পানছড়িতে বেড়েছে শিশুশ্রম
স্টাফ রিপোর্টার:
খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায় অধিক হারে বেড়ে চলেছে শিশুশ্রম। বিশেষ করে ১০ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুরা স্কুল ড্রেস পরে কাঁধে বইয়ের ব্যাগ ঝুলিয়ে বিদ্যালয় মুখী হওয়ার পরিবর্তে তারা এখন শ্রম দিয়েই পার করছে ব্যস্ত সময়। অথচ এনজিও সংস্থা ব্র্যাক, আনন্দ, ইউনিসেফের পাড়া কেন্দ্রগুলো এলাকার ঝরে পড়া শিশুদের নিয়ে কাজ করার কথা থাকলেও তাদের ব্যর্থতার গ্লানি দেখা যায় পানছড়ির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে।
পানছড়ি বাজারস্থ মুক্তিযোদ্ধা স্কোয়ারের সামনে অস্থায়ী জীপ গাড়ী, লেগুনা ও মাইক্রো স্টেশনে প্রতিদিন সকাল হলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে শিশুশ্রমের মূল চিত্র। সরেজমিনে সকাল ৬টার দিকে দেখা যায়, ১০ থেকে ১২ বছর বয়সী একঝাঁক তরুণ রাস্তার পাশে বসে আলাপচারিতায় মগ্ন। তাদের সাথে কথা জানা যায়, মামুনের বয়স (১০) সে কলাবাগানের আবুল কাসেমের ছেলে, পারভেজ (১১) কলোনীপাড়ার জীবন মিয়ার ছেলে, শাহিন (১১) সাঁওতাল পাড়ার মোস্তফার ছেলে, রুবেল (১২) ও নাইম (১০) কলাবাগানের আবুল কাসেমের ছেলেসহ কয়েকজন। তারা জানালেন কেউ পানছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কে বিভিন্ন পরিবহনের হেলপার আবার কেউবা সুপারভাইজার। এরা সবাই গাড়ীতে ঝুলে ঝুলে ডানে যাও, বামে যাও, এই ব্রেক, সামনে গাড়ি ইত্যাদি শব্দ দিয়ে চালকদের সহায়তা দেয়। কিন্তু এই ঝুকিপূর্ণ শ্রমে যে কোন মুহুর্তে চাকায় পিষ্ট হয়ে জীবন প্রদীপ নিভে যেতে পারে কোমলমতি এই শিশুদের। এ ব্যাপারে নেয়া হচ্ছে না কোন সচেতনতামূলক পদক্ষেপ।
প্রতিদিন সকাল সাড়ে ছয়টার দিকেই তারা নেমে পড়ে প্রধান সড়কে। সাথে নানান সুরালো ধ্বনি আইঅ্য আইঅ্য, হারাছড়ি হারাছড়ি, পাস টিব যাইলে দৌরি আইঅ্য ইত্যাদি। তারা স্কুলের পরিবর্তে গাড়ীর হেলপার কেন জানতে চাইলে দু’একজন ছাড়া সবাই পালিয়ে যায়। দু’একজন জানালেন অভাবের সংসার তাই এই পথে আসা। তাছাড়া লেখাপড়ার ব্যাপারে কেউ সাহস যোগায় না তাই। এ ব্যাপারে পানছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কের বিভিন্ন পরিবহন চালকদের সাথে আলাপকালে জানায়, তাদের কেউ আসতে বলে না কিন্তু প্রতিদিন সাত সকালে তারা হাজির হয়ে যায়। তাদের নিষেধ করলেও শুনেনা। তাই বাধ্য হয়ে নিতে হয় গাড়ীতে। তাছাড়া তারা যতক্ষণ গাড়ীতে থাকে ততক্ষণ টেনশনে গাড়ী চালাতে হয়। তবে তারা খুব চালু।
একজন চালক মুচকি হেসে জানালেন, সাত সকালে ১০ বছর বয়সী তরুণ এসে বলে ওস্তাদ চাবিটা দেন, গাড়ির ইঞ্জিনটা গরম কইরা লই। পানছড়িতে গাড়ির হেলপারি ছাড়াও টমটম, আইসক্রিম বিক্রেতা, ঠেলা গাড়ী চালক, ভ্যান চালকসহ অনেক কাজেই শিশু শ্রমিক দিন দিন বেঁড়েই চলছে।
সঠিক সময়ে এদের পরিবার বা অবিভাবকদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে উপস্থিত অনেকেই মনে করছেন। ৩নং সদর পানছড়ি ইউপির নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান নাজির হোসেনের সাথে শিশুশ্রমের ব্যাপারে আলাপকালে জানান, শিশুশ্রম একটি সামাজিক ব্যাধি। আমি এখনও শপথ গ্রহণ করি নাই। শপথ গ্রহণ শেষে ক্ষমতায় বসলে শিশুশ্রম নিয়ে কাজ করবো। এনিয়ে বিভিন্ন গ্রাম ভিত্তিক সচেতনতামূলক সেমিনার করে জ্ঞান দিলেই তা রোধ করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।