নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ‘আদিবাসী’ শব্দের ব্যবহার

5421

স্টাফ রিপোর্টার:

পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীকে উপজাতি ও নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। বাংলাদেশের সংবিধানে ‘আদিবাসী’ বলতে কিছু নেই। ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার করে কোন প্রকার সভা সমাবেশ বা তৎপরতা চালানোর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দেশের সংবিধানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে একটি গোষ্ঠী ‘আদিবাসী’ অধিকার আদায়ে নানা অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

সূত্রমতে, সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও সতর্কতা সত্ত্বেও ‘আদিবাসী’ শব্দের ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো, জাতীয় ঐতিহাসিক স্থানে অনুষ্ঠান, কর্মসূচি পালন করছে সাংবিধানিকভাবে ঘোষিত বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা। সরকার এসব স্থান ব্যবহারে অনুমতি প্রদানে সতর্কতা অবলম্বনের জন্য নির্দেশ দিলেও উদাসীন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। উপজাতীয়দের আদিবাসী উল্লেখ না করার বিষয়ে ইতোপূর্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে নির্দেশনা প্রদান করা সত্ত্বেও তার কোনো কার্যকারিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

২০১৫ সালের ১৬ আগস্ট গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-৩ অধিশাখা থেকে ‘বাংলাদেশে আদিবাসী নামক অসাংবিধানিক দাবি বাস্তবায়নের অপকৌশল রোধে রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো জাতীয় ঐতিহাসিক স্থান ব্যবহারের অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন’সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

কয়েক বছর তারা এই শব্দ ব্যবহার করে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থান সভা সমাবেশ করছে। এ বছরও কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ৯ আগস্ট বিশ্ব আদিবাসী দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠান উদযাপনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম। বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় ‘আদিবাসী সংস্কৃতি সমাবেশ’ করেছে। দেশের স্বাধীনতার সঙ্গে জড়িত এ ঐতিহাসিক স্থানসহ জাতীয় স্থাপনাসমূহে বিচ্ছিন্নতাবাদী দাবির পক্ষে ব্যবহারের সুযোগ পাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি পাবর্ত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠিতে উপজাতির পরিবর্তে যাতে ‘আদিবাসী’ বলা না হয় তার নির্দেশনাও রয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান, পাবর্ত্য চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ আইন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন এবং ১৯৯৭ সালের শান্তিচুক্তিতে উপজাতি সম্প্রদায়কে ‘উপজাতি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কোথাও ‘আদিবাসী বলা হয়নি। তবু একটি মহল ‘আদিবাসী’ অধিকার আদায়ের নামে দেশের বিপর্যয় ডেকে আনার জন্য অপতৎপরতা চালাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক এ বিষয়ে বলেন, যারা আদিবাসী শব্দ ব্যবহার করে অনুষ্ঠানের অনুমতি দিচ্ছেন তারা দ্বি-মুখী আচরণ করছেন ও পরিস্থিতি বুঝতে পারছেন না। আমি কোনো মতেই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের বিরুদ্ধে নই। সাংবিধানিকভাবে তাদের অধিকার অবশ্যই দিতে হবে। কিন্তু আদিবাসী শব্দটি বা আদিবাসী পরিচয়টি যদি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায় তাহলে বাংলাদেশের জন্য তা মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, আদিবাসী শব্দটি উল্লেখ না করার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল। সেই বিজ্ঞপ্তি আমরা মেনে নেইনি। সংবিধানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শব্দ রয়েছে আদিবাসী শব্দ নেই। এজন্য আমরা আদিবাসী শব্দ ব্যবহার করতে পারব না, এটা কোন নীতি বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

One Reply to “নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ‘আদিবাসী’ শব্দের ব্যবহার”

  1. জাতিসংঘ ঘোষিত বিশ্ব আদিবাসী দিবসকে ঘিরে বাংলাদেশে আবারো নতুন করে আলোচনা হচ্ছে বাংলাদেশে কারা আদিবাসী?বাংলাদেশের যে অংশটি নিজেদের আদিবাসী দাবি করে আসছে অথচ তারাই ১৯৯৭ সালেও নিজেদের আদিবাসী পরিচয়ে পরিচিত হতে চায়নি।তারা উপজাতী,ক্ষুত্র জাতিসত্ত্বা বা নিজ জাতী পরিচয় বড় হতে চেয়েছিলো।তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হলো বাংলাদেশের সংবিধানের কোথাও আদিবাসী শব্দটি উচ্চারিত হয়নি এবং কি সরকার চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়কেও আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার না করতে আদেশ প্রদান করেছে।কিন্তু সরকারের এই আদেশকে না মেনে উপজাতীরা কয়েকজন দালাল বুদ্ধিজীবিদের ইন্ধনে এই দিবসটি পালন করে।দুঃখের বিষয় এটাই যে সরকার আদিবাসী শব্দটি ব্যবহারে নিষেদ করেছে সে সরকারের মন্ত্রীরাই আদিবাসী দিবস সন্মেলন উদ্বোধন করে আসে।বছর দুয়েক আগের কথা,উপজাতীদের সাবেক বোমাং রাজা চ্যালেন আইতে বলেছিলো ” বাংলাদেশে তারা আদিবাসী নন,তাদের পূর্ব পুরুষ আরাকান থেকে এসেছে বাংলাদেশে।বছর খানিক আগেও খাগড়াছড়িত আয়োজিত ইত্যাদী অনুষ্ঠানে প্রশ্নত্তোর পর্বে জেলা পরিষদে চাকরীরত চাকমা ভদ্রলোক যখন প্রশ্ন করা হয়েছিলো চাকমাদের আদীনিবাস কোথায় তিনি কিন্তু উত্তরে বলেছিলো চম্পকনগর।ইতিহাস খুজলেও দেখা যায় বাংলাদেশে বাসকারী উপজাতীরা আরাকান,বার্মা,চম্পকনগর থেকে বাংলাদেশে এসেছে।অতএব তারা বাংলাদেশের আদিবাসী নয়। সবচেয়ে বড় কথা বাংলাদেশে থেকে সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করার পরও আমরা কখনো তাদের কে বাংলাদেশের জাতীয় দিবসগুলো পালন করতে দেখিনা।আর তারা হঠাৎ করে কেন আদিবাসী দিবস ঘটা করে পালন করে,নিশ্চয় তাদের কোন উদ্দেশ্য আছে এতে।আর এই উদ্দেশ্যটা কি সেটা সরকার কে বুঝতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন