দর্শনার্থীভারে মুখরিত পানছড়ি রাবার ড্যাম

R DAM-PIC

শাহজাহান কবির সাজু, পানছড়ি, খাগড়াছড়ি:

পানছড়ি উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণ-পূর্বে বরাবর প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে হাতের ডানে পঞ্চাশ গজ দূরে গেলেই নজরে আসে চোখ জোড়ানো ও মন মাতানো শান্তিপুর রাবার ড্যাম। ভারত সীমান্ত থেকে দু’পাশে কাঁশবন বেষ্টিত চেংগী নদীর শ্রোতধারা খাগড়াছড়ির বুক চিরে সাপের মতো এঁকে বেঁকে গিয়ে পতিত হয়েছে চট্ট্রলার বিখ্যাত কর্ণফুলীতে। এই চেংগীর দু’পার্শ্বে বোরো’র মাঠে সবুজের প্রাণবন্ত ঢেউয়ের নাচন, বাঁশঝাড় ও সবুজ অরণ্যের মাঝে পাখির কল-কাকলি আর শিল্পীর নিপুন হাতের কারিগরি আছড়ে তৈরী রাবার ড্যাম।

বর্ষবরণের দিন থেকেই দারুণ জমেছে ড্যাম এলাকা ও তার চারিপার্শ্ব। ড্যামের প্রাণবন্ত দৃশ্য উপভোগ করতে দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভীড় ক্রমে বেড়েই চলেছে। সদ্য শেষ হওয়া এসএসসি পরীক্ষার্থীরা দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে উপভোগ করতে। মা-বাবা, ভাই-বোন ও বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে ড্যাম এলাকায় বৈশাখ উপভোগের দৃশ্য পানছড়িকে যেন সাজিয়ে তুলেছে এক অপরূপ সাজে।

প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখরিত করে তোলা পানছড়ি শান্তিপুরস্থ রাবার ড্যাম এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, টমটম, মাহেন্দ্র, সিএনজি ও মোটরসাইকেলে চড়ে আসা দর্শনার্থীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে ড্যামের এপার-ওপার। কেউ কেউ কাঁটা তারের বেষ্টনি পার হয়েও চেংগীর পানিতে নিজেকে বিলিয়ে দিচ্ছে বর্ষবরণের আমেজে।

রাবার ড্যাম বেয়ে ঝর্ণার পানি পড়ার দৃশ্য দেখতে ব্রীজের উপর দর্শনার্থীর উঁকি-ঝুঁকি। চেংগী নদীর মাঝ বরাবর ব্রীজের নিচে বিশালাকার রাবারের ড্যামটি যখন ফুলে উঠছে তখনই যেন এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। একদিকে পানি জমছে অন্যদিকে ড্যামের উপর দিয়ে ঝর্ণার মত কল কল আওয়াজে পানি বের হচ্ছে এই দৃশ্যটিই নয়নাভিরাম যেন এক অপরূপ সৌন্দর্যের পানি খেলা। আসলেই উপভোগ করার মতো একটি দৃশ্য।

কাঁটা তারের বেষ্টনি উপেক্ষা করে নিচে নেমে আসা দর্শনার্থী অংক্রাপু মারমা, লিলিপ্রু মারমা, আনুচিং মারমা, পানছড়ি উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন, ও পানছড়ি বাজারের কুলিং কর্ণার মালিক কাজল জানান, ঝর্ণার পানিতে নিজেদের বিলিয়ে দিতে খুবই ভালো লাগছে।

বুট-বাদাম খেতে খেতে এপার-ওপার ঘুরে বেড়াচ্ছে আবাল-বৃদ্ধ ও বনিতারা। তাছাড়াও তেতুল, বরইয়ের আচার বিনিময় ও রসালো গল্পের মাঝে যুগলেরা পার করছে একান্ত মধুর সময়। সদ্য এসএসসি পরীক্ষা শেষ করা অনেক ক্ষুদে দর্শনার্থী জানান, খুবই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য তাই উপভোগ করতে এসেছি।

খাগড়াছড়ি সদর থেকে আসা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রূপম চাকমা, সোহেল চাকমা এই প্রতিবেদককে জানান, ভাই-বোন নিয়ে উপভোগ করতে এসেছি। তাদের খুব ভালো লাগছে এবং সুযোগ পেলেই উপভোগ করতে ছুটে আসবে বলেও জানায়।

ছোট ছোট কোমলমতি শিশুদের ভীড়ের মাঝে আইসক্রীম বিক্রেতা আবুল হাসেম জানান, ড্যাম এলাকায় বিকেলে আইসক্রীম বিক্রি খুব জমে উঠে। প্রতিদিন গড়ে সে ৩০০ থেকে ৪০০ আইসক্রীম বিক্রি করে বলে মুচকি হেসে জানায়।

এই রাবার ড্যাম শুধু পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে নয়, এর মাধ্যমে কৃষকেরা কৃষি কাজে যেমন সুফল ভোগ করবে, তেমনি মাছ চাষেও প্রচুর সাফল্য আসবে বলে ধারণা করছেন পানছড়ির অভিজ্ঞ মহল। এখনো পানছড়ির দৃষ্টিনন্দন শান্তিপুরের রাবার ড্যামে যারা ঘুরেননি তারা একবার আসুন এ দর্শনীয় স্থানটিতে। নিশ্চিত বলা যায় স্থানটি ভ্রমণ পিপাসুদের পিপাসা মেটাতে সক্ষম হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন