নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় হতাশ নাইক্ষ্যংছড়িবাসী, দোছড়ি ইউপিতে নির্বাচন সম্পন্ন

dochari-up-pic-copy

নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি:

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িবাসীর মাঝে রবিবার সারাদিন নানা গুঞ্জন ছিল উচ্চ আদালতে ভোট গ্রহণে স্থগিতাদেশ হচ্ছে। তার পরও যথারীতি নিয়মে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউপির ৯টি কেন্দ্রে কড়া পাহারার মাঝে পৌঁছে ব্যালেট পেপারসহ নির্বাচন সরঞ্জমাদি। ভোট গ্রহণের বাকি ছিল মাত্র ১১ ঘন্টা। প্রার্থীরাও তাদের নিজ নিজ এজেন্টদের দিক নির্দেশনাসহ অভয় দিচ্ছিলেন। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছিল স্থগিতাদেশের বিষয়টি ততই প্রচার হতে থাকে।

এক পর্যায়ে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার স্ক্রলে ভেসে উঠে ‘বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউপি নির্বাচন ৬ মাসের জন্য স্থগিত করেছে হাইকোর্ট’। ঠিক সেই মুহুর্তে (রাত ৯টায়) হাইকোর্টে রিটকারীর পক্ষে আইনজীবি মোহাম্মদ আবু সায়েম উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন এবং হাইকোর্টের আদেশের ফ্যক্সবার্তা পাঠান। পরে হাইকোর্টের উক্ত আদেশের কপি নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হলে নির্বাচনের মাত্র ১১ঘন্টা পূর্বে (রবিবার রাত সাড়ে ৯টায়) নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউপি নির্বাচন স্থগিত হওয়ার বিষয় নিশ্চিত করে এলাকায় মাইকিং করা হয়। মাত্র ১১ঘন্টা পূর্বে নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে দুই প্রার্থীসহ তাদের কর্মী সমর্থকরা। তারা মনে করছেন নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন হলে এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হতো। এদিকে নির্বাচন স্থগিত হলেও সদর ইউপির দুই প্রার্থী নুরুল আলম কোম্পানী ও তসলিম ইকবাল চৌধুরী সোমবার সকাল থেকে পুরো ইউনিয়নে মোটরসাইকেল যোগে ভোটারদের সাথে সাক্ষাত করে ভোটারদের শান্তনা দিয়ে নিজের অবস্থান পূন: জানান দিয়েছেন। এ সময় অনেক আবেগ আপ্লুত ভোটার তাদের পছন্দের প্রার্থীকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

নির্বাচন স্থগিত হওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নেতাকমীরা জানান, তসলিম ইকবাল চৌধুরীর উত্থানের সময় নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় তারা হতাশ হয়েছেন। নির্বাচনে অংশ নিতে তিনি সর্বস্ব হারিয়েছেন। অপরদিকে বিএনপি প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা জানান, পর পর দুটি নির্বাচনে অংশ নিতে গিয়ে নুরুল আলম কোম্পানী ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তারপরও জনগণের ভালবাসার কারণে তারা নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন।

এদিকে সোমবার সকাল ৮ টায় ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার মাত্র ১১ ঘন্টা আগে নির্বাচন স্থগিত হওয়ার ঘোষণায় প্রশাসন বিপাকে পড়ে। ভোট কেন্দ্র্রগুলোতে নির্বাচনী সরঞ্জাম, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেয়। নির্বাচন স্থগিত ঘোষণার পর তাদের সেখান থেকে ফিরিয়ে আনা হয়।

এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা অরুন উদয় ত্রিপুরা বলেন, নির্বাচন স্থগিতের হাইকোর্টের একটি নির্দেশনা রবিবার রাতে আমরা ফ্যাক্সে পেয়েছি। পরে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী রাতে নির্বাচন স্থগিত করা হয়।

হাইকোর্টে রিট পিটিশনকারী মো. আলী হোসেনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবু সায়েম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দুই সপ্তাহ আগে নাইক্ষ্যংছড়ির বাসিন্দা মো. আলী হোসেন বর্তমান ভোটার তালিকায় মায়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক রয়েছে উল্লেখ করে সেই সব নাগরিক তালিকা থেকে বাদ দেওয়া না পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিত করার অবেদন জানান। আদালত শুনানী শেষে নির্বাচন ৬ মাসের জন্য স্থগিত করে রায় ঘোষণা করেন।

আদালতে রিটকারী আলী হোসেন রবিবার রাতে মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের বলেছেন, ব্যাক্তি স্বার্থ নয় জাতীয় স্বার্থে রোহিঙ্গা ভোটার বাদ দেওয়ার জন্য তিনি উচ্চ আদালতে রিট করেছেন। ভোটার তালিকা সংশোধন করা নির্বাচন দিলে জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটবে বলে তিনি মনে করেন।

অপরদিকে নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় সোমবার সারাদিন নাইক্ষ্যংছড়িতে নানা গুঞ্জন চলে। কেউ কেউ বাদীর বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করে বর্তমানে তার অবস্থান জানার চেষ্টা করেন। আবার কেউ মামলাটি জনস্বার্থে হয়েছে বলে বাদীর পক্ষে সাফাই গাইছেন। তবে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করার প্রস্তুতির কথাও বাদ যাচ্ছেনা সাধারণ ভোটারদের আলাপের মাঝ থেকে।

অপরদিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ৪নং দোছড়ি ইউনিয়নের স্থগিত থাকা ৭নং ওয়ার্ডের উপ-নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার ৩১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১৬৪ ভোটের ব্যবধানে মহিলা মেম্বার নির্বাচিন হয়েছেন জায়তুন নাহার। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি শামসুন্নাহার পেয়েছে ৮৩ ভোট। বাতিল হয়েছে ১২ ভোট। অপরদিকে সাধারণ সদস্য (পুরুষ) পদে ১২৮ ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন নুর মোহাম্মদ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধি আমির আলী পেয়েছেন ১০৬ ভোট। বাতিল হয়েছে ২ ভোট।

কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করা উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু আহমদ জানান, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। প্রাপ্ত ভোটে জায়তুন নাহার মহিলা মেম্বার ও সাধারণ সদস্য পদে নুর মোহাম্মদ নির্বাচিত হয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন