট ২০১৬ সরকার মন্ত্রীসভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি-বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন-২০১৬ ভেটিং সাপেক্ষে অনুমোদন প্রদান করেন। ৯ আগস্ট তড়িঘড়ি করে জাতীয় সংসদের অধিবেশনের অপেক্ষা না করেই বিশেষ মহলের চাপে উক্ত ভূমি আইনটি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরসহ গেজেটের মাধ্যমে চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়, যা ইতিহাসে নজিরবিহীন। অথচ এই অতীব রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার প্রতি হুমকি সৃষ্টিকারী ভূমি কমিশন আইনটি আরো ধীরে ভেবেচিন্তে সংশোধন করা হলে পাহাড়ের বর্তমান সাংঘর্ষিক চিত্র তৈরী হতো না। কিংবা ভূমি মন্ত্রণালয়ের হাতে এ বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া যেত।

উল্লেখ্য, এই বিতর্কিত সংবিধান বিরোধী পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের কারনে তিন পার্বত্য জেলায় পরপর ৩ দিন স্বতঃস্ফুর্ত হরতাল পালিত হয়েছে। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের রাজপথ, নদীপথ কর্মস্থল, অফিস আদালত, স্কুল কলেজ ও তিন দিনের জন্য থমকে গিয়েছিল। জনগনের অধিকার আদায়ের জন্য স্থানীয় পার্বত্যবাসীরা কোনরূপ পিকেটিং ও জোর জবরদস্তি, দলীয় চাপ, ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে তারা ভূমি কমিশন সংশোধনী আইন-২০১৬ মানেনা, মানবেনা।

অথচ, সরকার এব্যাপারে অনড় থেকে জনগনের প্রতিক্রিয়াকে ন্যূনতম সম্মান ও জানায় নি, কোনরূপ আশ্বাসও দেন নাই। তবে, জনগনের প্রাথমিক বিজয় হিসেবে এটা স্বীকার্য যে, সরকার ভূমি কমিশনের যে বৈঠকটি খাগড়াছড়িতে ডাকার কথা ছিল, সেটি ডেকেছেন রাঙামাটিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড সম্মেলন কক্ষে। কিন্তু উক্ত ভূমি কমিশন আইনের প্রতিবাদে ৪ সেপ্টেম্বর, জনগন হরতাল ডাকাতে যথাস্থানে তাদের বৈঠকটিও হতে পারে নাই।

অবশ্য, রাঙামাটি জেলা সার্কিট হাউসে কমিশনের চেয়ারম্যান, সদস্য সচিব এবং উপজাতীয় নেতাদের মধ্যে একতরফা চা চক্র করে প্রশাসন তাকেই ভূমি কমিশনের প্রথম সফল বৈঠক(?) বলে চালিয়ে দিয়েছেন, যা নিতান্তই মিথ্যা ও সত্যের অপলাপ মাত্র। সরকারের প্রভাবশালী প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, কমিশন চেয়ারম্যান বিচারপতি মোহাম্মদ আনোয়ার উল হকসহ সরকারী কর্মকর্তারা বলছেন, এই কমিশনের কার্যক্রমে বাঙালিদের কোন রূপ ভয়ের কিছু নাই। কমিশন ৩ মাসের মধ্যে নিজেদের নিরপক্ষেতা ও সততার প্রমাণ দিতে পারবে। কিন্তু, বাস্তবে কি তাই হবে? কমিশনের চেয়ারম্যানের যে একক ও নির্বাহী ক্ষমতা ছিল, সেটিও আজ বিপন্ন। ফলে, কমিশন কার্যত উপজাতীয় নেতাদের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, যাতে করে পার্বত্যবাসী ভূমিহীন বাঙালিরা কোনরূপ ন্যায় বিচার পাবে না।

ভূমি-কমিশন-আইন

ভূমি কমিশনের প্রতি পার্বত্যবাসী বাঙালিদের অনাস্থা কেন?
মূলতঃ উপজাতীয় নেতাদের আবদার মোতাবেক তাদেরকে খুশী করার জন্যই সরকারের ভূমি আইন-২০১৬ পাশ করা হয়েছে। একশ্রেণীর সংবাদপত্র ও এক্ষেত্রে সন্তুু লারমার পক্ষে ওকালতি করেছেন। এরা কখনোই ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরীর সাহসী ভূমিকার ন্যূনতম মূল্যায়ন করে নাই। বিগত ১৯ বছরের মধ্যে বিচারপতি খাদেমুল ইসলামই প্রকৃত অর্থে ভূমি কমিশনকে কার্যকরী করতে পেরেছিলেন। তিনি নবগঠিত এই কমিশনের প্রধান কার্যালয় খাগড়াছড়িতে স্থাপন করে তিন পার্বত্য জেলায় ব্যাপক জনসংযোগের মাধ্যমে কমিশনের কাছে প্রায় ৫০০০ আবেদনকারী দরখাস্ত প্রদান করেছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমির ক্যাডেস্ট্রাল সার্ভে (যে ভূমিতে যিনি আছেন) করার উদ্যোগ ও তাঁরই। একাধিক শুনানীও করেছেন।

এমনকি, একাধিক বৈঠকও তিনি করেছিলেন উপজাতীয় নেতাদের সাথে। কিন্তু, এই বিচারপতিকেও সন্তুু লারমারা শান্তিতে থাকতে দেয়নি। তাঁকে অস্ট্রেলিয়া-কানাডাসহ দেশে-বিদেশে ভ্রমনের জন্য লোভনীয় অফার দেয়া হলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে ভূমি কমিশনকে কার্যকর করতে দিবারাত্র পরিশ্রম করেও সন্তুু বাবুদের কথা মতো কাজ না করাতে শেষ পর্যন্ত দুঃখজনকভাবে মেয়াদ উত্তীর্ণ করে নীরবে বিদায় নিয়েছিলেন।

অথচ, ঢাকার একটি সংবাদপত্র (প্রথম আলো) তাদের সম্পাদকীয়তে (১৯-১-১৬ইং লিখেছিলঃ পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান সন্তু লারমা বলেছেন “আইনে ত্রুটি রেখে কমিশন কাজ করলেও তারা মানবেন না। এ কথার ভিত্তি তৈরীতে সরকারী মহলেরও দায় আছে। কারন, ২০০১ সালের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনটি যে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে প্রনীত হয়েছিল, সেটি সরকারও স্বীকার করে নিয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, সংশোধিত আইনের খসড়ার ব্যাপারে সবপক্ষ একমত হয়েছে। এটি এখন মন্ত্রীসভায় অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। অথচ ঘোড়ার আগে চাবুক কেনার মতোই একের পর এক কাগুজে পার্বত্য ভূমি কমিশন গঠন করা হয়েছে। চুক্তির পর দেশে ফেরা ৯ হাজার ৩২৬টি উপজাতীর পরিবার হতাশগ্রস্ত হয়ে হড়েছে। তিন বছর আগে জনসংহতি ২৯টি দাবির মধ্যে যে ১৩টি বিষয়ে সমঝোতা হয়েছিল, তার ভিত্তিতে আইনে সংশোধনী আনা হলে এক ধাপ অগ্রগতি হতো। কমিশনকে তিন বছর বেকার বসে থাকতে হতোনা। সুতরাং দ্রুত আইন শুধরানো হোক। রাজনৈতিক সদিচ্ছার পরিচয় দেওয়াটাও একান্ত জরুরী”।

অর্থাৎ বিচারপতি খাদেমের আপ্রাণ চেষ্টায় কার্যকরী হওয়া পার্বত্য ভূমি কমিশনের বিষয়টিকে আদৌ সম্মান দেয়া হল না। বর্তমান কমিশনও সু-কৌশলে বিচারপতি খাদেমের কমিশনে আবেদনকারী প্রায় ৫ হাজার বিচার প্রার্থীর বিষয়ে কোনরূপ স্পষ্ট ঘোষণা দেন নাই। বরং আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে উপজাতি বাঙালিসহ যারা ভূমি বিষয়ক মামলার নিষ্পত্তি চায়, তাদেরকে নুতনভাবে দরখাস্ত করতে বলেছেন। এটাও রহস্যের সৃষ্টি করেছে। কেননা, হাকিম নড়ে তো, হুকুম নড়ে না।

অতএব, পূর্বেকার ৫০০০ আবেদন অবশ্যই একশনে যেতে বাধ্য। প্রকৃত পক্ষে পাহাড়ের অর্ধেক জনসংখ্যা বাংলাভাষী জনগোষ্ঠি। কমিশনে কোন বাঙালি সদস্য নাই। চেয়ারম্যান এবং সদস্য সচিব সরকারী নিয়োগপ্রাপ্ত বিধায়, বাঙালিরা ন্যায় বিচার পেল কি-না, সেটি তাদের প্রসিডিংস এ পড়বেনা। মূলত তাঁরা মেয়াদ পার করে স্ব-স্ব কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাওয়াটাই শ্রেয়ঃ মনে করবেন। ফলে, ভূমি কমিশনে বিচারপ্রার্থী বাঙালিরা যতই কান্নাকাটি করুক না কেন তা অরন্যে রোদনে পর্যবসিত হতে বাধ্য। কেননা, উপজাতি নেতারা আগেই বলে দিয়েছেনঃ “পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সরকারের কোন ভূমি অধিকার নাই”।

পার্বত্য শান্তিচুক্তির গোড়ায় গলদঃ
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর জেএসএস (শান্তিবাহিনী) এবং তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের চীফ হুইফ আবুল হাসনাত আব্দুল্লার সাথে সম্পাদিত চুক্তির (খ) ধারার ৩নং এ বর্ণিত স্থায়ী বাসিন্দাদের বিবরণীতে বলা হয়েছে।
১। চুক্তির (খ) এর ৩ ধারামতে অ-উপজাতীয় স্থায়ী বাসিন্দা বলতে যিনি উপজাতি নয়, এবং যাদের পার্বত্য জেলায় বৈধ জায়গা জমি আছে এবং যিনি পার্বত্য জেলায় সু-নির্দিষ্ট ঠিকানায় সাধারণতঃ বসবাস করেন, তাকেই বুঝাবে। অর্থাৎ তিনিই পার্বত্য চট্টগ্রামের বাসিন্দা।

অথচ, বাংলাদেশের সংবিধানে লেখা আছে বাংলাদেশে সীমারেখার মধ্যে যারা জন্মগ্রহণ করবেন তারাই বাংলাদেশী। তাই এই চুক্তি বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক।

২। ভূমি কমিশন গেজেটের ২নং ধারায় (ঐ) (ট) ()ঠ) মতে বর্তমানে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই কমিশনের প্রধান হবেন (১) একজন অবসর প্রাপ্ত বিচারপতি (২)( একজন সচিব (৩) চাকমা চীফ, (৪) বোমাং চীফ (৫) মংচীফ।
এক্ষেত্রে পাহাড়ের অর্ধেক জনসংখ্যা বাংলাভাষী জনগোষ্ঠির পক্ষে একজন প্রতিনিধি/সদস্যও রাখা হয়নি।

৩। ভূমি কমিশনের গেজেটের ১৬নং ধারা মতে, কমিশনের সিদ্ধান্তের আইনগত প্রকৃতির এবং চূড়ান্ত ধারা ৬ (১) এ বর্ণিত কোন বিষয়ে দাখিলকৃত আবেদনের উপর কমিশন প্রদত্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ানী আদালতে ডিক্রি বলে গণ্য হবে। তবে, উক্ত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোন আদালত বা অন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আপীল বা রিভিশন দায়ের বা তার বৈধতা বা যথার্থতা নিয়ে কোন প্রশ্ন করা যাবে না। এটি একটি অমানবিক আইন মাত্র।

তাহলে এটাই প্রমানিত সত্য যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের খুনী শান্তিবাহিনী জেএসএস যারা ৩৫০০০ বাঙালীকে হত্যা করেছে, বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়েছে, টাইম-বোমা, আগুন বোমায় ব্রাশ ফায়ারে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে, সেই নেতার সাথে তৎকালীন চীফ হুইপের করা চুক্তিটি আসলে একটি কালোচুক্তি। এখানে সন্তুু বাবুরা যা বলবেন, তাই মেনে চলতে হবে। অর্থাৎ বাঙালিরা এখানেও ন্যায় বিচার পাবে না। বাংলাদেশের আইনে মৃত্যুদন্ড পাওয়া আসামীরাও আপীল করতে পারেন, রিভিউ করতে পারেন, এমনকি রাষ্ট্রপতির কাছে ও চূড়ান্ত রায়ের বিরুদ্ধে নিজের ন্যায় বিচার প্রত্যাশা ব্যক্ত করতে পারেন। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে সেই মৌলিক মানবাধিকার টুকুও আজ হরণ করা হল। কেন?

শুধু তাই নয়, সংক্ষুব্ধ বাঙালিরা প্রতিকার চেয়ে কোন দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা/কর্মচারী কিংবা কমিশনের চেয়ারম্যান/সদস্য কারো বিরুদ্ধেও কোন দেওয়ানী বা ফৌজদারী মামলাও করতে পারবে না। অতিরিক্ত আবদার হিসেবে সন্তুু বাবুরা উক্ত কমিশনের কর্মকর্তা/কর্মচারী পদে যোগ্য/উপযুক্ত বাংলাভাষী জনবল নিয়োগকেও নিষিদ্ধ করে শুধুমাত্র উপজাতি নিয়োগের ব্যবস্থাও পাকাপোক্ত করে নিয়েছে। অর্থাৎ জলে-স্থলে অন্তরীক্ষে সব দিক দিয়ে পার্বত্যবাসী বাঙালিদের ভূমি, ভোট, ভাতের অধিকারকে কেড়ে নেয়ার চুড়ান্ত আলামত এই বিতর্কিত ভূমি কমিশন আইন-২০১৬।

তাই অধিকার হারা পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালি ও উপজাতি জনগোষ্ঠির কল্যাণে নিন্মোক্ত বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করছি:

১। বাংলাদেশে আদিবাসী বিষয়ক সংগঠনগুলোর তৎপরতা নিষিদ্ধ করতে হবে। বাঙালিরাই প্রকৃতভাবে বাংলাদেশের আদিবাসী, এই সত্যকেই সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

২। শিক্ষা, চাকুরী, ঠিকাদারী, ব্যবসা ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রে উপজাতি কোটা নামকরণ বাতিল করে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির কোটা/অনগ্রসর কোটা চালু করতে হবে।

উপজাতি ছাত্রাবাসের আদলে তিন পার্বত্য জেলায় বাঙালি ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য জনসংখ্যানুপাতে আলাদা-ছাত্রাবাস নির্মান করতে হবে।

৩। ভূমি সমস্যা নিরসনে অবিলম্বে পাহাড়ে ভূমি জরীপ (ক্যাডেস্টাল সার্ভে) করতে হবে। ভূমি কমিশন আইন-২০১৬ এর বৈষম্য মূলক ধারাগুলো বাতিল করতে হবে। বাঙালিদের নামে কেনা ও সরকার প্রদত্ত খাসজমি থেকে উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে (কবুলিয়ত প্রাপ্ত)। গুচ্ছ গ্রামের বাঙালিদেরকে স্ব-স্ব ভিটায় ঘর-বাড়ি করে দিতে হবে।

৪। পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের দমনে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে। ৩৫০০০ বাঙালীর খুনী শান্তিবাহিনীও সন্তুু লারমারদের বিচার করতে হবে।

৫। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা প্রত্যাহার চলবেনা। বরং সকল স্পর্শকাতর ঝুকিপূর্ণ অঞ্চলে আরো সেনাক্যাম্প, বিজিবি ক্যাম্প স্থাপনসহ টহল ডিউটি বাড়াতে হবে।

৬। উপজাতীয় আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর ঘৃনাত্মক, বিদ্বেষমূল্য সাম্প্রদায়িক ও বিচ্ছিন্নতাবাদী অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে। এজন্য কঠোর মনিটরিং চালু করতে হবে।

৭। ব্যবসা, ব্যাংক লোন, আয়কর, ভ্যাটসহ সব ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উপজাতিদের মতো বাঙালিদেরকেও সমঅধিকার দিতে হবে।

৮। পার্বত্য জেলা পরিষদ, আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম টাস্ক ফোর্স, পার্বত্য ভূমি কমিশন, পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব নিয়োগ, চাকুরীসহ সর্বক্ষেত্রে যুক্তিসঙ্গতভাবে বাঙালি ও উপজাতি কোটা ভাগ করে দিতে হবে।

বিশ্বের কোথাও ল্যান্ড রাইট স্থানীয় সরকারের হাতে দেয়া হয় না। আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামকে দক্ষিণ সুদান ও পূর্ব তিমুরের ভাগ্যবরণ করতে দিব না। পাহাড়ে বাংলাদেশ সরকারের অধিগ্রহণকৃত ভূমি, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্প-কারখানা ও সরকার বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নামে রেকর্ডকৃত ভূমি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রনেই দেখতে চাই। ১৯২৭ সালের রিজার্ভ ফরেস্ট আইন ও ১৯৭৮ সালের বন আইনের বাস্তবায়ন চাই। যুগপৎ ১৯৫৮ সালের ভূমি অধিগ্রহণ আইন, প্রাদেশিক সরকারের রাজস্ব দপ্তরের ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের আদেশ, ১৯৭৯ সালের ৩১ মার্চ ভূমি মন্ত্রণালয়ের জারী করা আদেশে পূর্ণ বাস্তবায়ন চাই। পাহাড়ে রেভিনিউ (রাজস্ব) আদায়ে জেলা প্রশাসকদের পূর্ণ ক্ষমতা দাবী করছি।

প্রথাগত ভূমি অধিকার কিংবা ব্রিটিশ হিল ট্র্যাক্টস ম্যানুয়েল এক্ট ১৯০০, আদিবাসী চক্রান্ত ইত্যাদির অবসান চাই। জুমল্যান্ড চাইনা, চাই সুজলা, সুফলা প্রানচঞ্চলা চেঙ্গী, মাইনী, কাছালং বিধৌত, পাহাড়ে অরন্য ঘেরা প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যে লালিত কর্নফুলীর অবিরাম জলধারা, আমাদের প্রাণপ্রিয় তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান।

লেখকঃ মোঃ মনিরুজ্জামান মনির, প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলন এবং সাবেক ডেপুটি কমান্ডার, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, রাঙামাটি জেলা ইউনিট, রাঙামাটি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন