Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

পানিতে ভাসছে রামু: পাহাড় কেড়েছে ভাই-বোনের প্রাণ

রামু প্রতিনিধি:

মাত্র ১৮দিনের ব্যবধানে আরো ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে কক্সবাজারের রামু উপজেলা। পাহাড় ধ্বসে ভাই-বোনের মৃত্যু হয়েছে। উপজেলাজুড়ে অধিকাংশ এলাকা পানিতে একাকার হয়ে গেছে। সপ্তাহ খানেকের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে রামুর ১১ ইউনিয়নে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন, প্লাবিত হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা, বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে অসংখ্য গ্রাম তলিয়ে যাওয়ায় মানুষের দূর্ভোগ চরম আকার ধারন করেছে। শতাধিক গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছে।

পাহাড় ধ্বসে উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের হাইম্যারঘোনার পাহাড়তলী এলাকায় জিহান (৭) ও সাইমা আকতার (৫) নামে দু’ভাইবোন প্রাণ হারিয়েছে। মঙ্গলবার ভোররাত ৩টার দিকে রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে পাহাড় ধ্বসের এ ঘটনা ঘটে। নিহত শিশুরা ওই এলাকার জিয়াউর রহমানের ছেলে-মেয়ে। এ ঘটনায় নিহতদের পিতা জিয়াউর রহমান ও মা আনার কলি গুরুতর আহত হয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) সকালে রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাজাহান আলি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং নিহত শিশুদ্বয়ের পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ৪০ হাজার টাকা প্রদান করেন। এছাড়া ইউএনও এ ঘটনায় আহত বাবা-মাকে আরো ২০ হাজার টাকা সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন। এসময় দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মো. ইউনুচ ভূট্টো উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, পাহাড় ধ্বসে জিয়াউর রহমানের বসতঘরসহ একই ইউনিয়নের চান্দের পাড়া এলাকার মৃত নুরুল আলমের ছেলে মো. শাহ ও মৃত শফিকুর রহমানের ছেলে আহমদের বসতঘর মাটি চাপা পড়েছে।

 

এদিকে কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল মঙ্গলবার দুপুর থেকে কক্সবাজার সদর ও রামু উপজেলার বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। এসময় বন্যার্তদের ত্রান সামগ্রী ও নগদ অর্থ সহায়তা দেন।

জানা গেছে, তিনদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বাঁকখালি নদী, সোনাইছড়ি খালসহ কয়েকটি খালে পানি আবারো বিপদ সীমার উপরদিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। নতুন করে ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে বহু রাস্তাঘাট ও গ্রামরক্ষা বাঁধ। বন্যা প্লাবিত হয়ে ঈদগড়, গর্জনিয়া, কচ্ছপিয়া, রাজারকুল, দক্ষিন মিঠাছড়ি, খুনিয়াপালং, ও কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে উপজেলা সদরের সাথে। পাহাড় ধ্বসের আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ওইসব ইউনিয়নের বাসিন্দারা।

এদিকে উপজেলার বিভিন্নস্থানে অসংখ্যা শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে।  এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রামু আলহাজ্ব ফজল আম্বিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমানুল হক জানিয়েছেন, আগেরদিন রাত থেকে বিদ্যালয়টি প্লাবিত হয়ে পড়ে। গতকাল আরো পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পুরো বিদ্যালয় পানিতে একাকার হয়। ফলে বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তিনি আরো জানান, সাম্প্রতিক আরো এক দফা বন্যা হলে বিদ্যালয়ে পরীক্ষা গ্রহণ সম্ভব হয়নি।সরেজমিনে দেখা যায় বন্যায় মঙ্গলবার সকালে ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের হাইটুপি ভুত পাড়া এলাকার রামু ফকিরা বাজার-জাদিমুরা সড়ক বাঁকখালী নদীতে, ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কের ব্যাপক এলাকা ঈদগাঁও খালে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া রামু-মরিচ্যা সড়ক, রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়ক, কচ্ছপিয়া-গর্জনিয়া সড়ক, লামারপাড়া-তেচ্ছিপুল সড়ক, রশিদনগর-ধলিরছড়া সড়ক বাঁকখালী নদী ও সোনাইছড়ি খালের বন্যায় প্লাবিত হয়ে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এছাড়া কচ্ছপিয়া-গর্জনিয়ার বাকখাঁলী সেতুর সংযোগ সড়ক বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

রাজারকুল ইউনিয়নের সিকদারপাড়া শর্মা পাড়া অংশে বাঁকখালী নদীতে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। এতে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া ওই এলাকায় বাঁকখালী নদীর ভাঙ্গনে প্রায় ৮টি বসত বাড়ি তলিয়ে গেছে। বিগত বন্যায়ও এখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিলো। স্থানীয়দের দাবি প্রশাসন নির্লিপ্ত থাকায় এবার ভাঙ্গনের শিকার হতে হয়েছে। ইতিপূর্বে মাত্র কয়েকটি বস্তা দিয়ে দায়সারা কাজ দেখানো হয়েছে। যা উল্টো প্রতারনার মত। স্থানীয় বাসিন্দা কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলম চৌধুরীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করে জানান, এখন ভাঙ্গন তীব্র হয়েছে। স্থানীয়রা আরো বসত বাড়ি ভাঙ্গনের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। এ জন্য তিনি অনতিবিলম্বে এখানে জরুরী ভিত্তিতে ভাঙ্গন রোধ ও বেড়িবাঁধ সংস্কারের উদ্যোগ নেয়ার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এদিকে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে গর্জনিয়ার গর্জই খাল, খুনিয়াপালং এর রেজু খাল, রশিদনগর ইউনিয়নের কালিরছড়া খালের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে নদী তীরবর্তী ও বানভাসী মানুষরা।

উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের ফকিরা বাজার, হাইটুপি, পশ্চিম মেরংলোয়া, পূর্বমেরংলোয়া, শ্রীকুল, অফিসেরচর, মন্ডলপাড়া, সিকদারপাড়া, লামারপাড়া, খোন্দকারপাড়া, লম্বরীপাড়া, উত্তর ফতেখাঁরকুল, চালন্যাপাড়া, দোয়ানাপাড়া, পূর্বদ্বীপ শ্রীকুল, পূর্বদ্বীপ ফতেখাঁরকুল, তেমুহনী, হাজারীকুল, রাজারকুল ইউনিয়নের সিকদারপাড়া, হালদারকুল, পালপাড়া, মৌলবীপাড়া, নয়াপাড়া, পূর্ব রাজারকুল, দরগামুরা, দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের উমখালী, চরপাড়া, চেইন্দা, চাইল্যাতলী, পানেরছড়া, কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের মনিরঝিল, পূর্ব মনিরঝিল, লামার পাড়া, চরপাড়া, পূর্বপাড়া, জারুল্যাছড়ি, কাউয়ারখোপ ফরেষ্ট অফিস, বৈলতলী, জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের উত্তর মিঠাছড়ি, নন্দাখালী, নোনাছড়ি, আশকরখিল, পূর্বপাড়া, মালাপাড়া, রশিদনগর ইউনিয়নের উল্টাখালী, চাকমারকুল ইউনিয়নের মোহাম্মদপুরা, মিন্ত্রীপাড়া, শ্রীমুরা ও শাহমদ পাড়া, গর্জনীয়া ইউনিয়নের ক্যাজরবিল, বোমাংখিল, জুমছড়ি, কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের তিতারপাড়া, চাকমারকাটা, ফাক্রিকাটা, মুরারকাছা, শোকমনিয়া, দোছড়ি, জামছড়ি ও গর্জনয়িা বাজারসহ উপজেলার শতাধিক গ্রাম এখন পানিবন্দি। বাঁকখালী নদীর বিভিন্ন স্থানে নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।

রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. শাজাহান আলি জানিয়েছেন, রামুর সবকটি ইউনিয়নই বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। পাহাড় ধ্বসে দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নে দু’শিশু মারা গেছে। এদেরকে ৪০ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। আহত বাবা-মাকে আরো ২০ হাজার টাকা দেয়া হবে। প্রশাসন বন্যা কবলিত মানুষের পাশে রয়েছেন। বানভাসী মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে প্লাবিত অঞ্চলের মানুষ ও গবাদি পশুকে।

রামুর রাজারকুল ইউনিয়নে বন্যার্তদের জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দুই শতাধিক পরিবারকে নগদ অর্থ সহায়তা দেয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বন্যার্ত নারী-পুরুষদের মাঝে এসব অর্থ বিতরণ করেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও রাজারকুল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলম চৌধুরী। ২০০ পরিবারে ১০০ টাকা করে বিতরণ করা হয়। এসময় আওয়ামী লীগ, তাঁতীলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন