‘ধারালো দা দিয়ে একের পর এক রোহিঙ্গা জবাই করা হচ্ছে’

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

রাখাইন রাজ্যের এক মগ জমিদারের নাতি খাইরুল আমিন। বেশ কিছুদিন আগেও নওমুসলিম দাদার স্বজনদের ঘরে তাঁর ছিল যাতায়াত।

ছিল নাওয়া-খাওয়া। ধর্ম ছিল যাঁর যাঁর। আত্মীয়তার বন্ধন কোনো দিনই ছিন্ন হয়নি। কিন্তু আকস্মিক এমন যে কী হল! গত ২৫ আগস্ট থেকে মগ সম্প্রদায়ের লোকজনই সবচেয়ে বেশি ক্ষেপে যান রোহিঙ্গাদের ওপর …..

শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত একজন নেত্রী কিভাবে ঘর পুড়ে দেন? এমন একজন নেত্রী কি করে হিন্দু ও মগের (রাখাইন) মাথায় টুপি, গায়ে পাঞ্জাবি এবং মুখে নকল দাড়ি লাগিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন? অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী একজন নেত্রী কি করে এতো মিথ্যা কথা বলেন?

এগুলো কোনো ক্ষুব্ধ রোহিঙ্গার প্রশ্ন নয়। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা ধর্মান্তরিত একটি মুসলিম পরিবারের সদস্য খাইরুল আমিন (৫০) নোবেল বিজয়ী অং সান সুচিকে নিয়ে রেখেছেন এসব প্রশ্ন।

খাইরুলের দাদা মংতাদু ও দাদি মামে খাইন ছিলেন রাখাইন রাজ্যের ফকিরাবাজার গ্রামের বিখ্যাত জমিদার। স্বামী-স্ত্রী দুজনই ইসলাম ধর্মের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হন তাঁরা। জমিদার মংতাদু নামধারণ করেন আবদুর রহমান।

আর তাঁর স্ত্রী মামে খাইনের নাম রাখা হয় আমিনা খাতুন। ঘটনাটি অনেক বছর আগের।

রাখাইন রাজ্যের সেই মগ জমিদারের নাতি খাইরুল আমিন। বেশ কিছুদিন আগেও নওমুসলিম দাদার স্বজনদের ঘরে তাঁর ছিল যাতায়াত। ছিল নাওয়া-খাওয়া। ধর্ম ছিল যাঁর যাঁর। আত্মীয়তার বন্ধন কোনো দিনই ছিন্ন হয়নি।

কিন্তু আকস্মিক এমন যে কী হল! গত ২৫ আগস্ট থেকে মগ সম্প্রদায়ের লোকজনই সবচেয়ে বেশি ক্ষেপে যান রোহিঙ্গাদের ওপর। এরাই ধারালো দা নিয়ে একের পর এক রোহিঙ্গা মুসলিমদের জবাই করছে।

খাইরুল আমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সে এক অবাক কাণ্ড। আমারই বাবার আপন চাচাতো ভাই (মগ সম্প্রদায়) আমাকে দেখেই না চেনার ভান করে বসল। উল্টো চোখ রাঙানো চাহনি। আমারই সামনে দা দিয়ে কোপাতে থাকল এক রোহিঙ্গাকে। আমি আর দেরি করিনি। তখনই বুঝে গেছি, এক মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তল্পিতল্পা নিয়ে স্ত্রী রোকেয়া আর এক কন্যা ও তিন ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। ’

টানা চার দিন তিনি পরিবারসহ হেঁটে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আশ্রয় নেন উখিয়ার কুতুপালং শিবিরে। খাইরুল আমিনের মিয়ানমারের জাতীয়তা সনদ রয়েছে। তাঁর পূর্বপুরুষ মগ (রাখাইন)। সেই সূত্রে তাঁদের পরিবারের সবারই রয়েছে জাতীয়তা সনদ। তাঁর কষ্ট এখানেই। জাতীয়তা সনদ নেই বিধায় রোহিঙ্গাদের ভিটাচ্যুত করা হচ্ছে। কিন্তু তাঁর তো সনদ রয়েছে। তাই তাঁকে কেন ভিটাচ্যুত করা হল?-এমন প্রশ্নের জবাব খাইরুল আমিন নিজেই দেন। বলেন, ‘বাস্তবে মুসলিম বলতে রাখাইনে কাউকে রাখা হবে না। ’

‘মনে কষ্ট পাচ্ছি কেবল মিয়ানমারের প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল আউন সানের কন্যা অং সান সুচির জন্য। যে অং সান সুচির জন্য রোহিঙ্গারা আন্দোলন সংগ্রামে নিজেদের জান কুরবান দিয়েছে সেই সুচি কি করে রোহিঙ্গাদের ওপর এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েন?-যোগ করেন খাইরুল আমিন। তিনি বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যের হত্যা-নির্যাতনের ঘটনা রোহিঙ্গারাই করছে-এ রকম মিথ্যা অপপ্রচার চালানোর জন্য সুচির নির্দেশে হিন্দু এবং মগের মাথায় টুপি পরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের গায়ে পরিয়ে দেওয়া হচ্ছে পাঞ্জাবিও। এরপর তাঁদের দিয়ে ঘরে আগুন ধরানো হচ্ছে। এ রকম ছবি তুলে বিদেশিদের দেখানো হচ্ছে-রোহিঙ্গারাই নিজেদের ঘরে আগুন দিয়ে তাঁরা বাংলাদেশে পালিয়ে যাচ্ছে। ’

খাইরুলের আশা, রাখাইনের এ নির্মমতা ও বর্বরোচিত ঘটনার জন্য একদিন না একদিন অবশ্যই অং সান সুচির বিচার হবে।

সূত্র: কালের কন্ঠ

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন