পার্বত্য চট্টগ্রামে উপনিবেশিক শাসন চলছে- আনু মুহম্মদ

প্রেস বিজ্ঞপ্তি:
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপনিবেশিক শাসন চলছে, যুদ্ধে ধর্ষণ হচ্ছে দমনের অস্ত্র, পার্বত্য চট্টগ্রামেও একই নীতি অনুসৃত
হচ্ছে বলে শুক্রবার ঢাকায় তিন নারী সংগঠনের গোল টেবিল বৈঠকে বক্তাগণ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
বিলাইছড়িতে দুই মারমা নারীকে যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেছিল তিন নারী সংগঠন- সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, সিপিবি নারী সেল ও ইউপিডিএফ সমর্থিত হিল উইমেন্স ফেডারেশন।

সকাল সাড়ে ১০টায় অনুষ্ঠিত গোল টেবিল বৈঠকে আলোচনায় অংশ নেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুত-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আকমল হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আমেনা মোহসিন, ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান, লেখক রেহনুমা আহমেদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ড. বিনা শিকদার, গবেষক সায়দিয়া গুলরুখ, শ্রমজীবী নারী মৈত্রীর আহ্বায়ক বহ্নিশিখা জামালী, নারী সংহতির সাধারণ সম্পাদক অপরাজিতা চন্দ, বিপ্লবী নারী ফোরামের সদস্য আমেনা আক্তার, বাংলাদেশ নারী মৈত্রী কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সদস্য নাঈমা খালেদ মনিকা, ইউপিডিএফ সংগঠক মাইকেল চাকমা, সংস্কৃতি কর্মী বীথি ঘোষ, লেখক শিবিরের সদস্য দীপা মল্লিক ও মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিলের ঢাকা শাখার সভাপতি নুমং প্রু মারমাসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

বৈঠকের সাথে সংহতি ও একাত্মতা প্রকাশ করে উপস্থিত ছিলেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি অংগ্য মারমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি বিনয়ন চাকমা ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি ইমরান হাবিব রুমন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের শম্পা বসু। বৈঠক সঞ্চলনা করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা।

গোল টেবিল বৈঠকে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুত-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ জোরাল ভাষায় সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে যে ঔপনিবেশিক শাসন চলছে এর মূল সংবিধানে নিহিত রয়েছে। সংবিধানে জাতিসত্তাদের কোন স্বীকৃতি নেই’।

তিনি বলেন, ‘অপরাধের বিচার না হওয়ার সাথে ক্ষমতা জড়িত থাকে। আমরা দেখি যে সব অপরাধী ক্ষমতার সাথে যুক্ত নয় তাদের বিচার হয়, কিন্তু ক্ষমতার সাথে জড়িতদের শাস্তি হয় না। শাস্তি হয় তখনই, যখন জনগণ আন্দোলন করে সরকারকে বাধ্য করতে সক্ষম হয়। এর উদাহরণ হচ্ছে দিনাজপূরে ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তি। অন্যদিকে ক্ষমতার সাথে জড়িত অপরাধের ঘটনা কল্পনা অপহরণ-তনু হত্যার বিচার এখনো হয় নি’।

তিনি বলেন, ‘কতটুকু ঔদ্ধত্য ও ক্ষমতান্ধ হলে লাইট বন্ধ করে হাসপাতাল আক্রমণ করে অন্যদেরকে মারধর করে, রুমে আটকিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যেতে পারে!’

তিনি প্রশ্ন করে বলেন, নিরাপত্তার নাম দিয়ে সেখানে সেনাবাহিনী অবস্থান করছে। কিন্তু যখন মিঠুনরা খুন হন, তখন তাদের নিরাপত্তা কোথায় যায়’?

তিনি গণমাধ্যমকে সমালোচনা করে বলেন, ‘এত বড় ঘটনা ঘটলো অথচ গণমাধ্যম নিরব ভুমিকা পালন করছে। গণমাধ্যমকে স্পষ্ট করতে হবে তাদের নিরবতা কি চাপের কারণে? তা যদি না হয় তাহলে নিজেদের এতে দায় নিতে হবে’।

অবসরপ্রাপ্ত ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আকমল হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র আছে বলে করি না। এ রাষ্ট্রকে কিছুতেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলা যায় না। তাহলে বিলাইছড়িতে রাষ্ট্রীয় বাহিনী দ্বারা এমন ঘটনা এবং বিচার হবে না কেন? ফ্যাসিবাদ ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সংগঠিত আন্দোলন করতে হবে’।

তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শুধুমাত্র বাঙালি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা ছিল না। কিন্তু আজ তাই হচ্ছে’।

ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক আমেনা মহসিন বলেন, ‘যুদ্ধের সময় ধর্ষণকে দমনের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামেও এই নীতিকে অনুসরণ করা হচ্ছে। যে প্রক্রিয়ায় শক্তি প্রয়োগ করে ধর্ষণের শিকার দুই বোনকে নিয়ে যাওয়া হলো, তা থেকে তাদের কত ক্ষমতার দাপট আধিপত্য বেরিয়ে এসেছে। এ দেশে ক্ষমতাশালীদের জবাব দিহিতা নেই, এ কারণে এমন ঘটনা ঘটছে’।

ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান বলেন, ‘হাসপাতালের মতো সংরক্ষিত জায়গা থেকে রাণীর মতো সম্মানিত ব্যক্তিকে লাঞ্ছিত করে অপহরণ করে নিয়ে যায়, তা থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে তাদের অপরাধ কত ঘৃণ্য পর্যায়ে চলে গেছে’।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। রাষ্ট্রপক্ষ সময় চেয়ে কাল ক্ষেপণ করে টালবাহানা করছে। ষড়যন্ত্র করে ভিকটিমদের মা-বাবা থেকে ওকালত নামা নেয়া হয়েছে, তাদেরকে নেয়া হয়েছে তাদের নিয়ন্ত্রণে। আমরা এক কোর্টে রিট করা সত্তেও রাষ্ট্রপক্ষ নিয়ম বহির্ভূতভাবে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অন্যকোর্টে রিট করে অন্যায়ভাবে রুল নিয়েছে’।

গবেষক সায়দিয়া গুলরুখ বলেন, ’ভিকটিমদের ব্যাপক মানুষিক চাপের মধ্যে রাখা হয়েছে। তাদের ওপর বাংলা ছাড়া অন্য ভাষায় কথা বলার বাধা রয়েছে, এমন কী মাতৃভাষায়ও। এই ভাষার মাসে এমন আচরণ করা হচ্ছে তাতে অবাক হতে হয়। বিশ্বের অন্যতম নিষ্কৃষ্ট সেনাবাহিনী ইসরাইলের সেনা বাহিনীও হাসপাতালে এমন আচরণ করে কিনা জানা নেই।’

সভাপতির বক্তবে সভাপতি চম্পা বসু বলেন, ‘এই ধর্ষণের বিচার নিয়ে আমাদের শংকা জেগেছে। ইতিমধ্যে মেডিক্যাল রিপোর্ট নিয়ে টালবাহানা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি নতুন নয়। তদন্ত গ্রেফতার তো দূরের কথা দালাল ভাড়া করে সংবাদ সম্মেলন করানো হচ্ছে। ভিকটিমদের মা-বাবাকে কার্যত বন্দী করে রাখা হয়েছে’।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন