দীঘিনালায় উৎসব মুখর পরিবেশে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী বৌদ্ধমেলা
দীঘিনালা প্রতিনিধি:
খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় উৎসব মুখর পরিবেশে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ মেলা। বোয়ালখালী দশবল বৌদ্ধ রাজ বিহারের শতবর্ষপূর্তি ও পার্বত্য চট্টল বৌদ্ধ অনাথ আশ্রমের সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে এ মেলার আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে বুধবার সকাল ৮ টায় উপজেলার লারমা স্কোয়ার থেকে বের করা হয় বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা মঙ্গল শোভায় শান্তির পায়রা উড়িয়ে শতবর্ষপূর্তি ও সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। শোভাযাত্রায় বৌদ্ধ ধর্মালম্বী নারী পুরুষ শিশু কিশোরসহ নানা শ্রেণী পেশার মানুষ অংশ গ্রহণ করে।
শোভাযাত্রা শেষে দেশ ও জাতির শান্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনাসহ রাজ বিহার মাঠে অনুষ্ঠিত হয় ধর্মীয় সভা। কাচালং শিশু সদনের পরিচালক তিলোকানন্দ মহাস্থবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ১৯১৬ খ্রি: তৎকালীন রাজা ভূবন মোহন রায় ভগবান গৌতম বুদ্ধের মানবতা বাণী সমূহ প্রচারের মাধ্যমে অহিংস সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ঐতিহ্যবাহী বোয়ালখালী দশবল বৌদ্ধ রাজ বিহার। আজকের এ আয়োজনে সকল সম্প্রদায়ের মানুষের উপস্থিতি প্রমান করে যে লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়ে রাজা ভূবন মোহন রায় এ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তার সে লক্ষ্য উদ্দেশ্য বাস্তবে প্রতি ফলন ঘটেছে।
আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে আমাদের এ দেশে ধর্ম যার যার উৎসব সবার। তিনি বলেন, সব ধর্মেই শান্তি সম্প্রীতি এবং অহিংসার কথা বলা হয়েছে। তাই আমরা প্রত্যেকে যদি স্ব স্ব ধর্মীয় নির্দেশনা পালন করি তাহলে সমাজে হিংসা হানাহানি সংঘাত সন্ত্রাস কিছুই থাকবে না। পরিশেষে তিনি পারষ্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস বজায় রেখে স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও জাতির সামগ্রীক স্বার্থে কাজ করার জন্য উপস্থিত সকলের প্রতি আহ্বান জানান। এসময় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নব কমল চাকমা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মো. শহীদুল ইসলাম, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য আশুতোষ চাকমা, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হাজী মো. কাশেম, দীঘিনালা ইউপি চেয়ারম্যান চন্দ্র রনজন চাকমা ও রাজ বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি খোকন বিকাশ চাকমা বক্তব্য রাখেন।
দিনব্যাপী বিহার প্রাঙ্গনে বুদ্ধপূজা, সিবলী পূজা ও পঞ্চশীল গ্রহণসহ নানা প্রকার ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে সন্ধ্যায় হাজার প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও ফানুস উড়ানো হয়। এদিকে প্রথম দিনেই জমে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ মেলা। মেলা প্রাঙ্গন ঘুরে দেখা যায় নানা শ্রেণী পেশার দর্শনার্থীর ভীর। মেলায় আসা বাঘাইছড়ি গ্রামের সীমা চাকমা, পুষ্পিকা চাকমা ও মধ্য বোয়ালখালীর লোচন দেওয়ান এবং মিলনপুরের ত্রিদিপ দেওয়ান জানান, অনেক বছর পর বৌদ্ধ মেলায় আসতে পেরে খুব ভাল লাগছে। পার্বত্য শান্তিচক্তির পর এবারই প্রথম উৎসব মুখর পরিবেশে বৌদ্ধ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলেও জানান তারা। এদিকে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য রাখা হয়েছে মনোঙ্গ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও যাত্রাপালার ব্যবস্থা।