Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

নানা নোংরা রাজনীতিতে পাহাড় অশান্ত, ব্যতিক্রম নয় লংগদুও

অপ্রীতিকর ঘটনা এড়িয়ে শান্তিরক্ষায় চলছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২৪ ঘণ্টা টহল


ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি, লংগদু থেকে ফিরে ॥

কাপ্তাই লেকের স্বচ্ছ পানি আর উঁচু উঁচু পাহাড়ের গা ঘেঁষে লংগদুর অবস্থান। নির্মম নিষ্ঠুরতায় ভরা এখানকার ইতিহাস। বার বার রক্তপাত আর বাড়িঘরে অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেই চলেছে। এক অগ্নিসংযোগের শিখা নিভতে না নিভৃতেই ঘটছে আরেকটি অগ্নিসংযোগের ঘটনা। সম্প্রতি এমন একটি অরাজকতায় লংগদুতে পাহাড়ীদের ২১২ ঘর পুড়ে ছাই হয়েছে। ঘরবাড়ির বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হলেও প্রাণহানি ঘটেনি।

বাঙালী যুবক নয়নের প্রাণ কেড়ে নেয়া হয়েছে আগুনের ঘটনার একদিন আগে। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তিনি লংগদু যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ার পরেও মোটরসাইকেল ভাড়া খাটিয়ে জীবন যাপন করতেন। নয়ন পাহাড়ী-বাঙালী সবার কাছেই ছিলেন অসম্ভব জনপ্রিয়। এটাই কি নয়ন হত্যার মূল কারণ? অশান্তির আগুনে সেখানে পাহাড়ী বাঙালী দিনরাত পুড়ছে। দুই গোষ্ঠীর মধ্যে চলছে চরম দ্বন্দ্ব। বার বার এমন নিষ্ঠুরতার কারণে পাহাড়ের আগুন নিভছে না। বরং দিন দিন এই আগুনের শিখা বড় হচ্ছে।

লংগদুতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় পুলিশ ২১ বাঙালীকে আটক করেছে। গত ২ জুন লংগদুতে পাহাড়ী বাড়িঘরে আগুন দেয়ার পর থেকে সেখানে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড ও পুলিশ এলাকায় টহল দিচ্ছে। পুলিশ তিন গ্রামে তিনটি চৌকি বসিয়েছে। রাস্তায় সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ডের কয়েক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ওই দিনের পর এলাকায় শান্তি রক্ষায় তারা দিন রাত টহল দিয়ে যাচ্ছে। যাতে আর কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।

পাহাড়ী বাঙালী সমস্যা দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে এই অঞ্চলে। নানা নোংরা রাজনীতির খেলা চলছে। কে ঘটনা ঘটাচ্ছে আর কে দোষের ভাগী হচ্ছে তা রীতিমতো গবেষণা করার বিষয়। পাহাড়ীদের রাজনীতি সুদূরপ্রসারী। আর বাঙালীরা সেখানে নানা গ্রুপে বিভক্ত। পাহাড়ীদের মধ্যে প্রকাশ্যে তিনটি গ্রুপ কাজ করলেও নিজেদের ইস্যুতে সবাই এক।

কিন্তু বাঙালীরা নিজেদের ইস্যুতে এক থাকতে পারে না। এখানে জামায়াতের আধিপত্য অনেক বেশি। জামায়াতের একটি এনজিও আল রাবেতার হেড কোয়ার্টার এই লংগদুতে। অনেক অঘটন ঘটানোর পেছনে প্রতিষ্ঠানটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জামায়াতের এই প্রতিষ্ঠানকে আবার বিএনপি সমর্থন দিয়ে আসছে।

পাহাড়ীদের রাজনীতিটা আবার দেশের ভেতর দেশ গঠনের। জেএসএস, ইউপিডিএফ ও আর রিফরমিস্ট জেএসএস তিন গ্রুপই এখানে ‘জুম্ম ল্যান্ড’ গড়ার কাজটি করে যাচ্ছে। লেকের পানি নীরবে নিভৃতে বয়ে চলেছে আর কালো পাহাড়গুলো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে নানা ঘটনার সাক্ষী হয়ে। বার বার এখানে দাঙ্গার নির্মম নিষ্ঠুর ঘটনাগুলো কাপ্তাই লেকও যেমন তেমনি দেখে আসছে পাহাড়ও।

শান্তিবাহিনী (জেএসএস) লংগদুতে বহু বার রক্তের নদী বানিয়ে কাপ্তাই জলে লেকের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি বাঙালীরাও কম যায়নি। ১৯৯৬ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদকে জেএসএস হত্যা করার পর যে দাঙ্গা হয়েছিল সেই দাঙ্গায় কয়েক জন পাহাড়ী আক্রান্ত হয়েছিল। কিন্তু ইতিহাসের সব চেয়ে বড় ঘটনাটা ঘটেছিল ১৯৭৯ সালে জেএসএস কয়েক শ’ বাঙালীকে হত্যা এবং তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছিল। পুরনো সেই ঘটনার জের ধরে আজও পাহাড়ে আগুন জ্বলছে। রক্তের বন্যা কাপ্তাই লেকে বইছে।

সম্প্রতি লংগদুতে এমন এক ভয়ঙ্কর দাঙ্গা হাঙ্গামায় পাহাড়ীদের ২১২ ঘর আগুনে ছাই হয়ে গেছে। লংগদুতে ৩৫ হাজার লোকের বসবাস। এখানে পাহাড়ী-বাঙালী প্রায় সমান সমান। তবে অস্ত্র ও শক্তির দিক থেকে পাহাড়ীদের অবস্থান বাঙালীদের চেয়ে মজবুত। আন্তর্জাতিকভাবেও তারা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।

শনিবার আমরা লংগদু উপজেলার তিন টিলা, মানিক জোড় ও বাইট্রা পাড়া এলাকা ঘুরে অসংখ্য পাহাড়ী ও বাঙালী নারী পুরুষের সঙ্গে কথা বলে নানা রকম ঘটনার বর্ণনা শুনেছি। বাঙালীরা অভিযোগ করলেন, পাহাড়ীরা নয়ন হত্যার আগের দিনই তাদের ঘরবাড়িতে তালা লাগিয়ে আত্মীয় স্বজনসহ বনবিহারে আশ্রয় নেয়। তাহলে কি তারা জানত পরের দিন তাদের বাড়িঘরে আগুন দেয়া হবে। নাকি তারাই পরিকল্পিতভাবে ঘটনাটি ঘটিয়ে নিজেরা ফায়দা লুটেছে। এ ঘটনায় দীর্ঘমেয়াদী লাভবান পাহাড়ীরাই। এখন পাহাড়ীরা ঘরে ফিরছে না।

লংগদুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ তোফাজ্জল হোসেন বললেন, নুরুল ইসলাম নয়ন হত্যাকা- লংগদুর বাঙালীদের মনে দারুণভাবে আঘাত করেছে। কারণ সে যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও তার সঙ্গে সবার সম্পর্ক ভাল ছিল। তার হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে ৫ থেকে ৬ হাজার বাঙালী তার নামাজে জানাজায় অংশ নিতে লংগদু হাইস্কুল মাঠে জমায়েত হয়।

আমরা জানাজায় যখন দাঁড়িয়েছি তখন দেখলাম তিন টিলা এলাকায় একটি দোকান ঘর থেকে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। এরপর মানিকজোড় প্রাম থেকে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কয়েক শ’ তরুণ বাঙালীর ওপর গুলতি মারতে থাকে। এ সময় বাঙালীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওই গ্রামে কয়েকটি ঘরে আগুন দিতে পারে। তবে অন্য দুই গ্রামের পাহাড়ীদের ঘরবাড়িতে আগুনের বিষয়টি নিয়ে রহস্য বিরাজ করছে। সেনাবাহিনী, বর্ডার গার্ড ও পুলিশ এলাকায় টহল দিচ্ছে। কিন্তু এলাকা থমথমে ভাব বিরাজ করছে।

রাঙ্গামাটি জেলা যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম বলেন, নয়ন হত্যার পর আমরা নয়নের দাফন কাফনের জন্য যখন ব্যস্ত ঠিক তখনই জানতে পারলাম জামায়াত ও বিএনপির পক্ষ থেকে নয়ন হত্যার প্রতিবাদে একটি মিছিল বের করবে। তারা তড়িঘড়ি করে একটি ব্যানারও লিখে ফেলেছে। নয়নের লাশ নিয়ে যখন আমরা বাইট্রা পাড়া মাদ্রাসা মাঠে নিয়ে যাচ্ছি তার কিছু সময়ের মধ্যে লংগদু উপজেলা আমির মৌলানা নাসির উদ্দিন, সাবেক শিবির সভাপতি বর্তমানে জামায়াতের রোকন আব্দুর রহিম, উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেনের নেতৃত্বে কয়েক হাজার লোকের একটি মিছিল উগ্র স্লোগান দিয়ে জানাজায় অংশ নিতে আসে। জানাজার নামাজ শেষে তারা নয়ন হত্যার বিচার চেয়ে জ্বালাময়ী বক্তব্য দিতে শুরু করেন। এখানে আওয়ামী লীগের কেউ কোন বক্তব্য রাখেননি।

তাদেরও ওই জ্বালাময়ী বক্তব্যের এক পর্যায়ে কিছু লোক কোন ফাঁকে পাহাড়ীদের বাড়ি ঘরে আগুন দেয় তা আমরা বুঝে উঠতে পারিনি। মুহূর্তের মধ্যে তারা ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। জেএসএস’র এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেই জামায়াতের আমির নাসির উদ্দিন ও আব্দুর রহিম এলাকা ছেড়ে চলে যায়। তাদের মোবাইল ফোন সেই থেকে বন্ধ রয়েছে।

এদিকে, রবিবার জেএসএস’র লংগদুর সাধারণ সম্পাদক মনি শংকর চাকমা (জেএসএস মুখপাত্র) বাদী হয়ে থানায় ৯৮ জন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা কর্মীর নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেছে। এই মামলায় কয়েক জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখানো হয়েছে।

ঘটনার নেপথ্যে থাকা কাউকে মামলায় আসামি করা হয়নি। উপজেলা বিএনপির সভাপতি এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তিনি সেদিন জ্বালাময়ী বক্তব্য দিলেও পুলিশ তাকে কিছু বলছে না। জেএসএস’র পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারীরা পার পেয়ে যাচ্ছে আর নিরীহ বাঙালীরা মামলার আসামি হচ্ছে। তারা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এমন এক রাজনীতির খেলা এখানে ঘটে গেছে।

১৯৮৯ সালের ৪ মে বিকেল ৪-৫টা নাগাদ লংগদু উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ সরকারসহ তার স্ত্রী, সন্তান ও নাতিকে অনিল বিকাশ চাকমার নেতৃত্বে তার অফিসের কাছে গুলি করে হত্যা করা হয়। তখনও একটি বড় দাঙ্গা ঘটে যায় এই এলাকায়।

মোবাইলে যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলামের বক্তব্য শুনে আবার আমরা লংগদু উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে হাঁটতে শুরু করলাম তিনটিলা বনবিহারের দিকে। বনবিহারের পাশেই দেখা হলো মনি শংকর চাকমার সঙ্গে। তিনি লংগদু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।

তিনি বললেন, বাঙালীরা পাহাড়ীদের বাড়ি ঘরে নির্বিচারে আগুন দিয়েছে। পর পর দু’টি গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়ার পরে মানিক জোর গ্রামে আমাদের ছেলেরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। আগুন দেয়ার ঘটনাটি পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। এর পেছনে অন্য কোন শক্তি কাজ করেছে। জানতে চেয়েছিলাম আপনারা কেন সরকারী সাহায্য নিচ্ছেন না কেন?

এমন প্রশ্নের জবাবে মনি শংকর বলেন, বনবিহার থেকে আমাদের নিষেধ করা হয়েছে কোন প্রকার সরকারী সাহায্য নিতে। বিদেশী সাহায্য পেয়েছেন-এর জবাবে বলেন, বিদেশী সাহায্য ভিক্ষা। আমাদের সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র এখানে ব্যর্থ। আমাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে ছাই করে দেয়া হয়েছে। আমাদের থাকার কোন জায়গা নেই। বাড়ি বলতে তো আর কিছু অবশিষ্ট নেই।

মনি শংকরের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ঠিকাদার নিন্টু বিকাশ চাকমা বললেন, পাহাড়ীদের বাড়িতে আগুন দেয়ার সাহস কি বাঙালীরা পেয়েছে-তাদের সাহস দেয়া হয়েছে। কারা সাহস দিয়েছে এমন প্রশ্নে নিন্টু অবলীলায় বললেন, প্রশাসন ও আর্মি আগুন দেয়ার ঘটনার নেপথ্যে ছিল। আমরা সরকারী কোন সাহায্য নেব না যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের ঘরবাড়ি তৈরি করে না দেয়া হবে-আমাদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে না দেবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না।

উদয় শংকর চাকমা, কুলিন বিহারী চাকমা বললেন, আমরা কিভাবে ঘরে ফিরব। আমাদের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড আমাদের কোন নিরাপত্তা দিতে পারছে না। পুলিশ এখানে অসহায়।

লংগদু থানায় এডিশনাল এসপি সাফিউল সারোয়ার বলেন, এলাকায় শান্ত পরিস্থিতি তৈরি করতে জনপ্রতিনিধি, পাহাড়ী-বাঙালী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দফায় দফায় বৈঠক করা হয়েছে। আমরা আশা করছি কিছু দিনের মধ্যে স্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হবে। তবে নয়ন হত্যাকারী এবং যারা পাহাড়ীদের বাড়ি ঘরে আগুন দিয়েছে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। ঘরবাড়ি ছাড়া পাহাড়ীরা কোথায় আশ্রয় নিয়েছেন।

এমন প্রশ্নের জবাবে এএসপি বলেন, তারা তিনটি এলাকায় অবস্থান করছেন। তিনটিলা বনবিহারে ২০ জন, মানিকজোর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮০ জন, আর ডানে মানিকজোর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একশজন আশ্রয় নিয়ে আছেন। কিছু লোক আবার বিভিন্ন এলাকায় তাদের আত্মীয় স্বজনের বাড়িতেও রয়েছেন।

লংগদুতে ১৯৭৯ সালের গণহত্যা ইতিহাস বর্ণনা করলেন সেখানকার প্রবীণ কয়েকজন। তারা বলেন,পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) সশস্ত্র সংগঠন বা শান্তি বাহিনীর গেরিলা যোদ্ধা ও উপজাতি সন্ত্রাসীরা বাঙালীদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালায়। ১৯৭৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর রাত ২টা থেকে পরদিন সকাল ৭টা পর্যন্ত ঘুমন্ত মানুষের ওপর আক্রমণ চালানো হয়। সেই সময় নিরীহ ৩২০ জনকে হত্যা করা হয়।

বাঙালীদের গ্রামে অগ্নি সংযোগসহ লুটতরাজ করে। নারকীয় এই ঘটনার পর থেকে পাহাড়ী বাঙালীদের সঙ্গে সম্প্রীতি নষ্ট হতে শুরু করে। কয়েক ঘণ্টা সময়ের ব্যবধানে ৩২০ জনের অধিক নারী, শিশু, আবালবৃদ্ধবনিতা নিরস্ত্র নিরীহ বাঙালীকে হত্যা করা হয়েছিল। আহত করা হয়েছিল আরও ৭৫০ জনকে। সেই সময় ২০৪টি বাড়ি লুটতরাজ করে সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেয়া হয়। গৃহহীন হয়েছেন প্রায় সহস্রাধিক পরিবার।

এই হত্যাকাণ্ডের পরে কাউখালী গণহত্যা, বেতছড়ি গণহত্যা, বানরাইবারী, বেলতলী, বেলছড়ি গণহত্যা, তাইন্দং, আচালং, গৌরাঙ্গ পাড়া, দেওয়ান বাজার, তবলছড়ি, বর্ণাল, রামছিরা, গোমতি গণহত্যা, গোলকপতিমা ছড়া, মাইচ্যেছড়া, তারাবনছড়ি গণহত্য, ভূষণছড়া গণহত্যা, পানছড়ি গণহত্যা, দীঘিনালা গণহত্যা (২৯ এপ্রিল ১৯৮৬), মাটিরাংগা গণহত্যা কুমিল্লাটিলা, শুকনাছড়ি, দেওয়ান বাজার, সিংহপাড়া, তাইন্দং গণহত্যা, দীঘিনালা গণহত্যা (২ জুলাই ১৯৮৬), ভাইবোনছড়া গণহত্যা, হিরাচর, শ্রাবটতলী, খাগড়াছড়ি, পাবলাখালী গণহত্যা, লংগদু গণহত্যা (১৯৮৯), নাইক্ষ্যংছড়ি গণহত্যা, মাল্যে গণহত্যা, লোগাং গণহত্যা, নানিয়ারচর গণহত্যা, পাকুয়াখালী গণহত্যা ও জুরাইছড়ি গণহত্যা কথা তারা উল্লেখ করেন।

নয়নের স্ত্রী জাহানারা বেগমের সঙ্গের সঙ্গে তার বাড়িতেই কথা হলো। তিনি বলেন, আমার স্বামীকে যারা হত্যা করেছে তাদের দুই জনের কথা আমি পুলিশকে জানিয়েছি। একজন জেএসএস’র চাঁদা আদায়কারী। আর একজন জেএসএস নেতা। তিনি তাদের নামও উল্লেখ করেন। তারা এক জুন আমার স্বামীকে বাড়িতে এসে বলে ওমুক জায়গায় যাব। তুমি মোটরসাইকেল ভাড়া যাবে তো। তাতে সে রাজি হয়ে যায়। সকালে সে বের হয়ে যায়। আর বাড়িতে ফেরেনি। আমরা ফেসবুকের মাধ্যমে তার হত্যার খবর পেয়েছি।

আমার স্বামীকে যেভাবে তারা হত্যা করেছে তারাও যেন শাস্তি পায়। পুলিশের কাছে এই দুই জনের কথা বললেও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে এখনও কোন ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো বাঙালী পাড়ায় পুলিশী অভিযান চালানো হচ্ছে। বাঙালী পাড়ায় পুলিশের ভয়ে কোন পুরুষ নেই। দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছেলে জাহিদ হাসান রাবেতা স্কুলে নবম শ্রেণীতে পড়ে। চার বছরের ছোট মেয়ে নীপা বাবার জন্য শুধু কান্না করে। অল্পদিন আগে দাদা মারা গেছেন। দাদার কবরের পাশেই বাবা নয়নের কবর। প্রতিদিন সে কবরের পাশে বসে বসে কাদে।

জাহানারা বলেন, পরিবারে একমাত্র উপার্জন করতেন তার স্বামী। তাকে হারিয়ে এখন তারা দিশেহারা। তিনি অভিযোগ করেন, এই এলাকায় জেএসএসের এক বড় নেতা! হুকুমেই সব কিছু এখানে ঘটে। তার নির্দেশেই আমার স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সরকারী সহযোগিতা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আর্মির পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা, স্বাস্থ্যমন্ত্রী দিয়েছেন ২৫ হাজার টাকা। আত্মীয় স্বজনরাও কিছু কিছু সাহায্য করেছে। কিন্তু আমার এই সাহায্যের কোন প্রয়োজন নেই। যেখানে স্বামী নাই। সেই তো আমার সবচেয়ে বড় সাহায্যের জায়গা ছিল।

এদিকে, লংগদুতে যুবলীগ নেতা হত্যায় ২ পাহাড়ী যুবক গ্রেফতার রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলায় সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত ভাড়ার মোটরসাইকেল চালক নুরুল ইসলাম নয়ন হত্যায় জড়িত সন্দেহে রুমেল চাকমা ও জুয়েল চাকমা নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

উল্লেখ্য পাহাড়ে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে গত ছয় বছরে আট বাঙালী মোটরসাইকেল চালক নিহত হয়েছে। গুম হয়েছে আরও অন্তত আট। মোটরসাইকেল ছিনতাই বা চুরির জন্য নয়, এসব হচ্ছে পরিকল্পিত হত্যাকা-! পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রে জানিয়েছে, লংগদু উপজেলা যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম নয়ন হত্যাকা-ের তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ এসব তথ্য পেয়েছে।

সূত্র: জনকণ্ঠ

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন