থানচিতে ইউপি তথ্য কেন্দ্রগুলোতে মিলছেনা সেবা

থানচি প্রতিনিধি:

তথ্য সেবা আইন আমার পকেটে, আর ইউনিয়নের সকল প্রকার তথ্য সাংবাদিকদের দিতে হবে এমন কোন আইন নাই বলে জনসম্মূখে প্রতিবেদককে তাড়িয়ে দিলেন থানচি উপজেলার ৪নং বলিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সাবেক সভাপতি বাশৈচিং মারমা।

দেশের সকল ইউনিয়নের ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র থাকলে এই ইউনিয়ন তথ্য কেন্দ্রে কোন সেবা পাচ্ছেন না এখানকার সাধারণ জনগণ। সেবা না পাওয়ার কারণ হিসেবে ইউপি চেয়ারম্যান এবং সচিবের উদাসীনতা আর অদক্ষতাসহ আত্মীয়তা ও রাজনৈতি বৈরীকে দায়ী করছে সতেচন নাগরিক।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগ নিয়ে ২০১১সালে ২৫শে ফেব্রুয়ারি দেশে অবস্থিত ইউনিয়ন পরিষদে তথ্য সেবা কেন্দ্র প্রধানমন্ত্রী যশোরে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের ৫ বছর পরেও বান্দরবানের থানচি উপজেলায় ৪টি ইউনিয়নে তথ্য সেবা কেন্দ্র থেকে সাধারণ মানুষ তথ্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত রয়েছে। যদিও সরকারি ভাবে প্রয়োজনীয় সকল উপকরণ এই সব ইউনিয়ন পরিষদে বরাদ্দ দেওয়া হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি ও জেলা প্রশাসক অনেক বার থানছি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিদর্শন কালে কার্যালয় খোলা দেখলে ও সেখানকার সেবা কর্যক্রম দেখে জনসম্মুখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) এর কোন কর্মকর্তা এই পর্যন্ত পরিদর্শনে এখানে আসেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা ।

থানছি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে তথ্যকেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। ওই বছরের নভেম্বর মাসে সরকারি ভাবে পুর্নাঙ্গ তথ্য সেবা প্রদানে প্রয়োজনীয় সামগ্রী যথাসময় সরবরাহ করা হয়েছে। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন সাথে কথা হলে তিনি বলেন, নেটওয়ার্কের কারনে আজ পর্যন্ত কোন ইউনিয়নের তথ্য সেবা কেন্দ্র পুর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি।

কিন্তু ওয়েবপোর্টাল চালু থাকলেও সেবা না পাওয়ার কারণ হিসেবে চেয়ারম্যান ও সচিবদের এলাকায় অবস্থান না করা এবং উদাসীনতা অদক্ষতা, আত্মীয়তা ও রাজনৈতি বৈরীকে দায়ী করছেন এখানকার সচেতন জনগণ। তাদের অনিয়মের কারনে সঠিক তথ্য পাচ্ছেনা না তারা । বারবার উপজেলা পরিষদে মাসিক সভায় উপস্থিত সদস্যরা অভিযোগ করলেও সাংবাদিক ও স্থানীয় সাধারণ জনগনের অভিযোগ আমলে নিচ্ছেনা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিবরা।

তথ্য অনুসদ্ধানে জানা যায়, উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের সরকারি ভাবে খুব উন্নতমানে উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে। তার মধ্যে ২টি করে ৮টি কোর আই থ্রি ল্যাপ্টপ, গ্রামীনফোনের সংযোগসহ মডেম ২টি করে ৮টি, পাওয়ার সাপ্লাই (ইউপিএস) ১টি করে ৪টি, প্রিন্টার ১টি করে ৪টি, ওয়েবক্যাম, ৪টি করে ১৬টি টেবিল, ১২টি করে ৪৮টি চেয়ার, ২টি করে ৮টি হোয়াইটবোর্ড, ১টি করে ৪টি ডিজিটাল ক্যামেরা, ১২শত ওয়ার্ডে প্লেট ৮টি করে৩২টি সোলার প্লেট, ৪টি করে ১৬টি ব্যাটারী, ১টি করে ৪টি আইপিএস, মহান মুক্তিযোদ্ধে ও ইতিহাস সমৃদ্ব দলিলসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা যায়, উপজেলা তথ্য সেবা কেন্দ্র পুর্ণাঙ্গ চালু করার চেষ্টা করলেও ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক না পাওয়ায় ওয়েবসাইট ও ই-মেইল চালু করার সম্ভব হচ্ছে না।

