নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের ১৬হাজার রোহিঙ্গা কুতুপালং চলে যেতে অধীর অপেক্ষায়

তুমরু ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের সরানোর কাজ শেষ: বাকী ৩ ক্যাম্পের বিষয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় প্রশাসন

নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি, সাপমারাঝিরি-ফুলতলী সীমান্ত থেকে :
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদরের সীমান্তের ৩ অস্থায়ী ক্যাপ থেকে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলে যেতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ১৬ হাজার রোহিঙ্গা। তারা গহীন বনে পাহাড়ের চুড়ায় বৃষ্টি ভেজা অতি কষ্টের এ পরিবেশ থেকে মুক্তি পেতে মরিয়া অন্যত্র সরে যাওয়ার অপেক্ষায়।

কেননা এহেন অমানবিক পরিবেশে এদের প্রত্যেকের পরিবারে এখন রোগাক্রান্তদের সংখ্যা বেড়ে চলছে গাণিতিকহারে। গতকাল রোববার উপজেলা সদরের অবস্থানরত বড়ছন খোলা,সাফমারা ঝিরি ও ফুলতলির ১৫ হাজার রোহিঙ্গার অস্থায়ী রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে খোজঁ নিতে গেলে এ সব তথ্য রেবিয়ে আসে।

সাফমারা ঝিরি ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা ও মিয়ানমারের ছালিদং এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান ছাবের আহমদ জানান, জীবন বাচাঁতেই গত ২৭ আগষ্ট গহীন রাতে সীমান্তের এ জায়গায় সপরিবারে অবস্থান নেন তিনি।

পাশাপাশি তার ইউনিয়ন এলাকার অনেক লোকজন অস্থায়ী ক্যাম্পের অস্থায়ী এ তাঁবুতে
রাত যাপন করছেন সে দিন থেকেই। তিনি বলেন, বৃষ্টি ভেজা পাহাড়ের চুড়াতে থাকা,খাবার গ্রহন,চলা-ফেরা ও চিকিৎসাসহ যাবতীয় কাজকর্মে অন্তহীন সমস্যা এ ক্যাম্পে। আর যৎসামান্য যে সেবা তারা এখানে পাচ্ছে তা-ও অপ্রতুল। এ ক্যাম্প থেকে লোকালয় এবং হাট বাজার অনেক দূরে।

এছাড়া সাহায্যকারী লোকজন ৩/৪ কিলোমিটার পাহাড়ি দূর্গম পথ বেয়ে এখানে দান খয়রাত করতেও আসতে চায় না। তিনি আরো বলেন, আর এ পাহাড়ি এলাকায় অনেক চোর ডাকাত। যারা সীমান্ত চোরা কারবারী। এদের সংখ্যা শতাধিক। এসব লোকজন রোহিঙ্গাদের গরু-ছাগল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে নিয়মিত।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর গহীনরাতে এ গ্রুপের একদল চোর তার ১১টি গরু চুরি করে অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছে। এখন সে নি:স্ব। বিজিবি এবং প্রশাসনের কাছে বিচার চাওয়ায় চোরের দল এখন তাকে প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছে নিয়মিত। এ সব কারণে তারা কুতুপালং ক্যাম্পে চলে যেতে আগ্রহী।

ফুলতলী ক্যাম্পের আবুল শামা এ প্রতিবেদককে জানান, এ ক্যাম্পে মাত্র সাড়ে ৬ শত রোহিঙ্গা। তারা পাহাড়ের চুড়ায় অবস্থান করছে আজ ১ মাস। সব হারিয়ে জীবন বাচাঁতে এসেও এখন জীবন যায় যায় অবস্থা।

পরিবারের সদস্যরা নানা অসুবিধায় আছে। আর কুতুপালং চলে গেলে সেখানে ছবি তোলার, কার্ড পাওয়া,বা অন্যান্য সরকারী সব সুযোগ সুবিধা পাওয়া যাবে। এ কারণে তারা কুতুপালং বড় ক্যাম্পে চলে যেতে অধীর অগ্রহে বসে আছেন।

বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, সরকার ২ সপ্তাহ আগেই ঘোষনা দিয়েছিলেন যে, বাংলাদেশের নানাপ্রান্তে বিচ্ছিন্নভাবে থাকা রোহিঙ্গাদের কুতুপালং ক্যাম্পে নিয়ে আনা হবে। এ প্রেক্ষিতে বান্দরবান জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বনিক গত ৩ অক্টোবর নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমরু পশ্চিম পাড়া ক্যাম্পের ৫০ পরিবারকে নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে রোহিঙ্গাদের ককসবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে সরিয়ে নেয়ার কাজ উদ্বো ধন করেন।

এর পর ৪ ও ৫ অক্টোবর বাকী ২ দিনে এ ক্যাম্পের অবশিষ্ট সাড়ে ৬ হাজার রোহিঙ্গাকে কুতুপালং সরানো হয়। এর পরপর পর্যায়ক্রমে উপজেলার সদর ইউনিয়নের সীমান্তের বাকী ৩ অস্থায়ী ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের ও সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হয়নি। বৈরী আবহাওয়া এবং যাতায়াত খরচের কারণে এখনও নাইক্ষ্যংছড়ির সদর সীমান্ত থেকে কুতুপালং সরানোর কাজ সম্পন্ন হয়নি বলে প্রচার আছে বেশ। সূত্র দাবী করেন, এ বিষয়ে প্রশাসন এখনও সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছেন।

এদিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নিবাহী অফিসার এসএম সরওয়ার কামাল জানান,সরকারের সিদ্ধান্তে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা এলাকা থেকে রোহিঙ্গাদের কুতুপালং ক্যাম্পে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হলেও নানা জটিলতার কারণে তা এখনও শেষ হয় নি দুটো কারনে। প্রথমত ঘুমধুমের তুমরু গ্রামের নাফনদের পূর্বাংশের জিরোপয়েন্ট আটকে থাকা প্রায় ১১ হাজার রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি।

এ কারনে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের তুমরুর কাছাকাছি এ সব রোহিঙ্গাকে কুতুপালং ক্যাম্পে সরানো সম্ভব হয়নি। আর নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের বড়ছন খোলা,সাপমারা ঝিরি ও ফুলতলী এলাকার প্রায় ১৬ হাজার রোহিঙ্গাকে কুতুপালং সরাতে মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন লাগবে। কেননা এখানে খরচ সহ বেশ কিছু জটিলতা রয়েছে।

তিনি আরো জানান,এ বিষয়ে গতকাল ৮ অক্টোবর সকালে বান্দরবান জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে পৃথক দুদফা সভাও অনুষ্টিত হয়। উভয় সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এর একটি আইন শৃংখলা বিষয়ক অপরটি কোর কমিটির সভা। ঊভয় সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক।

এ সভা সমূহে নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের ৩ অস্থায়ী ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি অধিকতর গুরুত্ব পায়। সভায় এদের সরানোর বিষয়টি তরাণ্বিত করতে গুরুত্বরোপ করা হলেও দিনক্ষণ ঠিক করা হয়নি।
তবে অতি শীগ্রই প্রক্রিয়া শুরু হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন