দীপঙ্কর তালুকদার জুম্ম জাতির কুলাঙ্গার- বাঘাইছড়িতে সন্তু লারমা
স্টাফ রিপোর্টার:
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি জেএসএস’র সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দীপঙ্কর তালুকদারকে জুম্ম জাতির কুলাঙ্গার আখ্যা দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে এখন ১৪ দলের নামে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা চলছে, তাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সু-দৃষ্টি কামনার জন্য দীপঙ্কর মুখে যা আসছে তাই বলছে।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্রগ্রাম জনসংহতি সমিতি চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষে যে অসহযোগ আন্দোলনে ডাক দিয়েছে তা অব্যাহত থাকবে।১৯৯৭ সালে চুক্তি সম্পাদন হলেও স্বাধীনতার ৪৫ বছর ধরে পার্বত্য চট্রগ্রামে সেনা শাসন চলছে, অপারেশন উত্তোরণের নামে সেনাবাহিনী জুম্ম জনগনের উপর শাসন করছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, পাহাড়ে অব্যাহতভাবে ভূমি বেদখলের মহাৎসব চলছে। বহিরাগত, বেসরকারি, সরকারি ও শাসক গোষ্ঠীরা নিরীহ পাহাড়িদের ভূমি দখল করে চলেছে। সম্প্রতি সরকার বিজিবি ক্যাম্প স্থাপন ও পর্যটনের নামে ভূমি দখল চালাচ্ছে। সম্প্রতি দীঘিনালার বাবুছড়া এলাকায় বিজিবি ক্যাম্পের নামে নিরীহ জুম্মদের ভূমি দখল করে নিয়েছে। এতে প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেক পাহাড়িদের মারধর, মামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছে।
তিনি বলেন,ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি আইন কমিশন করা হলে বহিরাগত ও শাসক গোষ্ঠীদের ভূমি দখল বন্ধ হবে। কিন্তু সরকার ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি আইন কমিশন পাস করছে না।
‘পার্বত্য চট্রগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধ হোন: অসহযোগ আন্দোলন জোরদার করুন’- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে বৃহস্পতিবার বাঘাইছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গনে পার্বত্য চট্রগ্রাম জনসংহতি সমিতি জেএসএস বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখা আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পর এই প্রথম বাঘাইছড়ির এই মাঠে সন্তু লারমা বক্তব্য দেন।
পাহাড়ীদের তিন গ্রুপই অঘোষিতভাবে এই সমাবেশে যোগ দেয়। ফলে সমাবেশটি মহাসমাবেশে রূপ নেয়।
বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখা পার্বত্য চট্রগ্রাম জনসংহতি সমিতি’র সভাপতি শ্রী প্রভাত কুমার চাকমা’র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্রগ্রাম জনসংহতি সমিতি’র সভাপতি ও পার্বত্য চট্রগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদেও চেয়ারম্যান শ্রী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা( সন্তু লারমা)।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে পার্বত্য চট্রগ্রাম জনসংহতি সমিতি সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা,পার্বত্য চট্রগ্রাম জনসংহতি সমিতি সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও পার্বত্য চট্রগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য কে এস মং মারমা, এম.এন. লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন এর সভাপতি বিজয় কেতন চাকমা, পার্বত্য চট্রগ্রাম জনসংহতি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য উদয়ন ত্রিপুরা বক্তব্য রাখেন।
বাঘাইছড়ি উপজেলা পার্বত্য জনসংহতি সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক ও বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বড়ঋষি চাকমা এ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
এসময় বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান দীপ্তিমান চাকমা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সুমিতা চাকমা, উপজেলা জনসংহতি সমিতির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সন্তু লারমা আরও বলেন, ১৯৯৭ সালে ২ ডিসেম্বর এ বাঘাইছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অস্ত্র জমাদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছি। পার্বত্য চুক্তিকে সম্মান জানিয়ে এই মাঠে জনসংহতি সমিতির একটি অংশ অস্ত্র জমা দেন। নতুন জীবন, সুন্দর জীবন ও নিরাপদ জীবন পাওয়া আশায় এ কাজ করা হয়েছে।
জেএসএস সভাপতি বলেন, কিছু বিপদগামী জুম্ম নিজের স্বার্থে চুক্তি বিরোধী কাজ করছে। তাদের অনুরোধ করা হচ্ছে এখনো সময় আছে ফিরে আসেন। আপনারা যদি জাতির ও চুক্তি পক্ষে কাজ করতে না পারেন তাহলে চুপ করে থাকবেন। না হলে জুম্ম জাতি আপনাদের ক্ষমা করবে না।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য অব্যাহত অসযোগ আন্দোলন চলছে। অসযোগ জোরদার করার জন্য প্রয়োজনে হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া হবে। প্রয়োজনে জুম্মজাতির রক্ত দিয়ে হলেও পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করা হবে। বক্তারা এবার থেকে জনসংহতি সমিতি ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা ও সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার ঘোষণা দেন।
অনুষ্ঠানের শেষে বিকাল ৪ ঘটিকায় শিজক কলেজ প্রাঙ্গণে গণসংগীত পরিবেশন করেন রাঙামাটির গিরিসুর শিল্পী গোষ্ঠী।