তবে রবি মোবাইল কোম্পানি মার্চ ২০১১ সালে শেষ সপ্তাহে নেটওয়ার্ক চালু করেছে থানচিতে। এর পর থেকে থানচিতে স্থানীয় সাংবাদিক, এনজিও কর্মকর্তারা সর্বাক্ষণিক ভাবে ফেসবুক, ই-মেইল ব্যবহার করছেন ।

১ থেকে ১০ই জানুয়ারি ২০১৬ পর্যন্ত থানচি উপজেলা ৪টি ইউনিয়ন পরিষদ ঘুরে দেখা গেছে, রেমাক্রী ইউনিয়নের পরিষদ ভবন নির্মাণ কাজ চলছে দির্ঘদিন ধরে। ভবন না থাকায় থানচি উপজেলা সদরে সরকারি কর্মচারীদের জন্য নির্মিত ড্রমেটরির একটি কক্ষে মালিরাং ত্রিপুরা চেয়ারম্যান বাস ভবনের পরিচিত ওই ভবনের সচিব উচপ্রু মারমা একটি কক্ষে ২/৩টা চেয়ার একটা টেবিল ও ২টা আলমিরা নিয়ে কাজ করছেন ।

প্রশ্ন করা হলে সচিব উচপ্রু মারমা জানান, চেয়ারম্যান সাহেব পরিবার নিয়ে বান্দরবান জেলা শহরে বসবাস করছেন। তিনি জেলা শহরে অফিস কাজে ব্যস্ত আছেন কবে ফিরবেন তা জানেন না তিনি। তথ্য সেবা কেন্দ্রের কথা বললে তিনি জানান, ২টা ল্যাপটপ নষ্ট হয়ে গেছে। আর বাকি গুলো রেমাক্রী বাজারে একটি দোকানে রয়েছে তাও নিরাপদ নয়। রেমাক্রীতে নেটওয়ার্ক না থাকায় তথ্য সেবা কেন্দ্র অকার্যকর অবস্থায় রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন। তবে ২জন অপারেটর নিয়োগ করা হলেও তারা কোন সময় আসেনি।তবে আসলেও কাজ করা জায়গা নেই বলে জানান তিনি।

তিন্দু ইউনিয়নে সচিব লিতন দাশ সাথে কথা হলে তিনি ও একই কথা জানান। থানছি উপজেলা সদরে সচিব চমংউ মারমা জানান, তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা চেয়ারম্যান, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও ), জেলা সদরে অবস্থান করায় ইউপি চেয়ারম্যান সাথে অফিস কাজে জেলা সদরে প্রায় সময় কাজ করতে হয়। এখানে বিদ্যুৎ না থাকায় এবং সোলার প্যানেলে পর্যপ্ত পরিমাণ চার্জ ধারণ করতে না পাড়ায় তথ্য সেবা কেন্দ্র সাধ্যানুযায়ী সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো জানান, সরকারি ভাবে তথ্য সেবা কেন্দ্রের জন্য যে সব উপকরণ দেওয়া হয়েছে তা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সংরক্ষণে আছে। ল্যাপটপ ২টি নষ্ট হয়ে গেছে অনেক আগে থেকেই।

বলিপাড়া ইউনিয়নে সচিব মংশৈম্যা মারমা এই প্রতিবেদককে জানান, অত্র ইউনিয়নের ওয়েভপোর্টাল চালু রয়েছে। ইউনিয়নের জন্মনিবদ্ধন, টিআর, কাবিখা, কাবিটা, এডিপি ও এলজিইএসপি-২ প্রকল্পের তালিকা চেয়ারম্যানের ব্যাগে রয়েছে। তিনি আমাকে কোন তথ্য দিতে বারণ করেছেন। এমনকি তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করলে আমার কাছে পাঠিয়ে দিবেন বলে বলেছেস ইউপি চেয়ারম্যান বাশৈচিং। তাকে এই বিষয়ে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি। তবে এলাকার সাধারণ জনগন তথ্য সেবা পেতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পার্বত্য বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন