পানছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিদ্যুতের দাবিতে মানববন্ধন

Hospital Mabaon bandon Pic copy

স্টাফ রিপোর্টার:

খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার প্রায় ৬৪ হাজার মানুষের একমাত্র চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র পানছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। স্বাস্থ্য সেবা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে যেসব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে তা সঠিকভাবে পাচ্ছে না পানছড়ির সর্বস্তরের জনগণ। আর একারণেই কবিরাজী চিকিৎসার দিকেই বেশী ঝুঁকে পড়েছে সীমান্তঘেঁষা প্রত্যন্ত পানছড়িবাসী।

গত ১৩ মে থেকে একটানা বিদ্যুৎ বিহীন রয়েছে পানছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এ নিয়ে পানছড়ির সর্বস্তরের জনগণের মাঝে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ। পানির হাহাকার, মোমবাতির নিভু নিভু আলো আর দুর্গদ্ধ যেন নিত্য রুটিন হয়ে দেখা দিয়েছে এ কমপ্লেক্সে।

দেখা যায়, পানছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, মাত্র এক জন রোগী ভর্তি আছে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা তক্ষিরায় পাড়ার রঙ্গদেবী ত্রিপুরা (১২) জানায়, প্রচ- গরম তাই অসুস্থ্য শরীর নিয়ে একটু শীতল বাতাসের আশায় বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি।

কথা হয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ল্যাবরেটরী ট্যাকনেশিয়ান সলিট চাকমার সাথে তিনি জানান, বিদ্যুৎ নেই দীর্ঘদিন ধরে তাই বিদ্যুৎ ছাড়া যেগুলো সম্ভব সেগুলো পরীক্ষা করে কোন রকম রিপোর্ট দিচ্ছি। তাছাড়া বিভিন্ন মূল্যবান টিকা সংরক্ষন করাও সম্ভব হচ্ছে না।

টিকার গুণগতমান রক্ষা করতে +২ ও +৮ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ফ্রিজিং করা দরকার। কিন্তু ২ থেকে ১ ঘন্টা নামেমাত্র জেনারেটর চালিয়ে তা সম্ভব নয়। বর্তমানে এসব টিকার গুণগতমান নষ্ট হবার সম্ভবনাই বেশী বলে জানা যায়। তাছাড়া ডেলিভারী রোগীদেরও পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে খাগড়াছড়ি। মে মাসের শুরু দিকেও স্বাস্থ্য কমপ্লক্সে ১০ থেকে ১২ দিন বিদ্যুৎ ছিল না।

পার্বত্য নিউজে এ খবরটি প্রকাশের পর উপজেলা চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমা বিষয়টি অবগত করে “হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে” রাঙ্গামাটিকে। রাঙ্গামাটি হেলথ ডিপার্টমেন্ট খাগড়াছড়ির এক আনাড়ী টেকনেশিয়ান ইউসুফের মাধ্যমে ত্রিশ হাজার টাকায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ট্রান্সফরমারটি মেরামত করায়। কিন্তু “হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে”র কোন লোক না থাকার ফলে ট্রান্সফরমারটি কোন রকম চালু করে দেয় ফলে ৫দিন পর আবারও বিকল হয়ে অদ্যবধি পর্যন্ত বিকল অবস্থাতেই আছে।

পানছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. বিদুর্ষী চাকমা জানায়, রাঙ্গামাটি হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে’র নির্বাহী পরিচালক ও সিভিল সার্জনকে এ ব্যাপারে কয়েকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন সাড়া পাচ্ছি না।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিদ্যুতের এ বেহাল দশা থেকে রেহাই পেতে মানববন্ধনও করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে চার’টায় ১নং লোগাং ইউপির নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান প্রত্যুত্তর চাকমার আয়োজনে মানববন্ধনে সর্বস্তরের মানুষ অংশ গ্রহণ করেন।

পানছড়ি সদর ইউপির ৬নং ওয়ার্ড সদস্য আসিফ করিম জানায়, সপ্তাহে শনি ও সোমবার পানছড়িতে বিদ্যুতের ঘোষিত ছুটি। কোন কোন সপ্তাহে ৫দিনও বিদ্যুতের দেখা মিলে না। আরো জানায়, পানছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আমি নিজে গিয়ে দেখে এসেছি বেহাল দশার চিত্র। এসব বেহাল দশা থেকে রেহাই, পূনরায় অপারেশন থিয়েটার চালু, কোটি টাকা দামের বন্ধ এক্সরে মেশিন চালু ও ২৪ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতসহ বিভিন্ন সমস্যাদির সমাধান নিরসনে সরাসরি স্বাস্থ্য মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন