নির্যাতিত আ’লীগ নেতাকর্মী ও জনগণের দাবিতেই নির্বাচন করছি-ড. আনসারুল করিম

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

নবম সংসদ নির্বাচনে মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের মহাজোট মনোনিত নৌকার প্রার্থী আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন পরিবেশ বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. আনসারুল করিম বলেছেন, গত পাঁচ বছরে দলের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহর রফিক মহেশখালী-কুতুবদিয়ার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতন করেছেন। তার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন শহীদ পরিবারসহ দলের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী। অন্যদিকে জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন সহযোগিতা না পেয়ে বর্তমান সংসদ সদস্যের চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন। নির্যাতিত ও ক্ষুব্ধ এসব মানুষ তাকে ভোট দেবে না। তাই তারা আমাকে প্রার্থী হতে বাধ্য করেছেন। তাদের দাবি রক্ষা করতে গিয়ে আমি ভিন্নভাবে হলেও নির্বাচন করছি এবং খুব কঠিনভাবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করে যাবো।

মঙ্গলবার (১১ ডিসেম্বর) বিকালে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন তার ছেলে ব্যারিস্টার আদনান করিম।

তিনি বলেন, আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ উজ্জীবিত একজন মানুষ। আধুনিক ও উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও রূপকার শেখ হাসিনার একজন একনিষ্ঠ কর্মী। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে আমি জনতার কাতারে রয়েছি বহুবছর। যার ফল স্বরূপ নবম সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে আমি মহেশখালী-কুতুবদিয়ার আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইতিহাসের সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছিলাম। কিন্তু দলীয় কিছু মানুষের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে মাত্র অল্প ভোটের ব্যবধানে হেরে গিয়েছিলাম। নির্বাচনে পরাজয়ের পরও আমি মাঠ ছেড়ে যাইনি। জনগণের সাথেই ছিলাম সব সময়।

এসময় আমি মহেশখালীর ছন্নছাড়া আওয়ামী লীগকে গুছিয়ে ছিলাম। দ্বিধা-বিভক্ত নেতাকর্মীদের এককাতারে এনেছিলাম। কিন্তু দশম নির্বাচনে আমার সব যোগ্যতা ও প্রস্তুতি থাকা স্বত্ত্বেও অদৃশ্য কারণে আমার মনোনয়ন হেরে গিয়েছিল। মনোনয়ন না পেলেও আমি গত পাঁচ বছর সময় মহেশখালী-কুতুবদিয়া জনগণের সাথেই ছিলাম। একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছি। কিন্তু এবারো আমাকে অদৃশ্য শক্তির কাছে হারতে হয়েছে। এই কারণে আমি এবং আমার মহেশখালী-কুতুবদিয়ার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণ অত্যন্ত কষ্ট পেয়েছি।

ড. আনসারুল করিম আরও বলেন, আমি নৌকার মনোনয়ন পাইনি। মনোনয়ন না পেয়ে আমি নির্বাচন না করার শতভাগ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু মহেশখালী-কুতুবদিয়ার জনগণ আমার এই সিদ্ধান্ত মানেনি। তাদের কঠিন দাবির প্রেক্ষিতে আমাকে ভিন্ন ব্যানারে প্রার্থী হতে হলো।

তিনি বলেন, জনগণের ভালোবাসা ও দাবিকে মূল্যায়ন করে আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি।  শেখ হাসিনা আমাকে অত্যন্ত ভালোবাসেন। তার আশীর্বাদ আমার সাথে রয়েছে। আমি মনে করি মার্কাটা বড় কথা নয়, যোগ্য প্রার্থীর জন্য মহেশখালী-কুতুবদিয়ার মানুষ অপেক্ষা করছেন। যিনি নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি গত পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকে জনগণের জন্য কিছুই করেনি।

মাতারবাড়ি কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণসহ সব ধরণের সহযোগিতা দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের সাথে আঁতাত করে অবৈধ সুবিধা নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের জন্য কিছুই করেনি তিনি। নিজেই আমলাদের কাছ থেকে শত কোটি টাকা ভাগ নিয়েছেন। একই ভাবে বিএনপি জোট সরকার আমলে তৎকালীন বিএনপি সংসদ সদস্যের নির্দেশে মহেশখালীর বিভিন্ন স্থানে বিএনপি কর্তৃক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতনের ঘটনাকে আবারও উসকে দিয়ে শহীদ পরিবারসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্যাতন করেছেন তিনি। মহেশখালী-কুতুবদিয়ার বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসীদের মদদ দিয়েছেন তিনি।

এসব সন্ত্রাসীদের হাতে নির্যাতিত হয়েছে আওয়ামী লীগের ত্যাগী লোকজন। সরকারের উন্নয়ন বরাদ্দগুলো তার নিজস্ব লোকজনকে নিয়ে ভাগবাটোয়ারা করে লুটপাট করেছেন। কোনো অসহায় ও ভুক্তভোগী সরকারের উন্নয়ন বরাদ্দ পায়নি। মহেশখালীকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের কথা জনগণের কাছে যায়নি। তাই মহেশখালীর জনগণ শেখ হাসিনাকে ভুল বুঝে বসে আছেন। এসব কারণে তার উপর মহেশখালী-কুতুবদিয়ার জনগণ তার উপর চরম ক্ষুব্ধ। তাই সাধারণ জনগণ আমাকেই প্রার্থী হিসেবে চাচ্ছেন। তাদের এই দাবিকে আমি কোনোভাবেই হেলা করতে পারছি না। তাই বাধ্য হয়েই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি।

আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন এই পরিবেশ বিজ্ঞানী বলেন, আমার দীর্ঘ সময়ের গোছানো ভোটের মাঠের সব জনগণ এখনো আমার সাথেই রয়েছে। এছাড়াও আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের বিপুল নেতাকর্মী আমাকে সমর্থন জানিয়েছে। তারা আমার সাথে রয়েছে। তাদের সাথে নিয়ে আমি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো- এতে কোনো সন্দেহ নেই। জনগণের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই- আপনারা আমার সাথে ছিলেন, এখনো আছেন। আমি জীবন বাজি রেখে আপনাদের ভালোবাসার প্রতিদান দিয়ে যাবো। নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত কোনো গুজব বা অনিশ্চয়তা কান না দিয়ে মাঠে থাকবেন এবং আমাকে মাছ মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।

তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহেশখালীতে দেশের সর্বাধিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। তিনি মহেশখালীকে তাঁর স্বপ্নের সিঙ্গাপুর বানানোর পরিকল্পনা নিয়ে এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন। এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য একজন দক্ষ নেতৃত্ব দরকার। আমি মনে করি প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সব প্রার্থীর চেয়ে আমিই যোগ্য। আমি নির্বাচিত হলে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে আমি অবদান রাখতে পারবো। একই সাথে মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সব ধরণের সন্ত্রাস দমন করে সাধারণ জনগণের শান্তি নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিবো। কুতুবদিয়া রক্ষার জন্য আধুনিক ও উন্নত বেড়িবাঁধ নির্মাণ, মহেশখালী-কুতুদিয়া ঘিরে হাতছানি দেয়া পর্যটনের অপার সম্ভাবনায় কাজ করবো। এছাড়াও জনগণের সামাজিক নিরাপত্তা ও সম্মান রক্ষার্থে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন