নিষিদ্ধ হচ্ছে সেন্টমার্টিনে রাতযাপন, পর্যটনে কড়াকড়ি আরোপ
স্টাফ রিপোর্টার:
সেন্ট মার্টিন দ্বীপে শুধু দিনের বেলায় পর্যটকদের যেতে দেওয়া হবে। অতিরিক্ত পর্যটক যাওয়া আসা ও রাতযাপনের ফলে বিপন্ন হতে চলছে দ্বীপটি। আগামী ১ মার্চ থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এছাড়াও দ্বীপের অন্যতম জীববৈচিত্র্যপূর্ণ এলাকা ছেঁড়া দ্বীপ ও গলাচিপা অংশে পর্যটকদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
৯ সেপ্টেম্বর আন্তমন্ত্রণালয় সভায় সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের চিত্র তুলে ধরে পরিবেশ অধিদপ্তর একটি প্রতিবেদন দেয়। পরে এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত ২৩ সেপ্টেম্বর সেন্ট মার্টিন দ্বীপ রক্ষায় গঠিত আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন দ্বীপে যায় এবং অবস্থান করে। এতে দ্বীপটির জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পথে। শুধু তা–ই নয়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে নির্মাণ করা রাস্তায় দ্বীপটির ক্ষতি বাড়ছে।
আন্তমন্ত্রণালয় কমিটির সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, রাতে হোটেলগুলো বাতি জ্বালানোর ফলে কচ্ছপের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। তাই রাতে দ্বীপে আলো জ্বালানো যাবে না। আগামী ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে। দ্বীপটিতে মোটরসাইকেল, গাড়ি, স্পিডবোট চলাচল করতে পারবে না। সমুদ্রসৈকতটির ভাঙন রক্ষায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এতে তীরের মহামূল্যবান প্রবালের ক্ষতি হচ্ছে এবং ভাঙন বাড়ছে। ওই ব্যাগ ফেলানো বন্ধ করতে বলেছে কমিটি।
‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সব স্থাপনা অবৈধ। এসব স্থাপনা সরিয়ে নিতে মালিকদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা না শুনলে আমরা তা উচ্ছেদ করব। তবে যাঁরা এত দিন অবৈধভাবে এসব স্থাপনা নির্মাণ করেছেন এবং পর্যটকদের নিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের আমরা কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে কিছুটা সময় দেব। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে ওই দ্বীপটি শুধু জীববৈচিত্র্যের জন্য সংরক্ষণ করা হবে বলে জানান পরিবেশ ও বনমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
এছাড়াও বলা হয়েছে, চলাচলকারী জাহাজের সংখ্যা ২০ থেকে কমিয়ে দুটিতে নামিয়ে আনা হবে। দ্বীপে যেতে হলে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। দিনে ৫০০–এর বেশি পর্যটক সেখানে যেতে পারবে না। সেখানে কোনো জেনারেটর ব্যবহার করা যাবে না, আপাতত সৌরশক্তি ব্যবহার করতে হবে। দ্বীপে জমি কেনাবেচা করা যাবে না।
দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে দ্বীপটির সব হোটেল-মোটেল উচ্ছেদ করে জমি অধিগ্রহণ করা হবে। দ্বীপে বসবাসকারীদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে দ্বীপটির পরিবেশ বিপর্যয়ের চিত্র উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, অতিরিক্তি পর্যটকদের পানির চাহিদা মেটাতে ভুগর্ভ থেকে অতিরিক্ত পানি উঠানোয় ঝুকিতে আছে দ্বীপটি। যেকোনা সময় ফাঁকা স্থানে সমুদ্রের লোনাপানি ঢুকে গেলে দ্বীপটি ধ্বংষ হয়ে যাবে। এছাড়াও পর্যটকদের মলমূত্র ও বর্জ্যের কারণে দীপের পানিতে ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে যা মূল ভূখণ্ডের চেয়েও ১০ গুণ বেশি।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের (১৯৯৫) আওতায় ১৯৯৯ সালে সরকার সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে। ওই আইন অনুযায়ী, দ্বীপের জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করা যাবে না। আরও চারটি আইনে ওই দ্বীপের জীববৈচিত্র্য রক্ষার কথা বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ওই দ্বীপ রক্ষায় এত আইন, এত নিয়ম রয়েছে, তাহলে সেখানে এত স্থাপনা কীভাবে হলো? সরকারি সংস্থাগুলো এত দিন কী করেছে? দুর্নীতির কারণে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ আজ ধ্বংসের পথে। তবে এখনো সময় আছে, এই দ্বীপের অবশিষ্ট জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করতে হলে সরকারের উচিত পরিবেশ অধিদপ্তরের সুপারিশগুলো যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করা।’