পানছড়ির অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক দেবল মনি চাকমা এখন সফল মৌ চাষী

MODU PIC copy

শাহজাহান কবির সাজু:
উপজেলার সূতকর্ম্মা পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রায় বছর দশেক আগে অবসর নেয় দেবল মনি চাকমা। তার বাবার নাম সূতকর্ম্মা চাকমা এবং বাবার নামেই এই গ্রাম। দেবল মনির বয়ন এখন ৭৩। চাকৃরী থেকে অবসর গ্রহণের পর খাগড়াছড়িতে মৌ চাষের উপর প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষেই শুরু হয় মৌ চাষ নিয়ে নানা গবেষণা। গবেষণার পর পরই নিজ বাড়ির আশ-পাশ ও সরিষা ক্ষেতের পাশে শুরু করে মৌ-চাষ ও মধু আহরণ। বর্তমানে দেবলমনি চাকমা ছাড়াও উপজেলার পূজগাংসহ বিভিন্ন এলাকায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে মৌ চাষ। আর এতে লাভবানও হচ্ছে চাষীরা।

সরেজমিনে কথা হয় দেবলমনি চাকমার সাথে, তিনি জানান, বিগত ছয় বছর ধরে মৌ চাষ করে মধু আহরণ করছেন। বর্তমানে তার ১৭টি বাক্স রয়েছে। প্রতিটি বাক্সে ১টি করে রাণীকে বিশেষ কায়দায় আটকে রাখা হয়েছে। এই রাণীর সাথে থাকা সৈনিক মৌমাচিরাই মৌচাকে মধু জমা করে। বর্তমান সময়ে প্রতি সপ্তাহে তিনি ২০ থেকে ২২ বাইশ কেজি: মধু আহরণ করে বাজারজাত করছেন যার বাজারমূল্য প্রায় ১৫ হাজার টাকা।

তাছাড়া বছরের ৩/৪মাস মধু আহরণ বেশী হলেও বাকী সময়ে তেমন বেশী হয়না। আর বর্ষার সময় জমানো মধু খেয়েই মৌমাছিরা জীবন ধারণ করে বলে জানায়। বছরে তিনি ৮০-৯০ হাজার মধু বিক্রি করেন বলেও জানান।

এদিকে উপজেলার পূজগাং এলাকার বিন্দু কুমার চাকমাও মধু চাষে বেশ সফল বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে গেলে বিন্দু চাকমা মধু আহরণের বাক্স খুলে কোন জায়গায় মধু জমা হয়, কোন জায়গায় রাণীকে বন্দ্বী করে রাখা হয়েছে এসব দেখান। তাছাড়া সাবধানতার সাথে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে জানান, এই বাক্সে মধু বেশী জমা হয়েছে তাই সৈনিক মৌমাছিরা এখন হিংস্র।

আরো জানা যায়, এই মধু চাষে শুধু মৌ চাষীরাই সুফল পাচ্ছে না, সুফল পাচ্ছে এলাকার কৃষাণ-কৃষাণীরাও। সূতকর্ম্মাপাড়া এলাকার বেগুন চাষী শান্তি রঞ্জন চাকমা, মনমোহন চাকমা ও পূজগাং এলাকার লাউচাষী বিন্দু কুমার জানায় মৌ চাষের ফলে এলাকার যেসব জমিতে আশানুরূপ ফলন হতো না এখন ফলন খুব ভালো হচ্ছে।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নির্বাণ চাকমা ও মানিক মিয়ার সাথে আলাপকালে জানান, কৃষির পাশাপাশি মৌ চাষ খুব সহজ। কৃষকেরা ইচ্ছে করলে খুব সহজেই কৃষির পাশাপাশি মৌ চাষ করে অতিরিক্ত আয় করতে পারে।

তাছাড়া কৃষকদের মৌচাষের সুবিধার্থে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে সরিষার বীজও সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

এ ব্যাপারে পানছড়ি উপজেলা কৃষি অফিসার মো: আলাউদ্দিন শেখ জানান, মৌ চাষের ফলে প্রাকৃতিক পরাগায়ণ ঘটে। যার ফলে ফসলের ২০ ভাগ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

তিনি আরো জানান, সবচেয়ে বেশী খাদ্যমান রয়েছে মধুতে। এলাকায় মধুচাষের ব্যাপকতা বাড়লে মানুষের অপুষ্টি দুরীকরণে যেমনি সহায়ক হবে পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হবে কৃষক।

এ ব্যাপারে আগ্রহী কৃষকদের কৃষি উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করলেই সার্বিক সহযোগিতা পাবে বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন