দুই আঞ্চলিক সংগঠনের বিরোধে বলির পাঁঠা পানছড়ির প্রান্তিক পাহাড়ি ও ব্যবসায়ীরা
পানছড়ি প্রতিনিধি:
রোববার পানছড়ি উপজেলা বাজারের হাটবার। এই দিনে বাজারে জমে উঠে, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের হাজার হাজার লোকের মিলনমেলা ঘটে। কিন্তু বিগত মাস খানেক ধরে পাহাড়ের আঞ্চলিক দুটি দলের বিরোধের জেরে হাট বসতে পারছে না চার সপ্তাহ ধরে। ফলে বলির পাঁঠা হচ্ছে প্রান্তিক পাহাড়ি ও বাজার ব্যবসায়ীরা।
রোববার (১০ জুন) এই হাটে বাঙ্গালী সম্প্রদায়ের কয়েকজন আসলেও পাহাড়ী সম্প্রদায়ের কোন ক্রেতা-বিক্রেতা আসতে পারছে না বাজারে প্রাণভয়ে। যার ফলে সাধারণ নিরীহ পাহাড়ীদের ভোগান্তির পাশাপাশি হতাশার চিহ্ন ভেসে উঠেছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কপালে।
গ্রামীণব্যাংক, আশা, পদক্ষেপ, ব্র্যাকসহ বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে লোন নিয়ে সাপ্তাহিক কিস্তি দিতে বিপাকে পড়েছে বাজার ব্যবসায়ীরা। এদিকে আমদানি-রপ্তানি না থাকার ফলে ঈদের বিকি-কিনিতেও ক্রেতার সংখ্যা নগণ্য।
রোববার সকাল সাড়ে ৯টায় পানছড়ি বাজারের চারপাশ এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, বাজার বর্জনের মূল চিত্র। কেউ কেউ তখন দোকানও খুলেনি। দুর-দুরান্তের পাহাড়িরা বাজারে নেই বললেই চলে। কি কারণে পানছড়ি বাজারের এই বেহাল অবস্থা- এ ব্যাপারে সবাই মুখ খুলতে নারাজ।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, পানছড়ি বাজারের শুকতারা বোডিংয়ে কতিপয় পাহাড়ী লোক অবস্থান করছে, তাদের বাজার থেকে বের করে দিতে ১৯ মে ইউপিডিএফ চাপ প্রয়োগ করে। নচেৎ ২০ মে থেকে বাজার বর্জনের ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণার চতুর্থ সপ্তাহ পার হলেও সমাধানের কোন লক্ষণ আজও কেউ দেখছে না।
শুকতারা বোডিং সূত্রে জানা যায়, এটা একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। পাহাড়ি-বাঙ্গালী সকল সম্প্রদায়ের লোকই এখানে আসে।
পানছড়ি বাজার উন্নয়ন কমিটি সূত্রে জানা যায়, চার সপ্তাহ ধরে পাহাড়িরা বাজারে না আসায় বাজার জমছে না। যার ফলে ব্যবসায়ীরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বসে এটার একটা সুরাহা করে জেলার প্রাচীনতম বাজারটিকে রক্ষা করা দরকার।
অনেকের দাবী, উপজেলার প্রধান সড়কের বিভিন্ন এলাকায় এখন বাজার ফান্ডের অনুমতি ছাড়া অবৈধভাবে হাট জমে উঠা শুরু করেছে। বাজার ফান্ডের কোন ভুমিকা এতে দেখা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারেও বাজার ফান্ডসহ সকলকে ভূমিকা রাখা দরকার।
কয়েকজন পাহাড়িদের সাথে আলাপকালে তারা জানায়, দুর্গম এলাকায় কিছু পাহাড়ি নিজেদের উৎপাদিত পণ্যাদি বিক্রি করে তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় তেল, শুটকি, বিড়ি-সিগারেট, চিনি, লবন, তামাকপাতা কিনে নিয়ে যেতেন। তাদের ভোগান্তিটাই বেশী।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম জানান, বাজার বর্জন একটি গর্হিত কাজ। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে কিভাবে বাজারের পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যায় সে ব্যাপারে কাজ চলছে।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলো বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলায় উভয় দলের বেশ কয়েকজন নিহত হয়।