পর্যটন শহর হিসেবে গড়ে ওঠেনি টেকনাফ-সেন্টমার্টিন

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ও সম্ভাবনায় ভরপুর সাগর-নদী-পাহাড় ঘেরা সীমান্ত শহর টেকনাফ এবং দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন স্বাধীনতার পর ৪৫ বছরেও আধুনিক ও পরিকল্পিত পর্যটন শহর হিসেবে গড়ে ওঠেনি।

পরিকল্পিত উপায়ে আধুনিক পর্যটন শহর হিসেবে গড়ে তোলা হলে তা শুধু দেশে নয়, গোটা দুনিয়া জুড়ে খ্যাতি পেতে পারতো। কারণ সাগর-নদী-পাহাড়-সমুদ্র সৈকত-প্রবালদ্বীপ ও অপার সম্ভাবনা আর প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর সব কিছুর সমন্বয়ে এমন পর্যটন অঞ্চল বিশ্বে কমই আছে।

তবে তখনকার দেরিতে হলেও সরকার পরিকল্পিত পর্যটন নগরী হিসাবে গড়ে তুলতে সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় ৮০ হাজার একর জমি নিয়ে মাস্টারপ্ল্যানের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়।

বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের শহর কক্সবাজার ও দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটন শিল্পের প্রসার শুরু হয় মূলত কয়েক যুগ আগে থেকেই। বিপুল সংখ্যক পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত কক্সবাজার, টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে দেখা দেয় আবাসন, বিনোদনসহ নানা সংকট। আর এই সুযোগে পর্যটকদের সুবিধা দিতে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত গড়ে উঠেছে শত শত বহুতল ভবন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মহেশখালী পৌরসভা ও আদিনাথ মন্দির এলাকা থেকে শুরু করে কক্সবাজার পৌরসভা, কক্সবাজার সদর উপজেলার একাংশ, সমুদ্রসৈকত থেকে টেকনাফ সৈকত পর্যন্ত এলাকা, রামু ও উখিয়া উপজেলার একাংশ, টেকনাফ পৌরসভা, সাবরাং ইউনিয়নের একাংশ এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপসহ প্রায় ৮০ হাজার একর জমি নিয়ে মাস্টারপ্ল্যানটি প্রণয়ন করা হয়।

এর মধ্যে কক্সবাজার পৌরসভা ও সদর উপজেলার একাংশে হোটেল-মোটেল জোন, খেলার মাঠ, সরকারি অফিস-আদালত, আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা, পিকনিক স্পট, এডুকেশন জোন, বিশ্ববিদ্যালয়, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যিক জোন, সিটি পার্ক, ন্যাচারাল পার্ক, প্রাকৃতিক বনসহ ইকোট্যুরিজম, রেল স্টেশন, চাইন্দায় শিল্প এলাকা, ময়লা-আবর্জনার ডাম্পিং জোন, খুরুশকুলে প্রাকৃতিক বন, পার্ক, মৎস্য জোন, ন্যাশনাল পার্ক, মহেশখালীতে পার্ক, ইকোট্যুরিজম, আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকা, টেকনাফে এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন, সেন্টমার্টিনে ইকোট্যুরিজমসহ নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

সেখানে সাবরাং এক্সক্লোসিভ ট্যুরিষ্ট জোনের কাজ চলমান। মেরিন ড্রাইন সড়কও সম্পন্ন হয়েছে।

দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনের সাগরের তলদেশে রয়েছে মনোমুগ্ধকর বিচিত্র প্রাণী ও হরেক রকম জীব। রয়েছে নানান আকারের পাথরের স্তুপ, দুর্লভ প্রবাল, পাথরের ফুল। সাগরের জলরাশি ও সৌন্দর্যে ভরা বিচিত্র জীব-প্রাণী যেন হাতছানি দিয়ে ডাকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের।

সাগরের তলদেশে এসব বিচিত্র জীব অবাক হওয়ার মত, দেখলে মনে হবে সাগরের তলদেশে রয়েছে সৃষ্টির রহস্যময় এক জগত।

সেন্টমার্টিনের ছেড়াদ্বিয়া (স্থানীয় ভাষায়-চিরাদিয়া) ভ্রমণ করে এসব সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারেন যে কোন পর্যটক। দেশের পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত সেন্টমার্টিন দ্বীপে প্রতি বছর ভ্রমনে আসেন দেশী-বিদেশী কয়েক লাখ পর্যটক। কিন্তু পর্যটকরা নানা কারণে দ্বীপের এই সৌন্দর্য না দেখে ফিরে যান। সেন্টমার্টিনের এসব সাগর রত্ন না দেখে ফিরে যাওয়াকে দুর্ভাগ্য বলেই অনেকে মনে করেন। এসব সাগর রত্ন দেখতে হলে অবশ্যই সেন্টমার্টিনে থাকতে হবে। এখানে পর্যটকদের থাকার সুযোগ-সুবিধা রয়েছে অনেক।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের মেম্বার হাবিবুর রহমান খান জানান, দ্বীপের মানুষ পর্যটকদের বরণ করতে সদাপ্রস্তুত। অপূর্ব সুন্দর স্থান সেন্টমার্টিন দ্বীপ, স্বচ্ছ নীল পানিতে ঘেরা এই দ্বীপের মানুষও অসম্ভব ভালো। চুরি ডাকাতির রেকর্ড নেই। সারা রাত ঘোরা যায় নির্ভয়ে-নির্জনে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ জানান, দ্বীপের মানুষ সবসময় পর্যটকবান্ধব। পর্যটন মৌসুমে যাতে দেশি-বিদেশি পর্যটক শিক্ষার্থীরা নিরাপদে দ্বীপে ভ্রমণ করতে পারেন সেজন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সবপ্রস্তুতি নেয়া হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন