পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত পাহাড়ের পর্যটন স্পটগুলো

Rangamati Sobolong Jorna

আলমগীর মানিক, রাঙামাটি:
কাপ্তাই হ্রদ ও পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে ঈদের ছুটিতে দেশী-বিদেশী অনেক পর্যটক এখন রাঙামাটিতে। অনেকেই তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে এসেছে এই পর্যটন শহরে। নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যরে অপরূপ এ পাহাড়ী অঞ্চলে পর্যটকদের জন্য রয়েছে মনোলোভা আকর্ষণীয় উপাদান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেশী-বিদেশী পর্যটকদের মন আকৃষ্ট করছে। ভালো মানের হোটেলে সিট না পেয়ে অনেকে বিভিন্ন নিন্মমানের রাত কাটাচ্ছে। র্পযটকদের আগমন উপলক্ষে হোটলে, মোটেল গুলোকেও সাজানো হয়েছে নব সাজে। পাহাড়ি এই জেলায় আগত পর্যটকদের কাছে পর্যটন কমপ্লেক্সের দিকেই আকর্ষণ বেশী। ঈদের ছুটিতে বেড়াতে আসা লোকজনের আনন্দ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে রাঙামাটি পর্যটন কর্পোরেশনের ঝুলন্ত সেতু। স্পিড বোট ও দেশীয় নৌ-যান নিয়ে পর্যটকরা কাপ্তাই হ্রদে ভ্রমন করে সৌন্দর্য্য উপভোগ করার পাশাপাশি আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছেন।
রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্স, বেসরকারী পর্যটন কেন্দ্র চাং পাং, পেদা টিং টিং, সুবলং এর প্রাকৃতিক ঝর্ণা দেখতে ভীড় করছে পর্যটকরা। রাঙামাটিতে আসা পর্যটকরা বেশি ভিড় জমাচ্ছেন দুই পাহাড়ের মাঝখানের আকর্ষণীয় ঝুলন্ত সেতুতে। তার পরেই পর্যটকদের আগ্রহ বেশি মনোমুগ্ধকর ঝর্ণা, রাজবন বিহার, জেলা প্রশাসন বাংলো, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের সমাধি সৌধ, বালুখালী কৃষি খামার, টুকটুক ইকো ভিলেজ, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, কর্ণফুলী পেপার মিল ও কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের দিকে।
এসব পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতেও এখন সেখানে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এদিকে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জোরদার করা হয়েছে প্রতিটি স্পটে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ।
ঢাকা থেকে রূপের রানী রাঙামাটিতে বেড়াতে এসে নববধূ সামিয়া জানালেন, আমি এই প্রথম রাঙামাটিতে বেড়াতে আসলাম। আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিনা যে আমাদের বাংলাদেশের ভেতরে এমন অপরূপ একটি জায়গা রয়েছে। জীবনের সকলৈ দুঃখ কষ্ট ভুলে স্বামী নাজমুল আশরাফকে নিয়ে গত দুইটা দিন বেশ ভালোভাবেই উপভোগ করেছেন বলে জানালেন এই নববধূ।

রাঙামাটি পর্যটন কর্পোরেশনের সহকারি বাণির্জ্যকি কর্মকর্তা আবু ইউছুপ পাটোয়ারী জানালেন, অন্যবছরের তুলনায় এবছরও রাঙামাটিতে পর্যটকদের আগমন ভালো হয়েছে। আমাদের মোটেলের সবগুলো রুমই বুকি রয়েছে। তবে এবারে বিরোধীদলের ডাকা হরতালের কারনে আগত পর্যটকরা বেশিদিন বুকি রাখছেন না। হরতালের কারণে তার মোটেলে বেশ কিছু কক্ষের বরাদ্দ পর্যটকরা বাতিল করে দিলেও পরে তা আবার পূরণ হয়েছে। মোটেলে আগামী ১৪ অগাস্ট পর্যন্ত সব রুম বরাদ্দ দেয়া হয়ে গেছে বলে জানান আবু ইউসুফ। তিনি বলেন, ঈদের পরদিন থেকে রাঙামাটিতে প্রচুর পর্যটক আসছে। আগামী দু’একদিনে পর্যটকের সংখ্যা আরো বাড়বে। এছাড়া ঝুলন্ত ব্রীজ দেখতে প্রতিদিন হাজারো পর্যটক টিকেট কেটে ভেতরে যাচ্ছেন।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোস্তফা কামাল জানান, বিশ্বের অন্যান্য দেশের যে সব নামকরা পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে রাঙামাটি তার চাইতে কম সুন্দর নয়। রাঙামাটির পর্যটনের অর্পার সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও বেশ ভালো পর্যটকের সমাগম হয়েছে। পর্যটকরা যাতে কোন ধরনের হয়রানীর শিকার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখছে প্রশাসন।

বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বের সীমান্তবর্তী আয়তনে সবচেয়ে বড় জেলা রাঙ্গামাটি। চারিদিকে সবুজের সমারোহ আর পাহাড় ঘেড়া এ জেলায় রয়েছে এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ কাপ্তাই হ্রদ। নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যরে অনুপম আধাঁরের রাঙ্গামাটি জেলা তার বৈচিত্রময়তার কারণে আকর্ষণীয় স্থান হিসাবে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের মনে স্থান করে নিয়েছে। উঞ্চ হাওয়ায় কাপ্তাই হ্রদ ও পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে দেশী-বিদেশী অনেক পর্যটক তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে আসছে পাহাড়ি জেলা রাঙ্গামাটিতে।
নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যরে এক অপরূপ লীলা ভূমি এ পাহাড়ী অঞ্চলে পর্যটকদের জন্য রয়েছে মনোলোভা আকর্ষণীয় সব উপাদান। রাঙ্গামাটি পর্যটন কমপে¬ক্স, বেসরকারি পর্যটন কেন্দ্র পেদা টিং টিং, চাকমা রাজবাড়ী, রাজ বন বিহার, উপজাতীয় যাদুঘর, সুবলং এর প্রাকৃতিক ঝর্ণা, মুন্সি আব্দুর রউফের ভাস্কর্যসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটি আসার পথে মানিকছড়ি এলাকায় গাড়ি থেকে দেখা যাবে রাস্তার পাশে মনোরম পরিবেশে মাথা উচু করে বীরের বেশে দাড়িয়ে আছে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ এর স্মৃতিভাস্কর্য।তা ছাড়া রাঙ্গামাটির প্রাকৃতিক

অনাবিল মনোরম সৌন্দর্য্য উপভোগ করার মতো। রাঙ্গামটি পর্যটন কমপ্লে¬ক্সের ঝুলন্ত ব্রীজটি দেখার মতো।
পিকনিক করতে আসা লোকজন খুব আনন্দ নিয়ে সেতু পার হয়ে পাহাড়ের চূড়ায় পিকনিক করে থাকে। নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যরে অপরূপ এ পাহাড়ী অঞ্চলে পর্যটকদের জন্য রয়েছে মনোলোভা আকর্ষণীয় উপাদান। পাহাড়ী এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেশী-বিদেশী পর্যটকদের মন আকৃষ্ট করছে। বর্তমানে অনেকে দল বেধেঁ রাঙ্গামাটি আসছে পিকনিক করতে । অফুরন্ত সম্ভাবনার এ পর্যটন শহরের বেশ কিছু স্থানকে আরো আকর্ষণীয় করা গেলে রাঙ্গামাটির পর্যটন শিল্পের আরো ব্যাপ্তি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পার্বত্য শান্তি চুক্তির পরবর্তী সময়ে রাঙ্গামাটি শহরের অদূরে বালুখালীতে গড়ে উঠেছে বেসরকারি পর্যটন কেন্দ্র টুকটুক ইকো ভিলেজ,পুরো একটি সেগুন বাগানকে পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে। সারি সারি সেগুন গাছের সাথে রয়েছে কিছু বনের পশু পাখি। এখানে উপজাতীয় ঐতিহ্যের খাবার সহ রকমারি বিভিন্ন খাবারের জন্য রয়েছে রেষ্টুরেন্ট ও থাকার জন্য রয়েছে উপজাতীয় ঐতিহ্যের টং ঘর।

রাজবাড়ীতে চাকমা রাজ বংশের অতীতের বেশ কিছু নিদর্শন রয়েছে। চাকমা রাজ বাড়ী, পুরনো একটি কামান, রাজ দরবার দেখার মতো। চাকমা রাজা উপজাতীয়দের কাছে অত্যন্ত সম্মানীত। রাঙ্গামাটির আরেকটি দর্শনীয় স্থান হচ্ছে রাজ বনবিহার। বন বিহার বৌদ্ধ ধর্মীবলম্বীদের জন্য একটি তীর্থস্থান হিসাবে পরিগণিত। বৌদ্ধ ধর্মের বেশ কিছু নিদর্শন রয়েছে এখানে। ভেদভেদিতে রয়েছে উপজাতীয় যাদুঘর উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনিষ্টিটিউট এ যাদুঘর নির্মিত হয়েছে। উপজাতীয় যাদুঘরে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয়দের কৃষ্টি, সংস্কৃতির প্রাচীন বেশ কিছু নিদর্শন।
সুবলং এর প্রাকৃতিক ঝর্ণা খুবই মনোমুগ্ধকর এবং উপভোগ করার মতো। বর্ষা মৌসুমে ঝর্ণাগুলো জীবন্ত থাকে। সুবলং এর প্রাকৃতিক দৃশ্য অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। নানিয়ারচরের বুড়িঘাটে রয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফের স্মৃতিসৌধ। বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ মুক্তিযুদ্ধের সময় নানিয়ারচরের বুড়িঘাটে শহীদ হন। স্থানীয় এক উপজাতীয় তাকে ঐ স্থানে কবর দিয়েছিলেন। রাঙ্গামাটি বিডিআর ঐ স্থানে এ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেছে।

রাঙ্গামাটি শহরের অদূরে বালুখালীতে হর্টিকালচার নার্সারীর বিশাল এলাকা জুড়ে যে উদ্যান রয়েছে তার সৌন্দর্য্যও পর্যটকদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করেছে। প্রায় সব সময় এ উদ্যানে পিকনিকের আয়োজন হচ্ছে। হর্টিকালচার নার্সারীটি পরিণত হয়েছে আরেক পর্যটন কেন্দ্রে, সারি সারি ফল ও ফুল গাছের সাথে রয়েছে কিছু বনের পশু পাখি কিচির-মিচির ডাকের শব্দ। সব মিলিয়ে এ উদ্যান পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় স্থান হিসাবে পরিচিত পেয়েছে। রাঙ্গামাটির পর্যটকদের থাকার জন্য রয়েছে কাপ্তাই হ্রদের তীর ঘেষে মনোরম পরিবেশে রাঙ্গামাটি পর্যটন মোটেল-০৩৫১-৬৩১২৬।
এছাড়া বেসরকারিভাবে রয়েছে নব আঙ্গিকে হোটেল প্্িরন্স-০১৯১৩০৭০৮৬৮, ০১১৯১৫৫৬৮৮৮ ও ০৩৫১৬১৬০২, সুফিয়া হোটেল: ০৩৫১-৬২১৪৫, গ্রিন ক্যাসেল: ০৩৫১-৬১২০০, মোটেল জজ: ০৩৫১-৬৩৩৪৮, হোটেল লেক ভিউ (০৩৫১ ৩৩৭৩), হোটেল শাপলা (০৩৫১ ৩৩৯৬)। এসব হোটেলের ভাড়া ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন