Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

নাইক্ষ্যংছড়ির ৪০ ডাকাতের কমান্ডর এবার ইউপি চেয়ারম্যান ও পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার হুমকি

বাইশারী প্রতিনিধি:

নাইক্ষ্যংছড়ি পাহাড়ের ৪০ ডাকাতের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার কুখ্যাত আনোয়ার ওরফে আনাইয়া ডাকাত এবার হত্যার হুমকি দিলো বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম ও বাইশারী  পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরির্দশক আবু মুসাকে। পাশাপাশি এ ডাকাতদলটি বাইশারী তদন্ত কেন্দ্রের এক সোর্সকে হত্যার জন্যে মঙ্গলবার গভীর রাতে তার বাড়ি ঘেরাওকালে দ্রুত পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাত দলটি গুলি বর্ষণ করতে করতে পালিয়ে যায় পাহাড়ের দিকে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী এভাবে এগিয়ে গেলে ডাকাত দলটি পাহাড়ে তাদের আস্তানায় ফিরে যায়। তবে তারা নানা মাধ্যমে আজ-কালের মধ্যে বাইশারীর যে কোন সচেতন লোককে হত্যা করে তাদের দলের সদস্যদের গ্রেফতারের বদলা নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। ফলে আনোয়ার বাহিনীর সম্ভাব্য এ হামলার হুমকিতে বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন বাইশারী, দৌছড়ি, গর্জনিয়া ও ঈদগড়ের লক্ষাধিক লোক।

পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও একাধিক বিশ্বস্থ সূত্র জানায়, নাইক্ষ্যংছড়ি ও রামু উপজেলার পাহাড়ি এলাকা গুলোতে শাহিন ডাকাত ও আনোয়ার ডাকাত মিলে গড়ে তুলে আলীবাবার ৪০ চোরের আদলে ৪০ ডাকাতের আস্তানা। তারা পাহাড়ে ৪টি আস্তানা গড়ে তুলে। এ সবের একটি বাইশারীর পূর্বদিকে তুলাতলীর উত্তরে চাইল্ল্যাতলীর গহীন বনে, দ্বিতীয়টি রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের ছাগলখাইয়া- শিবাতলী, ঈদগড়-গর্জনিয়ার জঙ্গল গর্জনিয়া পাহাড় ও হিমছড়ি ঢালার আস্তানা। দুভাগে ভাগ করে দক্ষিনের অংশ দেখভাল করতো শাহীন ডাকাত আর উত্তরের অংশ তদারকি করে আসছে আনোয়ার ডাকাত। ইতি মধ্যেই শাহীন ডাকাতসহ তার ৪ জন প্রধান সহযোগী আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হলে বেড়ে উঠে আনোয়ার বাহিনী। এবার কুখ্যাত আনোয়ার সাম্রাজ্য গড়ে তোলে সমগ্র পাহাড়ে।

সে ইদগড় থেকে গর্জনিয়া পর্যন্ত দীর্ঘ ১০ কিলোমিটার এলাকার পাহাড়ি জনপদ গুলো যখন যাকে ইচ্ছা অপহরণ, খুন, ডাকাতি বা হামলা চালিয়ে রাম রাজত্ব কায়েম করে আইন-শৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘনিয়ে আসছিল।

সূত্র আরও দাবি করে, এমতাবস্থায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে নামে এসব কুখ্যাত অপহরণকারী ডাকাতদের আটকে। অভিযানে গত সপ্তাহে বাইশারী তদন্ত কেন্দ্রে ইনচার্জ আবু মুসা আটক করে আনোয়ার ডাকাতের সেকেন্ড ইন কমান্ড শফিউল আলম ও নুরুল হাকিমকে। এতে আনোয়ার ডাকাত বিচলিত হয়ে এবার নামে চেয়ারম্যান এবং পুলিশ কর্মকর্তা আবু মুসাসহ সচেতন মহলকে হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে। কেননা এ মুসাই সব ডাকাতের আতঙ্ক এক পুলিশ কর্মকর্তা বনে যান উপর্যপুরি অভিযানের কারণে।

এদিকে বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম জানান, গত ২০এপ্রিল গভীর রাতে কে বা কারা তার বাড়ির দরজার বাহির থেকে ধাক্কা-ধাক্কি করে। ভয়ে তার পুরো পরিবার চরম আতঙ্কে রাত যাপন করে জেগে থেকেই। এ ঘটনায় তিনি জিডি করেন নাইক্ষ্যংছড়ি থানায়।

পুলিশ কর্মকর্তা আবু মুসা জানান, আনোয়ার ডাকাত নানা মাধ্যমে তার কাছে খবর দেয়, তাকে আজ-কালের মধ্যে হত্যা করা হবে। বিষয়টি আটক শফিউল আলম স্বীকার করে হুংকার ছেড়ে আবু মুসাকে ২২ এপ্রিল রাতে জানান যে-এ মুসা সাহেব!  আমার লিডার আনোয়ার বাবা  আজ-কালের মধ্যেই তোমাকে হত্যা করবে। বুঝবে তখন মজা। বিষয়টি উপ-পরির্দশক আবু মুসা স্বীকার করেন।

এদিকে-এ আনোয়ার ডাকাত গত ৬ মার্চ ঈদগাও এলাকার গজালিয়ার বৃদ্ধ ছৈয়দুল আলমকে অপহরণ করে। ৪ দিন ইদগড় ও বাইশারীর গহীন পাহাড়ে আটক রেখে ৭০ হাজার টাকা মুক্তিপণে ছেড়ে দেয়।

বৃদ্ধ ছৈয়দুল আলমের তথ্যের ভিত্তিতে  ঈদগাও, ইদগড় ও বাইশারী পুলিশের যৌথ অভিযানে অপহরণ চক্রের সক্রিয় অপর সদস্য ডাকাত সেলিম উদ্দিন ও আবদু সালাম গ্রেফতার হয়। এ দুজনই  ডাকাতি ও অপহরণসহ নানা জঘণ্যতম অপরাধে জড়িত বলে জবানবন্দি দেয় বান্দরবানের বিজ্ঞ আদালতে।

গত ১৭ এপ্রিল কৃষক সাইফুলকে অপহরণ ও ৭০ হাজার টাকায় মুক্তিপণের পরে টানা ৩ দিনের অভিযানে ৩ অপহরণ চক্রের সদস্য যথাক্রমে আবদুর রশিদ, শফিউল আলম ও নুরুল হাকিম পুলিশের জালে আটকা পড়ে। এসব ঘটনার পর আনাইয়া ও হামিদ ডাকাত চরম প্রতিশোধ নিতে ছক আঁকে কয়েকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে হত্যার। এতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে পুরো জনপদ।

পুলিশ আরও জানায় গত বছরের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঈদগড় করলিয়া মূরা এলাকায় জমির বিরোধের একটি ঘটনায় ভাড়া গিয়ে আনোয়ার ডাকাত নিজেই নজির আহমদ নামের এক বৃদ্ধকে খুন করে।

তথ্য অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, ২০১৬ সালের ১১ অক্টোবর বাইশারী-ইদগড় সড়কের বেংডেবা নামক স্থান থেকে গাড়ি চালক মো. ইউনূছ, আবদুল করিম ও ব্যবসায়ী আবু বক্করকে অপহৃত হলে মুক্তিপণে ছাড়া পায়। এছাড়া ২০১৪ সালে ১৯ আগস্ট লম্বাবিলের রশিদ উল্লাহ, আবদুল খালেক, ২০১৬ সালের  ১ মে দৌছড়ি ইউনিয়নের বুলবুল আক্তার, ১২ আগস্ট বাইশারী ইউনিয়নের রাঙাঝিরি এলাকা থেকে মিজানুর রহমান, একই মাসে দৌছড়ি ইউনিয়নের লংগদু মুখ থেকে ফরিদুল আলম, হুমায়ুন কবির, বরইচর এলাকা থেকে জালাল উদ্দিন, আবদুল কাদের, ২০ সেপ্টম্বর গর্জনিয়া ইউনিয়নের আবদুল আলী ও শামশুল আলম,

২৩ অক্টোবর বাইশারী পিএসপি রাবার বাগানের পাহারাদার আজিজুল হক, নুরুল আলম, আবদু শুক্কুর, ২৪ আগস্ট বাইশারী-ইদগাঁও সড়ক থেকে গাড়ি থামিয়ে ছাত্রলীগ নেতা এমকে রাশেদ, ব্যবসায়ী নিজাম উদ্দিন ও বাগান মালিক মৌ. হাবিবুর রহমান, ২০১৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি দৌছড়ি ইউনিয়নের লেদুর মুখ থেকে তামাক চাষি ছালেহ আহমদ ও রাজিব, একই বছরের ৩০ এপ্রিল ঈদগড় এলাকার চাইল্যাতলী হতে শাহ আলম ৫ মে রাঙ্গাঝিরি এলাকার মিজানুর রহমান, মটরবাইক চালক আবু বক্কর ছিদ্দিক ২১ নভেম্বর দৌছড়ি ইউনিয়নের বাঁকখালী থেকে নুরুল আজিম, মো. হোছাইন ১৭ ডিসেম্বর বাইশারী ইউনিয়নের আলিক্ষ্যং এলাকার আবুল বশর অপহৃত হয়। একই মাসে কাগজি খোলা থেকে ছৈয়দ বাবর অপহরণ হয়ে মুক্তিপণে ছাড়া পায়। ২০১৮ সালের ২০ জানুয়ারিতেও দৌছড়ি ইউনিয়নের লেদুর খাল নামক স্থান থেকে তামাক চাষি আবদুর রহিম, আবু ছৈয়দ, আবুল আজিজ ও শাহ আলম এবং সর্ব শেষ গত ১৭ এপ্রিল গভীর রাতে দৌছড়ি ইউনিয়নের লংগদুর মুখ থেকে তামাক চাষি সাইফুল ইসলাম (১৮) সহ গত ৪ বছরে

শতাধিক রাবার শ্রমিক, কৃষক, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, বিশ্ববিদ্যালয়-স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার ছাত্র, ইমাম, কারবারী, জনপ্রতিনিধি ও নারীকে অপহরণ করে আনুমানিক কোটি টাকার মুক্তিপণ আদায় করে আনোয়ার ও শাহিন বাহিনীর ৪০ ডাকাত।

এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্তি পুলিশ সুপার আলী হোসেন জানান, হত্যার হুমকির বিষয়টি তিনি শুনেছেন। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তিনি এ পার্বত্যনিউজকে আরও জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি ও বাইশারীর আটক হওয়া ডাকাত ও অপহরণকারীদের তিনি তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করেই আটক করেছেন। আরও করা হবে। আবু মুসাকে মাঠে রাখা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন