পানছড়ির আকাশে ডানা মেলে উড়ছে অতিথি বক
নিজস্ব প্রতিনিধি, পানছড়ি:
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও খাগড়াছড়ির পানছড়িতে আগমন ঘটেছে নানান প্রজাতির অসংখ্য অতিথি পাখির। শিশির ভেজা ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই এসব পাখিদের কলকাকলিতে ঘুম ভাঙ্গে ৩ বিজিবি, হাসান নগর, পাইলট ফার্ম, দমদমসহ আশ-পাশ এলাকার মানুষের। সাত সকালেই খাবারের সন্ধানে নীল আকাশে ডানা মেলে উড়তে শুরু করে সাদা বকের দল, কালো রঙের পানকৌড়ি ও নানা জাতের শালিকসহ নাম না জানা অনেক অতিথি পাখি।
এসব পাখিদের কিচির-মিচির ডাক ও ডানা মেলে উড়ে বেড়ানোর দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয় স্থানীয় ও আগত অতিথিরা। এবারেও অতিথি বকের অভয়াশ্রম হিসাবে পরিনত হয়েছে পানছড়িস্থ ৩ বিজিবি লোগাং জোন সদর দপ্তর। শীতের শুরুতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অতিথি হয়ে এখানে আসে কয়েক হাজার বিভিন্ন প্রজাতির সাদা বক। কোন হরতাল-অবরোধ করতে পারেনা এদের পথরোধ। শীতের আগমনী বার্তা লগ্নেই আকাশ পথে দু’ডানা মেলে আপন ভুবনে ভাসতে ভাসতে আসা সাদা বক ৩ বিজিবির গাছ-গাছালীকে বানিয়ে তোলে নিজ আবাসভুমি।
সরেজমিনে ৩ বিজিবি’তে গিয়ে দেখা যায়, হাজারো অতিথি বকের সমাগম সাথে রয়েছে কিছু কিছু কালো রঙের পানকৌড়ি ও বিভিন্ন প্রজাতির শালিক। এসব অতিথিদের কিচির মিচির ও শো শো শব্দ যেন মন মাতিয়ে তোলে। ৬/৭ টি বড় বড় গাছের প্রতিটি পাতায় পাতায় সাদা বকের আসন অলঙ্কৃত করার দৃশ্য মুহুর্তেই মন কেড়ে নেয়। বিকাল ৪টার পর থেকেই ঝাঁকে ঝাঁকে বকের পাল উড়ে আসার দৃশ্য যেন আরো অপরূপ। এই অতিথিদের উড়ে আসার দৃষ্টিনন্দন ও মনমাতানো দৃশ্য একবার দেখলে মনে দাগ কাটবে যে কারোরই।
৩ বিজিবি সূত্রে জানা যায়, সাত সকালেই বকের পাল এলাকার বিভিন্ন খালে-বিলে খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে। কিন্তু শালিকদের কলকাকলীতে ৩ বিজিবি থাকে মুখরিত। শালিকরা অবাদেই নির্ভয়ে বিচরণ করে বেড়ায় সদর দপ্তরের এপার থেকে ওপার। আর বিকাল ৩টার পর থেকেই আস্তে আস্তে শুরু হয় সাদা বকের বাড়ি ফেরার পালা। সন্ধ্যা যতই ঘনিয়ে আসে সবুজ রঙের গাছগুলো ততই সাদা বর্ণ ধারণ করতে থাকে। এক পর্যায়ে গাছগুলোকে দুর থেকে দেখতে সাদা সাদা ফুলের থোকার মত দেখায়। এই অপরূপ সুন্দরের দৃশ্য বিজিবির প্রতিটি সদস্য প্রতিদিন মন-প্রাণে উপভোগ করে।
পানছড়ির অনেক মুরুব্বীদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, আগে পানছড়ির বিভিন্ন এলাকার কিছু কিছু বাঁশঝাড়ে অতিথি বকসহ নানা প্রজাতির পাখির আগমন ঘটত। কিন্তু চোরাই শিকারীদের অত্যাচারে অতিথি পাখির আগমন নেই বললেই চলে। তবে বর্তমানে এরা শতভাগ নিরাপদ জায়গাতেই অভয়াশ্রম গড়ে তুলেছে। এখানে প্রতি বছর সাদা বকের সাথে অন্য প্রজাতির পাখিও অতিথি হয়ে এসে পানছড়ির সৌন্দর্যকে আরো দ্বিগুন করে তুলবে বলে তারা মনে করছেন।