পানছড়ির ১২টি অ-উপজাতীয় গুচ্ছগ্রামের রেশন দিচ্ছে প্রশাসন

RASON PIC copy

নিজস্ব প্রতিবেদক:

খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার ১২টি অ-উপজাতীয় গুচ্ছগ্রামে চলছে নীরব দুর্ভিক্ষ। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ছয় মাস যাবৎ রেশন না দেয়ার কারণে মানবেতর দিন যাবন করছে চার হাজার একশত উনত্রিশটি পরিবার। রেশন বিতরণের জন্য উপজেলার ১২টি অ-উপজাতীয় গুচ্ছগ্রামে ১২জন প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয় এবং স্থানীয় খাদ্য গুদাম থেকে উত্তোলন করে তাদের নামে বরাদ্ধকৃত রেশন স্ব-স্ব এলাকায় বিতরণ করে থাকে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গন্যমান্য ব্যক্তিরা গুচ্ছগ্রামে প্রকল্প চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ থাকার কথা থাকলেও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাই এসব গুচ্ছগ্রামে প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগ পেয়ে থাকে। তাই সোনার হরিণ হিসাবে খ্যাত প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতা (রিট) থাকার কারণে ৪১২৯ টি পরিবার দীর্ঘদিন রেশন বঞ্চিত বলে প্রশাসন সূত্রে জানা যায়।

জানা যায়, প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতায় এবারে রেশন বিতরণ হচ্ছে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্মারক নং-০৫.৪২.৪৬০০.০১০.০০.০১৯.১৬.১০তারিখ ৯/১/২০১৭ ও  ০৫.৪২.৪৬০০.০১০.০০.০১৯.১৬.১১ তারিখ ৯/১/২০১৭ মূলে মাসিক ৩৫.৯৫কেজি চাউল ও ৪৯.১০কেজি গম যা ছয় মাসে ২১৫.৭ মে. টন চাউল ও ২৯৪.৬ মে. চাউল প্রতি কার্ডধারীর অনুকুলে বরাদ্ধ প্রদান করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা যায়, ওই স্মারক দুটির নির্দেশ মোতাবেক গম ও চাউল বিতরণ প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রতি কার্ডধারীর অনুকুলে চিঠির মাধ্যমে ডিও কার্ডের জন্য উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে পাঠানো হচ্ছে। উপজেলা খাদ্য অফিস থেকে ডিও লেটার নিয়ে খাদ্য গুদাম থেকে রেশন উত্তোলন করবে কার্ডধারীরা।

শুক্রবার সকালে পানছড়ি খাদ্য গুদামে কথা হয় জিয়ানগর গুচ্ছগ্রামের চাউল ও গম উত্তোলনকারী নুরজাহান, আফিয়া, মাজেদা ও শুক্কুরজানের সাথে।

তারা জানায়, দুদিন কষ্ট হলেও চাউল ও গম ষোল আনা বুঝে পেয়েছে। তবে কার্ডধারীদের দাবী তারা গম খেতে অভ্যস্থ নয়। তাই বর্তমান দেশের উন্নয়নের রূপকার সরকারের কাছে দাবী এ অ-উপজাতীয় গুচ্ছগ্রামে গমের পরিবর্তে চাউল সরবরাহ করলে গুচ্ছগ্রামবাসী বেশী উপকৃত হবে।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক প্রমিত কুমার চাকমা জানায়, এ প্রক্রিয়ার চাউল ও গম বিতরণে অনেক লম্বা সময় লাগবে। ৪১২৯টি কার্ডের বিপরীতে ১৬৫১৬টি ডিও লেটার ইস্যূ করতে হবে। তাছাড়া ডিও বই পরিমানমত সরবরাহ নাই। তবে ডিও বই আসার পূর্বে প্রতিদিন ৫৪জন কার্ডধারী গুদাম থেকে রেশন তুলতে পারবে বলেও জানান।

পানছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. বাহার মিয়া জানায়, প্রকল্প চেয়ারম্যান জটিলতায় বর্তমানে উপজেলার গুচ্ছগ্রামগুলোতে অনেক অভাব অনটন দেখা দিয়েছে। গুচ্ছগ্রামবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একটি ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। এ উদ্দ্যোগের তিনি ভূয়শী প্রশংসা করেন।

অপরদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবু তাহের জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে স্ব-স্ব গুচ্ছগ্রামে রেশন বিতরণের ব্যবস্থা করলে কার্ডধারীরা ভোগান্তি থেকে রেহাই পেত। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে সার্বিক সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক জানায়, রেশন বিলির ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন প্রকার অবহেলা করা হবেনা। তবে রেশন বিলির সময় খাদ্য গুদামের আশ-পাশ এলাকায় কোন ধরণের বেচা-কেনাও নিষেধ। এ ধরণের কোন অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিভিন্ন গুচ্ছগ্রামের কার্ডধারীদের দাবী, তারা অনেকেই দিনমজুর। উপজেলায় আসা ও ঘুরাঘুরিতে তাদের  অনেক কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। তাছাড়া লোগাং, উমরপুর, রসুলপুর, মুসলিমনগর, আলী নগরের কার্ডধারীরা জানায়, খাদ্য গুদাম থেকে রেশন নিতে অনেক ভোগান্তি। তাছাড়া পরিবহন খরচও অনেক। এ ব্যাপারে প্রশাসন স্ব-স্ব এলাকায় রেশন বিলির ব্যবস্থা করলে কার্ডধারীরা অনেকটা উপকৃত হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন