নাইক্ষ্যংছড়ির সাতগইজ্জা পাড়ার ৫ পরিবার অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের কাছে জিম্মি

বাইশারী প্রতিনিধি:

নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের সাতগইজ্জা পাড়ায় উপজাতি ও বাঙালি মিলে বসতি ছিল মাত্র সাত পরিবার। তাতে নামকরণ হয়েছিল সাতগইজ্জা পাড়া। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে সম্প্রীতির বন্ধনে বসবাস করে আসছিল পরিবার গুলো। তবে সাত পরিবারের মধ্যে আছে এখন পাঁচ পরিবার। এ পাঁচ পরিবার  কোন দিন দেখেনি অস্ত্রধারীরা অস্ত্র নিয়ে জিম্মি করে হুমকি-ধমকি দিতে। এতদিন নির্ভয়ে পাহাড়ে জুম চাষসহ কলা বাগান পরির্চযা করে আসছিল তারা। জুমের পাশাপাশি বিভিন্ন তরিতরকারি ও কলা বাজারে বিক্রি করে রোজি-রোজগার করে পরিবার পরিজন নিয়ে কোন রকম জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল তারা।

তবে গত এক সপ্তাহ যাবত ১০-১৫জনের একটি অস্ত্রধারী গ্রুপের কাছে পরিবার গুলো জিম্মি। ওইসব পরিবার গুলো জানে না এরা কারা? এরা কি পেশাধারী ডাকাত না অপহরণকারী? নাকি কোন নামধারী সংগঠনের সন্ত্রাসী? এদের পরিচয় বলতে পারছে না কেউ। এরা প্রাণের ভয়ে তিন কিলোমিটার দূরে গিয়ে এক সরকারি  প্রাইমারী স্কুলে অবস্থান নেয় উপজাতিয় চার পরিবার। এ পরিবার গুলোর একি প্রশ্ন, তাদের বাসস্থলে কবে যেতে পারবে? অব্যাহত যৌথ অভিযান কতটুকু সফল হচ্ছে?

আর এদিকে তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, উপজাতীয় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে চাক্ জাতি একেবারে সংখ্যালঘু । এরা অত্যন্ত শান্তি প্রিয় জাতি। এদের অর্থ যোগানের একমাত্র ভরসা জুমচাষসহ পাহাড়ে বাগান করে বিভিন্ন ফলাদি থেকে আয় রোজগার।

তবে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে সদর ইউনিয়নের সাতগইজ্জা পাড়াতে ১০/১৫জনের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের দেখে এরা আতঙ্কিত হয়ে তিন কিলোমিটার দূরে মধ্যম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয় নেয়। এখন ওই পরিবার গুলো কষ্টে জীবনযাপন করে যাচ্ছে সপ্তাহ ধরে। তাদের চোখে মুখে এখনো আতঙ্কের চাপ। এসব পালিয়ে আসা পরিবার গুলো বলতে পারছেনা অস্ত্রধারী গ্রুপটি কি ডাকাত না অপহরণকারী?

তবে হ্লা খাই চিং চাক্ জানান, আমার স্বামী চিং থোয়াই চাক্ কে জুমে গরু নিয়ে যাওয়ার সময় তার ব্যবহৃত মোবাইল কেড়ে নিয়ে বলে কোন ধরনের পুলিশ বিজিবিকে খবর দিলে তোমার নিঃশ্বাস একেবারে বন্ধ করে দেব। আর তুমি আমাদের জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা পাঠাবে। তোমার মোবাইল নম্বরে ফোন দিলে দিয়ে দিও। এরপর বেশ কয়েকবার ফোন করে বলে তোমরা সবাই পাড়া ছেড়ে চলে গেছ সেটা ঠিক করনি। তবে কোন রকম টাকার কথা বলেনি বলে জানান।

এক প্রশ্নের জবাবে হ্লা খাই চিং চাক্ আরও জানান, অস্ত্রধারী গ্রুপরা আমার স্বামীকে অপহরণ করে নিয়ে যেতে পারতো। এরা ছেড়ে দিল কেন? ডাকাত হলে আমাদেরকে ঘরে ঢুকে সব কিছু নিয়ে যেতে পারতো। যতক্ষণ পর্যন্ত অভিযান সফল না হয় আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াব? আমাদেরকে কে নিশ্চিত দিতে পারবে ওই অস্ত্রধারী লোকেরা যে আবার পাড়ায় আসবে না।

মৌজা হেডম্যান বাচিং চাক্ জানান, সদরের সাতগইজ্জা পাড়াটি ২০ বছরের জনবসতি পাড়া। তবে ঘনবসতি নয়। প্রথমে চাক্ সম্প্রদায় ও পরে বাঙালি মিলে মাত্র সাত পরিবারের বসবাস। এখন চার পরিবারসহ বাঙালি মাত্র এক পরিবার রয়েছে। পাড়ার কিছু দূরে রাবার বাগানে বাঙালির আরও এক পরিবারের বসবাস। ওই পাড়ার আশেপাশে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজনদের খাস পাহাড় দখলে আছেন। কেউ বাগান করেছেন কেউ আবার বাগান করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে ওই সব পাড়ায় আরও ঘনবসতি হলে হয়তো অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের আনাগোনা কমে যাবে। এসব গহীন অরণ্যে কোনদিন শুনি নাই এসব অস্ত্রধারী লোকের কথা। তবে যে ভাবে যৌথবাহিনী অভিযান চালাচ্ছে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা বেঁচে থাকার উপায় নেই।

সদর ইউপি চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল চৌধুরী জানান, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে নাইক্ষ্যংছড়ি সোনাইছড়ি সড়কে কিছু অস্ত্রধারী যুবক পথযাত্রীদেরকে জিম্মি করে নগদ টাকা, মোবাইলসহ অন্যান্য জিনিস পত্র ছিনিয়ে নেয়। সে সময় অস্ত্রধারীর কবলে শিকার হন সোনাইছড়ির ইউপি চেয়ারম্যান বাহাইন মারমাসহ ব্যবসায়ী ও গাড়িতে অবস্থানরত যাত্রী এবং চালকেরা। ওই ঘটনাটি জানাজানি হলে তাৎক্ষণিক পুলিশ বিজিবি অভিযান চালালে ওই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পালিয়ে যায়। পরদিন ১৬ ফেব্রুয়ারি ভোর সকালে খবর পায় সদরের সাতগইজ্জা পাড়ায় ওই অস্ত্রধারীরা আনাগোনা করছে। সেখানেও তাৎক্ষণিক পুলিশ অভিযান চালালে সেখান থেকেও গা ডাকা দেয় সন্ত্রাসীরা। তবে আতঙ্কে পালিয়ে আসা পরিবার গুলোকে আমরা সার্বক্ষণিক খবরা খবর নিচ্ছি। আপাততে ওইসব পরিবার গুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। আর এদিকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ঘটনার প্রেক্ষিতে অনুমান করা যাচ্ছে এরা পেশাধার ডাকাত।

নাইক্ষ্যংছড়ি থানা অফিসার ইনর্চাজ মো. আলমগীর শেখ জানান, আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। তবে পুলিশের পাশাপাশি সাধারণ পাবলিককের সহযোগিতা দরকার রয়েছে। আতঙ্কে পালিয়ে আসা পরিবার গুলোকে তাদের পাড়ায় স্বস্তিতে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা হবে বলে জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন