নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
আজ ৪৫তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, বাঙালি জাতির জীবনে আজ এক গৌরবদীপ্ত দিন। অন্যান্য বছরের মতো এবারও যথাযথ মর্যাদায় বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে দিবসটি পালন করছে জাতি। আজ সরকারি ছুটির দিন।।বহু কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্যদিয়ে জাতি এবারের দিবসটি উদযাপন করছে।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা
সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ৫টা ৫৭ মিনিটে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ স্মৃতিসৌধের ভেতরে প্রবেশ করেন। পরে তারা শহিদ বেদীর সামনে গিয়ে ফুল দিয়ে লাখো শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এসময় বিউগলে বেজে উঠে করুন সুর। তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল প্রদান করে গার্ড অব অনার। রাষ্টপ্রতির শ্রদ্ধা নিবেদনের পরপরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে লাখো শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এসময় তারা দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।পরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ৬টা ০৫ মিনিট স্মৃতিসৌধ এলাকা ত্যাগ করেন।
তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শুরু হয় স্মৃতিসৌধে ফুল দেয়ার আনুষ্ঠানিকতা। পরে সাধারণের জন্য জাতীয় স্মৃতিসৌধ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী-আইজিপি-ডিএমপি কমিশনারের শ্রদ্ধা
মহান স্বাধীনতা দিবসে রাজারবাগ পুলিশ লাইন স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পার্ঘ্য অর্পন করেছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও ডিএমপি কমিশনার।
বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে প্রথমে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পরে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক এবং ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এসোসিয়েশনের সভাপতি ডিএমপি কমিশনার এবং বাংলাদেশ উইমেন্স পুলিশ নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে অতিরিক্তি কমিশনার মিল বিশ্বাস পুষ্পার্ঘ্য অর্পন করেন।
এসময় সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি শেখ হেমায়েত হোসেন, এসবি’র প্রধান অতিরিক্ত অইজিপি ড. মো. জাবেদ পাটোয়ারীসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধাগণ, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিকগণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সাধারণ জনগণ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এরপর স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মানুষের ঢল নেমেছে। সকালে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর পরই স্মৃতিসৌধ এলাকায় সাধারণ দর্শনার্থীদের ঢল নামে। আশপাশে লোকে লোকরণ্য হয়ে যায়। সারিবদ্ধভাবে একে একে শ্রদ্ধা জানাতে থাকেন সর্বস্তরের মানুষ। ধীরে ধীরে স্মৃতিসৌধ এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও দলের ব্যানারে সারিবদ্ধ হয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন তারা। কারও হাতে জাতীয় পতাকা, কারো কপালে লাল-সবুজের চিহ্ন, কারো কারো শরীরে শোভা পাচ্ছে লাল-সবুজের পতাকা। মুখে এঁকেছেন লাল-সবুজের চিহ্ন। বৃদ্ধ, যুবক, তরুণ, গৃহবধু সবাই আছেন এ দলে। বাবার হাত ধরে এসেছেন শিশুরাও, দুই গালে আঁকা রয়েছে জাতীয় পতাকা।
সকাল থেকে শ্রদ্ধা জানিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), সিপিবি, এলডিপি, জাতীয় পার্টি, ঢাকা জেলা পুলিশসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক গড়ে ওঠা সংগঠনগুলোও শ্রদ্ধা জানাতে এসেছে।এ সময় পুরো স্মৃতিসৌধ এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ও বাড়তে শুরু করেছে।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন অনেকেই। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পরপরই স্মৃতিসৌধের বিভিন্ন স্থাপনা ঘুরে দেখছেন তারা।
সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শিশু-কিশোর সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কুচকাওয়াজসহ বিভিন্ন শরীরচর্চা প্রদর্শন করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ ছাড়াও বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, গণফোরামসহ বিভিন্ন যুব ও ছাত্র সংগঠন মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে এবং সরকারি ও বেসরকারি বেতার ও টিভি চ্যানেলে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে।