Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

নতুন লাইনের সংস্কার দেখিয়ে ৩৬ লাখ টাকা লোপাটের পাঁয়তারা

Kaukhali pdb xen corruption news pic-2-15-01-2017 copy

কাউখালী প্রতিনিধি:

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের অধীনে কাউখালী সাবস্টেশনের ৩৩ কেভির সম্পূর্ণ নতুন সংযোগ লাইন স্থাপনে ব্যয় হয়েছিল ২২ লাখ টাকার মতো। যদিও এখনো কাজটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উত্তরা এন্টারপ্রাইজ তাদের জামানতের অর্থও উত্তোলন করেনি। কিন্তু এরই মধ্যে বছর না পেরোতেই নতুন এ লাইনটির সংস্কার কাজ দেখিয়ে বিতরণ বিভাগ থেকে ভিন্ন ঠিকাদারকে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে ৩৬ লাখ টাকা।

অভিযোগ উঠেছে সরকারী অর্থ লোপাটের জন্যই রাঙ্গামাটি বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের অতি উৎসাহি নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ কান্তি মজুমদার ঠিকাদারের সাথে যোগসজস করে কাগজেপত্রে ২০ আইটেমে ৩১টি কাজ দেখিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ওই কার্যাদেশটি দিয়েছে।

শুধু তাই নয়, নতুন সঞ্চালন লাইনের ক্যাবল বদলানো হয়েছে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে। কিন্তু ঠিকাদারকে কাজটির কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে ৬ মাস পরে ডিসেম্বরে। আবার ঠিকাদার কাজ প্রায় শেষ করেছে দাবী করলেও প্রকৌশলী বলছে এখনো শেষ হয়নি। ইতিমধ্যে অত্যন্ত গোপনে বরাদ্ধের অর্থ উত্তোলনের তোরজোড় শুরু হলে বেঁকে বসে ভাণ্ডার রক্ষক। কার্যাদেশের শর্তানুযায়ি পুরনো মালামাল ভাণ্ডারে জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় নতুন মালামাল ইস্যু করার কাজটি শুধুমাত্র ‘কাগজেপত্রে’ দেখিয়ে ভাণ্ডার রক্ষককে স্বাক্ষর দিতে চাপ দেওয়ায় বিষয়টি ফাঁস হয়ে পড়ে। এখন দেওয়া হচ্ছে ভাণ্ডার রক্ষককে বদলীর হুমকিও।

৩০ দিনের মধ্যে কাজ সম্পন্নের সময় বেধে দিয়ে ৮ ডিসেম্বর ২০১৬ রাঙামাটি ভেদভেদির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স কাজী ইঞ্জিনিয়ার্স’র স্বত্ত্বাধিকারী কাজী নিজামকে কার্যাদেশটি দেন রাঙামাটি বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ কান্তি মজুমদার। যার স্মারক নম্বর- বিবি-রাংগা/সিবা-১৮/২০১৬/৫১৯, তারিখ-০৮/১২/২০১৬ খ্রিস্টাব্দ। ওয়ার্কঅর্ডারে বলা হয়েছে ৩৩ কেভি হাটহাজারী-রাঙ্গামাটি সঞ্চালন লাইন হতে রাণীরহাট-কাউখালী ইন-আউট ডাবল সার্কিট অংশের কন্ডাক্টর পরিবর্তন, পোল পরিবর্তনসহ আনুষাঙ্গিক সংরক্ষণ, মেরারমত ও পদ্ধতি উন্নয়ন কাজ। অথচ শুধুমাত্র তার (ক্যাবল) বদলানো ছাড়া কোনটিরই প্রয়োজন নেই বলে জানা গেছে।

লিমিটেড টেন্ডার মেথড দেখিয়ে সর্বনিম্ন ৩৫,৯,৯৯৭২.৫০ টাকা দর দেখানো হয়েছে। কথিত মূল্যায়ন কমিটির সুপারিশে চট্টগ্রাম বিউবো বিতরণ দক্ষিণাঞ্চল’র প্রধান প্রকৌশলী প্রকল্পটি অনুমোদন করেছে। একাধিক ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করে, গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার আর উন্মুক্ত টেন্ডার হলে ব্যাপক ঠিকাদার অংশ নিতো। এছাড়া সত্যিকারভাবে কথিত কাজটি করা হলেও সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকায় সম্পন্ন করা যেতো। এতে সরকারের আরও ৩১ লাখ টাকা সাশ্রয় হতো।

সরেজমিন ঘটনাস্থল ঘুরে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৬ জুলাই মাসে ১২৪টি পোলের শুধুমাত্র ৬টি ডক তার (ইন্সুলেটেড ক্যাবল) বদলিয়ে এসিএসআর ক্যাবল (উন্মুক্ত তার) পুন.স্থাপন করে মেসার্স কাজী ইঞ্জিনিয়ার্স। কার্যাদেশ পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে সিডিউলের ৭নম্বর আইটেমে এ ৬টি ডক তারের মোট দৈর্ঘ্য উল্লেখ আছে ৪৫.৫ কিলোমিটার, আর এজন্য বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে ১লাখ ২৭ হাজার চারশত টাকা।  আর খুলে ফেলা এসব ইন্সুলেটেড ক্যাবল পথে পথে পড়ে আছে অরক্ষিতভাবে। বিদ্যুৎ বিভাগের ভাণ্ডারে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। যে কোন সময় এসব মূল্যবান সামগ্রি চুরি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কাজের অগ্রগতি নিয়ে কথা হয় উপজেলার ছিদ্দিক-ই আকবর দাখিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক তালুকদার, বেতছড়ির আমির উদ্দিন, ইউসুফ, গোদারপাড়ের সিরাজ ড্রাইভার, ব্যবসায়ি বেলাল, খামার পাড়ার ব্যবসায়ি শহীদের সাথে। তারা জানায় ২০১৬সালের জুলাই মাসে শুধু পুলের তার (ক্যাবল) পরিবর্তন করা হয়েছে। এছাড়া অন্য কোন কাজ করতে কেউ আসেনি।

মেসার্স কাজী ইঞ্জিনিয়ার্স’র স্বত্ত্বাধিকারী কাজী নিজাম উন্মুক্ত টেন্ডারে কাজ পেয়েছেন দাবী করে বলেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওয়াকঅর্ডার পাওয়ার ৬ মাস আগেই কাজ করে রেখেছি। দু-একটা ছাড়া ইতিমধ্যে কাজও প্রায় শেষ করেছি। যদিও উন্মুক্ত টেন্ডারে কাজ পাওয়ার অনিশ্চয়তা থাকা সত্বেও কিভাবে ৬ মাস আগেই কাজ করেছেন এমন প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি তিনি। বলেন, কার্যাদেশ না পাওয়ায় মালামাল ভাণ্ডারে জমা দিতে পারিনি, পথেই রাখতে হয়েছে।

ভাণ্ডার রক্ষক হুমায়ুন কবীর রতন বলেন, আসলে পুরো প্রক্রিয়াটি গোপনেই হচ্ছিলো, আমি মালামাল গ্রহণ ও ইস্যুর কাগজে স্বাক্ষর করলেই কাগুজে প্রকল্পটি সম্পন্ন দেখানো হতো। না করায় এখন বদলীর হুমকি দেওয়া হচ্ছে নানা মহল থেকে।

সদ্য নির্মিত ৩৩ কেভি সঞ্চালন লাইনের তদারকি কর্মকর্তা ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের সহাকারী প্রকৌশলী নুরুল আলম। রবিবার দুপুরে তিনি জানান, কাজ কমপ্লিট করে ডিভিশনকে হস্তান্তর করে দিয়েছি। বারবার ক্যাবল ছিড়ে পড়ায় ৩৩ কেভি সঞ্চালন লাইনের মেইন কাজ হলো ক্যাবল (তার) পরিবর্তন। কাজ ও বরাদ্ধ দেওয়া নিয়ে নতুন সিডিউল না দেখে কোন মন্তব্য করতে রাজি না হওয়া এ প্রকৌশলী তার অফিসে দেখা করার অনুরোধ জানায়।

উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী চিংহলা মং মারমাকে কাজটির ভারপ্রাপ্ত প্রকৌশলী নিযুক্ত করা হয়েছে। শনিবার পৌনে তিনটার দিকে তার সেল ফোনে কথা হলে তিনি এখনো প্রচুর কাজ বাকি আছে বলেই ফোনটি ধরিয়ে দেন নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ কান্তি মজুমদারকে।

নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ কান্তি মজুমদার জানান, আগে প্রজেক্ট থেকে কাজটি করা হয়েছে। এখন প্রয়োজন হওয়ায় আমি বিতরণ বিভাগ থেকে নতুন বরাদ্ধে কার্যাদেশ দিয়েছি। শুধু তার পরিবর্তন নয়, সিস্টেম ডেভেলপমেন্টের জন্য আনুষাঙ্গিক কাজ হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাজ এখনও শেষ হয়নি। বিদ্যুৎ জরুরী বিভাগ হওয়ায় অনেক কাজ আগাম করার নিয়ম আছে। জামানত থাকাবস্থায় ২২ লাখ টাকায় সম্পন্ন হওয়া সম্পূর্ণ নতুন লাইনে ঘটা করে কেন ৩৬ লাখ টাকার সংস্কার কাজ করতে হবে প্রশ্নের জবাবে তিনি এ প্রতিবেদককে তার অফিসে দেখা করতে বলেন।

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন