দীঘিনালায় হলুদের ফলন ভালো: দর নেই বাজারে
দীঘিনালা প্রতিনিধি:
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় হলুদের ভালো ফলন হলেও ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা। ইতোমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হলুদ তোলার কাজ শুরু হয়েছে। কাঁচা হলুদ বাজার তোলছেন স্থানীয় হলুদ চাষীরা। হলুদের বাম্পার ফলন হওয়ায় লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও বর্তমান বাজার মূল্যে হলুদ চাষীরা হতাশ। দীঘিনালা উপজেলার প্রায় সহস্রাধিক উপজাতি পরিবার জুম চাষের উপর নির্ভরশীল। তারা একসাথে ধান, আদা, হলুদ, মারফা, তিল চাষ করে থাকেন। এবার অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করায় হলুদের ফলন বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ।
জানা যায়, উপজেলার সীমানা পাড়া, বুদ্ধমা পাড়া, নয়মাইল, মেরুং, চোঙড়াছড়ি, আলীনগর, পোমাংপাড়া এলাকার পাহাড়ি পতিত জমিতে হলুদের আবাদ করা হয়েছে। গত বছর মোট ৬ শত ০৩ হেক্টর পাহাড়ি পতিত জমিতে হলুদ চাষ করা হয়। এসব জমিতে মোট ০২ হাজার ২শত ৯১ দশমিক ৪মেট্টিক টন হলুদ উৎপাদিত হয়। এ বছর ৬ শত ৩০ হেক্টর পাহাড়ি পতিত জমিতে হলুদ চাষ করা হয়। যা গত বছরের চাইতে ২৭ হেক্টর বেশী। তবে এসব জমির হলুদ এখনো উত্তোলন চলছে।
ভিতর তারাবুনিয়া মায়াজয় কার্বারী জানান, গত বছর হলুদের দাম বাড়তি থাকায় আমরা এবার আমাদের সমিতির উদ্যোগে ১২ একর জমিতে হলুদ চাষ করেছি। হলুদের বাম্পার ফলন হলেও দাম একেবারে কম, যার ফলে লোকসানের আশঙ্কা করছি।
সীমানা পাড়ার গ্রামের হেমত্রিপুরা জানান, এ গ্রামে ২৫ পরিবার বাস করে। সবাই জুমের মধ্যে ধান, ভূট্টা, হলুদ এক সাথে আবাদ করি। হলুদ চাষে তেমন কোনো শ্রম দিতে হয় না। তাই সবাই হলুদ চাষ করেছে। কিন্তু বাজারে হলুদের দর একেবারেই কম। বর্তমান বাজারে প্রতি মন হলুদ চার হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে করে পুঁজি উঠানোই কঠিন হয়ে পড়বে।
এক পাইকারী ক্রেতা মো. আবুল খায়ের জানান, বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানী গুলো হলুদ কেনার কারণে হলুদের দাম বাড়তি থাকে। কিন্তু এবার ভারত থেকে অবৈধ পথে হলুদ আসার কারণে আমাদের দেশের হলুদের দর কমে গেছে। কারণ ভারতের হলুদের দাম একেবারেই কম।
তিনি আরও জানান, ভারত থেকে হলুদ আসা বন্ধ করতে পারলেই আমাদের দেশের হলুদের দাম আবারো বাড়বে। বর্তমানে আমরা শুকনো হলুদ চার হাজার টাকা মণ ক্রয় করে আসছি। তবে তিনি আরও বলেন, অন্যান্য বছরে এ হলুদ প্রায় আট হাজার টাকার মতো ছিল।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা এম.এম. শাহ নেয়াজ জানান, অন্যান্য বছরের চাইতে এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় হলুদের ফলন খুব ভালো হয়েছে। পাহাড়ে ডিমলা, সুন্দরী জাতের হলুদের চাইতে পাটনাইয়া জাতের হলুদ খুব ভালো জন্মে। পাটনাইয়া হলুদ গড় উৎপাদন প্রতি হেক্টরে ১৪ মে. টন। তিনি আরও জানান, কম পুঁজি বিনিয়োগ করে অধিক ফলন হওয়ায় এখানকার কৃষকরা দিন দিন হলুদ চাষের দিকে ঝুঁকছে। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে কৃষকরা হলুদ চাষ থেকেও সরে আসবে।