Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

পানছড়ির সংগ্রামী নারী জরিনা

শাহজাহান কবির সাজু, পানছড়ি:

জঙ্গল থেকে কাঠ সংগ্রহ করে বিক্রি, মাটি কাটা ও পরের বাড়িতে কাজের আয়েই চুলোয় আগুন জ্বলে জরিনার। স্বামী মো. আবু তাহের খর্বকায় প্রতিবন্ধী। ছেলে মো. আনোয়ার, মেয়ে তাসলিমা ও মুনি আক্তার তিনজনই মেধাবী। তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত চিন্তা করে দিশেহারা জরিনা “গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষনা-বেক্ষন” (আরইআরএমপি)’র প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ নেয়।

প্রতিদিন ১৫০ টাকার বেতনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘাম ঝরানো মাটি কাটাতেই ব্যস্ত জরিনা। কাজে হাজির না থাকলে বেতন কাটা। তাই ঝড়-বৃষ্টি ও অসুখ-বিসুখ উপেক্ষা করেও মাথায় গোমটা, কাঁধে কোদাল ও গামছায় মোড়ানো লংকা আর পেয়াজের পান্তা হাতেই সাত সকালেই রেবিয়ে পড়ে মাটি কাটার কাজে। বেলা দুইটায় কাজ শেষে ঘরে ফিরেই আবার চুলোর সাথে যুদ্ধ করে পরিবার সামাল দেয়া জরিনার নিত্য রুটিন।

এভাবেই ছেলে-মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যত চিন্তা করে দিনের পর দিন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে জরিনা।
জরিনার সফলতা, উপজেলার ৩নং পানছড়ি ইউপির মোহাম্মদপুর গ্রামের খর্বকায় আবু তাহের ও জরিনা দম্পত্তির ছেলে আনোয়ার ৫ম ও অষ্টম শ্রেণীতে টেলেন্টপুল বৃত্তি, এসএসসিতে জিপিএ ফাইভ ও এইচএসসি পরীক্ষায় খাগড়াছড়ি সরকারী কলেজ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করে।

পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ৮০তম হয়ে মেধায় এক অনন্য মেধার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। বর্তমানে বিবিএ ফিন্যান্স ৩য় বর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে তাই মায়ের চোখেও ঘুম নেই ছেলের জন্য প্রতি মাসে টাকা পাঠাতে হয়। আনোয়ার বসে নেই পড়া-লেখার ফাঁকে ফাঁকে টিউশনি করে মাকে সহযোগিতা করে।

তাছাড়া মেয়ে মনি আক্তার পানছড়ি ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি পরিক্ষা দিবে এবং তাসলিমা দিয়েছে বাজার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি। তারা দু’বোনও মেধাবী।

আগামী এপ্রিলে “গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষনা-বেক্ষন” (আরইআরএমপি)’র প্রকল্প শেষ হবে। ছেলের দিকে তাকিয়ে নতুন তালিকায় আবারও অর্ন্তভুক্ত করার জন্য কমিটির নিকট তার আবেদন।

উপজেলার দমদম এলাকায় মরহুম আবজল মেম্বারের বাড়ির পাশে মাটি কাটায় ব্যস্ত জরিনার সাথে আলাপকালে জানায়, ছেলে আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এটাই আমার বড় আনন্দ।

ছেলের সাফল্যর কথা চিন্তা করে সে কাজে আনন্দ পায় বলে জানায়। ছেলে আনোয়ারের লেখা-পড়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত যত শক্ত কাজই হোক তা আমাকে সংগ্রাম করতেই হবে।

তবে সহকর্মীরাও সাহস যোগাচ্ছেন জরিনাকে। সহকর্মী কয়েকজন জানান, জরিনা আপার ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এটা আমাদেরও গর্ব। জরিনা মাঝে মধ্যে কাজে না আসলেও তারা নিজেদের উদ্যেগে কাজ করে ছেলের পড়া-লেখা সহযোগিতার যোগান দিবে বলেও এ প্রতিবেদককে জানান।
মুঠোফোনে আলাপকালে আনোয়ার জানায়, মা-বাবার কষ্ট লাগবে আমি আমার প্রচেষ্টা সাধ্যমত চালিয়ে যাচ্ছি। কয়েকটা টিউশনির টাকা দিয়ে ছোটবোনদের সহযোগিতা দেয়ার চেষ্টা করছি। ভালো ফলাফল করে দেশের প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তা হওয়াই তার মূল স্বপ্ন।

এলাকার ইউপি সদস্য মতিউর রহমান জানায়, মেধাবী আনোয়ারের মা জরিনার সার্বিক সহযোগিতায় আমরা সব সময় আন্তরিক। ইউপি চেয়ারম্যান মো. নাজির হোসেন জানায়, পার্বত্য নিউজে প্রকাশিত সংবাদে আনোয়ারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যাপারে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও ৩নং পানছড়ি ইউপি সার্বিক সহযোগিতা দিয়েছে।

এ ধরণের প্রতিভার জন্য সকল সম্প্রদায়ের মেধাবীর জন্য ৩নং পানছড়ি ইউপির দরজা সব সময় খোলা রয়েছে।

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন