পানছড়ি সেজেছে বৈসাবি সাজে: চলছে খুশীর জোয়ার

8-4-14 PIC

পানছড়ি প্রিতিনিধি, খাগড়াছড়ি:

পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী বৈসাবি ঘিরে পানছড়ির সর্বত্র লেগেছে উৎসবের আমেজ।  প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায় বাজছে উৎসবের সূর। ধনী-গরিব সকলের ঘরে ঘরে চলছে উৎসবের প্রস্তুতি। আর যেন বসে থাকার সময় নেই, খুব কাছাকাছি তাই আবাল-বৃদ্ধ-বনিতাদের মাঝে বিরাজ করছে খুশীর জোয়ার। উৎসবের আনন্দে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান আর মুসলিম যেন জাতিগত সব বিভেদ ভুলে মিলবে এক কাতারে- এর চেয়ে বড় আনন্দ আর কী হতে পারে? তাই পাহাড়ের এই উৎসব ভুলিয়ে দেয় জাতিগত বিভেদ। সবাই ভুলে যায় কে পাহাড়ী বা কে বাঙ্গালী। সবাই মেতে উঠে উৎসবের অনাবিল এক আনন্দ আয়োজনের জোয়ারে। তৈরী হয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত। সব মিলে জাতিগত ভেদাভেদের শেকড়কে উপড়ে সকলের আন্তরিক উপস্থিতিতে আরো প্রানবন্ত হয়ে উঠে বৈ-সা-বি’ উৎসব।

ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বৈসু, মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই ও চাকমা সম্পদায়ের বিজু নিয়েই বৈ-সা-বি। আগামী ১২ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বৈ-সা-বি উৎসব। ১২এপ্রিল ফুল বিজুর মধ্যে সূচনা পর্ব শুরু হবে বৈ-সা-বি’র। ১৩ এপ্রিল নববর্ষের আগের দিন হারি বৈসু পালন করে বর্ষবরণ করবে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী আর নববর্ষের প্রথম দিন থেকে মারমা সম্প্রদায় সূচনা করে সাংগ্রাইয়ের।

এ নিয়ে উপজেলা সদর বাজারে কেনা কাটারও ধুম লগেছে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের মনে লেগেছে খুশীর আমেজ সবার আবদার বাহারী ও রঙিন পোশাক  চাই। তাই উপজেলা সদর বাজারের দোকানগুলোতে লেগেছে কেনা-কাটার ধুম।  বাজারের নোয়াখালী মার্কেটের কসমেটিকস ও জুয়েলারী দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভীড়। তাই দোকানীরাও যেন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।

বৈ-সা-বি’তে আরো জমজমাট চলছে পানছড়ি সবজি ও শুটকি বাজার। হরেক রকম তরকারী দিয়ে পাঁচন রাধতে কাঁচা সবজির জুড়ি নেই। যে যত বেশী সবজি দিতে পারবে ততই মজা তাই কাঁচা সবজি, সাথে কাঁচা কাঁঠাল ও শুটকি কেনা প্রতিযোগিতার দৃশ্যগুলো চোখে পড়ার মত। পানছড়ি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ঝর্ণা চাকমার সাথে সবজি বাজারে আলাপকালে তিনি জানান কমপক্ষে ত্রিশটি কাঁচা সবজি মিশিয়ে পাঁচন রান্না করবেন।

এনিয়ে বিভিন্ন পাড়ায় পাড়ায় আয়োজন চলছে বিভিন্ন খেলাধুলার। ঐতিহ্যবাহী খেলা-ধুলা নিয়ে মেতে উঠবে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষরা। তাই আনন্দের সীমা নেই চলছে খেলা-ধুলা প্রাথমিক প্রস্তুতি। সরেজমিনে পানছড়ি চৌধুরী পাড়ায় দেখা যায় ক্যাপ্রুচাই মারমা, ল্যাপ্রুচাই মারমা ও অংজ মারমারা  নববর্ষ  মারমা ভাষায় (নঅজ) প্রস্তুতি পর্ব সেরে নিচ্ছে। চেংগী নদীতে ফুল ভাসিয়ে (খিয়াংমা প্রেং রইতে) মারমা ভাষায় বর্ষ বরণ করার ওয়ার্মআপ করে নিচ্ছে উখেচিং চৌধুরী, মাসাতিং চৌধুরী, ম্রাসানু মারমা, পাইনুপ্রু মারমা, পেংক্রাচিং মারমা ও চোয়াপ্রু মারমারা। সেই সংগে থাকছে মারমাদের ঐতিহ্যবাহী “দ” খেলা “পানি” খেলা, “খুয়াং” খেলা।

এই বর্ষবরণে চাকমা, ত্রিপুরা ও মারমাদের পাশাপাশি বাঙ্গালীরাও করে থাকে ব্যাপক আয়োজন। বিশেষ করে পাঁচন রান্নায় বাঙ্গালী বধুরাও যথেষ্ট পারদর্শী। সব মিলেয়ে এবারের বৈ-সা-বি’তে পানছড়ি যেন সাজছে এক বর্ণিল সাজে। যা শুরুর আগেই পাড়ায়-পাড়ায় বইছে আনন্দের জোয়ার। এ ব্যাপারে সকলের আন্তরিকতা সহযোগিতা কামনা করছেন পানছড়ির অভিজ্ঞ মহল।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠী, চাকমা, পানছড়ি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন