Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

পার্বত্য অঞ্চলে ভারত-মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অবাধ চলাচল

পাহাড়

মাছুম বিল্লাহ, রাঙামাটি থেকে ফিরে:

পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে দুর্গম এলাকায় ভারত ও মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সদস্যদের অবাধ যাতায়াত আছে। গত ডিসেম্বরে খাগড়াছড়ির কচুছড়ায় ভারতের আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়া চাকমা জঙ্গিদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন বলে গত ২৯ ডিসেম্বর ভারতীর দৈনিক যুগশঙ্খে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

ওই খবরে বলা হয়, এউপিডিএফ ক্যাডার বীরকেতন চাকমা, অরুণ বড়ুয়া, বাবুল বড়ুয়া, বিশু বড়ুয়াসহ মোট ২৫ জন ক্যাডারের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড পরেশ বড়ুয়া। এর আগে গত অক্টোবরে রাঙামাটির রাজস্থলীর ইসলামপুর থেকে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির নেতা রেনিন সুয়েকে আটক করে পুলিশ ও বিজিবি।

এসব ঘটনায় পার্বত্য অঞ্চলে প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অবাধ যাতায়াতে দেশের নিরাপত্তা ও সার্বোভৌমত্ব নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এমনিতেই পাহাড়ী-বাঙালীসহ তিনটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের বিরোধে পাহাড় হয়ে উঠে অশান্ত। এরপর মরার ওপর খরার ঘা হয়ে উঠেছে সীমান্ত এসব বিচ্ছিন্নতাবাদীদের যাতায়াত এবং অস্ত্র ও মাদক চোরালাচালানের দুর্ঘটনা।

অরণ্যঘেরা তিন পার্বত্য জেলার প্রায় সাড়ে চারশ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় দুর্গমতার কারণে অনেকটাজুড়েই বিজিবির নিয়ন্ত্রণ সীমিত। এই সুযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই পার্বত্য চট্টগ্রাম সীমান্ত এলাকায় প্রতিবেশী ভারত এবং মিয়ানমারের বেশ কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর আনাগোনা ও বিচরণ রয়েছে বলে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। তারা পার্বত্য অঞ্চলের অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। গহীন অরণ্য অঞ্চলগুলো নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বেছে নেয় এবং সেখানে স্বল্পস্থায়ী, সাময়িক অবস্থান নিয়ে পাহাড়ী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে মিলে অস্ত্র-মাদক ও অপহরণ-চাঁদাবাজির মতো কর্মকাণ্ড চালায়।

অন্যমিডিয়া

সূত্র জানায়, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বাঘাইছড়ির সাজেক, মাচালং, ভুয়াছড়ি এবং খাগড়াছড়ি জেলার বাঘাইহাট, কলাবন্যা, ধুধুকছড়া, থারানী-সারাশী এলাকায় ভারতের একাধিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গ্রুপের আনাগোনা ও বিচরণ রয়েছে। এছাড়া বান্দরবানের গহিন অরণ্যে সাময়িক ঘাঁটি গাড়ে মিয়ানমারের অনেকগুলো সন্ত্রাসী গ্রুপ। সেইসব সন্ত্রাসী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অস্ত্র চোরাচালান, চাঁদাবাজি, লুটপাট, অপহরণের মতো নানা ধরনের সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালায়। বান্দরবানের গহিন অরণ্য অতিক্রম করে রুমা-থানছি হয়ে রাঙ্গামাটি জেলার সীমান্তবর্তী বিলাইছড়ির ফারুয়া, বড়থলি, রাজস্থলীর তাইতংপাড়া, জুরাছড়ির দুমদুম্যা, মৈদং, বর কলক, বরকলের বড় হরিণা পর্যন্ত মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান লিবারেশন পার্টি (এনএলপি), ভারতের মিজোরামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন, মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এমএনএফ) ও মিজো ইউনিয়নসহ উত্তর-পূর্বের সব বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের আনাগোনা ও বিচরণ বিস্তৃত।

এদিকে রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার দুর্গম সাজেক, গঙ্গারামমুখ, ভুয়োছড়ি এবং বরকল উপজেলার দুর্গম বড় হরিণা ও থেগামুখ সীমান্ত এলাকায় ভারতের মিজোরামভিত্তিক রিয়াং উপজাতীয়দের স্বাধীনতাকামী বিচ্ছিন্নতাবাদী দল বিএনএলএফ (বোরা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট)-এর সশস্ত্র গ্রুপ ছাড়াও রাঙ্গামাটির সাজেক, মাচালং ও খাগড়াছড়ির দীঘিনালার সীমান্ত এলাকাগুলোতে ত্রিপুরা রাজ্যভিত্তিক এনএলএফটিসহ (ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অব ত্রিপুরা) একাধিক ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের বিচরণ রয়েছে। বাঘাইছড়ি দুর্গম মাচালংয়ের ভুয়োছড়ির গহীন অরণ্য এলাকায় এনএলএফটির একটি অস্থায়ী ঘাঁটি রয়েছে বলে স্থানীয়দের ধারণা।

নিরাপত্তা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি যৌথবাহিনীর অভিযানে সন্ত্রাসীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছে। গা ঢাকা দিয়ে পালিয়ে গেছে অজ্ঞাত আশ্রয়ে। তবে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রতিনিয়ত যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নিরাপত্তাবাহিনীর দায়িত্বশীল সূত্র।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের ধারণা, পাহাড়ে অশান্তি ছড়ানোর নেপথ্যে প্রতিবেশী দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা অনেকটা দায়ী। পাহাড়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টিতে এসব বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ইন্ধন থাকে। তারাই পার্বত্য অঞ্চলে অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে।

এ বিষয়ে সামরিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে প্রতিবেশী দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অবৈধ যাতায়াত যতটা না সার্বোভৌমত্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তার চেয়ে বেশি সংশ্লিষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদের সঙ্গে। কারণ পার্বত্য চট্টগ্রামের যে ভৌগলিক চরিত্র, সেখানে সীমান্তকে নিশ্ছদ্র করাটা কঠিন। ওখানে জঙ্গলের মধ্যে হয়তো বিচ্ছিন্নতাবাদীদের চলাচল আছে। কিন্তু তাদের স্থায়ী জায়গা পাওয়ার অবকাশ নেই। কারণ ওখানে সামরিকবাহিনী ও বিজিবির নিরাপত্তাবাহিনী টহল দিয়ে থাকে। এ কারণে এখনও কিন্তু কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী ঘাঁটি স্থাপন করতে পারেনি। তবে তাদের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।

এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার, ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখায়াত হোসেন বলেন, পার্বত্য জেলায় প্রতিবেশী দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অবাধ চলাচলে দেশের সার্বোভৌমত্ব হুমকির মুখে। এদের কারণে পাহাড় অশান্ত হয়ে উঠছে। এউপিডিএফ এদের মাধ্যমেই অস্ত্র নিয়ে আসছে। তারা মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে মেলার চেষ্টা করছে। আবারও পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।

সূত্র: আমাদের অর্থনীতি

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন