পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স: রাজধানীর বুকে একখণ্ড পার্বত্য চট্টগ্রাম

পার্বত্য কমপ্লেক্স

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি ॥

৮ মে ২০১৬ তারিখে ৩৩ বেইলী রোড, ঢাকায় প্রায় ১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে পার্বত্য ঐতিহ্যমন্ডিত পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স নামে একটি নান্দনিক ভবনের ভিত্তিফলক উন্মোচন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স এর ভিত্তিফলক উন্মোচন করবেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় সংসদের উপনেতা ও শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র, আ, ম, উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এবং স্বাগত বক্তব্য রাখবেন মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা।

“পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স” শীর্ষক প্রকল্পটি সরকারের মধ্য মেয়াদী বাজেটের অন্তর্ভূক্ত যা ২০১৬ সালের ০৯ ফেব্রুয়ারী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেক-এ অনুমোদিত হয়।

কমপ্লেক্সটিতে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি অঞ্চলটির স্বাতন্ত্র্য তুলে ধরার পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর বাসভবন, আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও তিনজন সার্কেলপ্রধানের ঢাকায় অবস্থানের সময় থাকার ব্যবস্থা থাকবে। কমপ্লেক্সে একটি সাধারণ বিশ্রামাগারও থাকবে, যেখানে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ যখন খুশি এসে বিশ্রাম নিতে পারবেন। এ ছাড়া সামান্য ভাড়ায় তাঁরা তিন দিন তিন রাতের জন্য রুম ভাড়াও নিতে পারবেন। থাকবে পাহাড়ি খাওয়া দাওয়ারও সুব্যবস্থা। থাকবে একটি মিলনায়তন, প্রশাসনিক ভবন, মিউজিয়াম ও লাইব্রেরি।

এ প্রসঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা বলেন, ‘এই কমপ্লেক্স হবে পার্বত্যবাসীর জন্য রাজধানীতে একটি স্থায়ী ঠিকানা। পাহাড়ি অধিবাসীরা যখন ইচ্ছা এখানে আতিথেয়তা নিতে পারবেন। তাঁদের ঢাকা শহরের যেকোনো লোকেশনে অফিস বা পড়াশোনা বা চিকিৎসা বিষয়ে সহায়তা ও পরামর্শ দেওয়া হবে। এই কমপ্লেক্স নির্মিত হলে কোনো পাহাড়ি নৃগোষ্ঠীর সদস্যকে ঢাকায় এসে আর অসহায় অবস্থায় পড়তে হবে না।’

13161034_1040699916021801_936826871_o

উল্লেখ্য, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের সঙ্গে সমতলের মানুষের পারস্পরিক সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান, সহযোগিতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধন তৈরিতে কমপ্লেক্সটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। তা ছাড়া স্থাপনাটি পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, সামাজিক রীতিনীতি, ভাষা, ধর্ম এবং আচরণগত স্বাতন্ত্র্য সম্পর্কেও সমতলের মানুষকে পরিচিত করে তুলবে।

কমপ্লেক্সটি পর্যটকদের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও কৃষ্টি-সংস্কৃতির সমন্বয়ে একটি দৃষ্টিনন্দন শৈল্পিক স্থাপনা হিসেবেও বিবেচিত হবে। এখানে প্রায়ই পার্বত্য সংস্কৃতির মেলা বসবে। তুলে ধরা হবে পাহাড়িদের জীবনযাত্রা। কমপ্লেক্সে পাহাড়িদের তৈরি বিভিন্ন তৈজসপত্র, কাপড়চোপড়, বিভিন্ন ধরনের খাবারও পাওয়া যাবে। একে ঘিরে এখনই পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের মনে ব্যাপক আশা-আকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি হয়েছে।

পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, ‘আমরা এমন একটি দিনের অপেক্ষায়ই ছিলাম, যেদিন আমরা রাজধানীর বুকে একটি ঠিকানা খুঁজে পাব। যখন আমি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাইনি, তখনো আমার ইচ্ছা ছিল পাহাড়িরে জন্য ঢাকায় কেমন করে একটি ঠিকানা গড়ে তোলা যায়। স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।’

বীর বাহাদুর আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর মতো একজন হৃদয়বান মানুষের পক্ষেই পিছিয়ে পড়া পাহাড়িদের জন্য এমন মূল্যবান একটি জমি দান করে তাতে সরকারি খরচে কমপ্লেক্স তৈরি করে দেওয়া সম্ভব। এটি পাহাড়িদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অমূল্য উপহার হয়ে থাকবে।’

এদিকে পার্বত্য কমপ্লেক্স যেন উপজাতি কমপ্লেক্স না হয়ে জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকল পার্বত্য বাসীর কমপ্লেক্স হতে পারে সে দাবীতে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙালী সংগঠনগুলো ঢাকায় ও খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে।

পার্বত্য বাঙালী ছাত্র পরিষদের ঢাকা মহানগরীর সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শাহাদাত হোসেন সাকিব পার্বত্যনিউজকে বলেন, রাজধানীতে পার্বত্য কমপ্লেক্স নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে পার্বত্য বাঙালীরা অভিনন্দন জানাই। কিন্তু পার্বত্য মন্ত্রণালয় তাদের স্বভাবসুলভ বাঙালী বিদ্বেষী নীতি নিয়ে পার্বত্য কমপ্লেক্সকে উপজাতি কমপ্লেক্সে পরিণত করার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের দাওয়াত থেকে শুরু করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আশেপাশের দেয়ালে যেসব আলপনা ও ছবি আঁকা হয়েছে তাতেও বাঙালীদের প্রতি বৈষম্য দেখানো হয়েছে। এমনকি আমরা বাঙালী ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে কিছু ফেস্টুন লাগানোর ইচ্ছা প্রকাশ করলেও অনুমতি পাইনি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পার্বত্য কমপ্লেক্স, পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন