তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে পাঠানো মন্ত্রণালয়ের বিতর্কিত নির্দেশনাটি সংশোধন করা হয়েছে- নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা

keyperson_82912014-05-12_1399881887

পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট :

আগামী ৮ মে ঢাকার বেইলি রোডে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বাঙালিদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্যদের উপস্থিত করানোর জন্য জেলা পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের প্রতি মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠি সংশোধন করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা বুধবার সন্ধ্যায় পার্বত্যনিউজকে এ কথা জানান।

তিনি বলেন,  তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবর উপসচিব বিদুষী চাকমার পাঠানো চিঠিটি ভুল ছিল এবং এ চিঠির ব্যাপারে তিনি কিছু জানতেন না। তবে এ চিঠির কারণে তিন পার্বত্য জেলায় বাঙালীদের মধ্যে সৃষ্ট ক্ষোভের কথা জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে তা বাতিল করে পাহাড়ি, বাঙালি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল পার্বত্যবাসী যাতে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেন সেই মর্মে নতুন নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে বলে পার্বত্যনিউজকে তিনি নিশ্চিত করেছেন।

পার্বত্য সচিব আরো জানান, তারা চান জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল মানুষ এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানকে উৎসবমুখর করে তুলুক।

এদিকে, পার্বত্য চট্টগ্রামের একমাত্র বাঙালী সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু পার্বত্যনিউজকে নিশ্চিত করেছেন, জেলা পরিষদের অনুরোধে তারা যে তালিকা মন্ত্রণালয়ের প্রেরণের জন্য দিয়েছেন সেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাঙালীদের নামও রয়েছে।

উল্লেখ্য, আগামী ৮ মে রাজধানীর বেইলী রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ এপ্রিল পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন শাখার উপ-সচিব বিদুষী চাকমা স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ভিত্তি প্রস্তুর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে (তিন পার্বত্য জেলার প্রত্যেক জেলা থেকে) ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠী’র ২শজনের (১শজন পুরুষ, ১শ মহিলা) তালিকা প্রস্তুত করে আগামী ৬ মে ঢাকায় নেওয়া, তাদের আবাসনসহ খাবারের ব্যবস্থা গ্রহণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ বরাবর পত্র প্রেরণ করা হয়। আদেশপত্রে প্রস্তুতকৃত তালিকা ২০ এপ্রিলের মধ্যে আবশ্যিকভাবে উপসচিব বিদুষী চাকমা বরাবরে প্রেরণেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে তিন পার্বত্য জেলা থেকে তিনটি তালিকা ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলেও জানা গেছে।

13087357_10208361315405773_692986589161422157_n

পার্বত্য চট্টগ্রামের বৃহৎ জনগোষ্ঠী বাঙালিদের বাদ দিয়ে ঢাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স নির্মাণে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে শুধু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকদের উপস্থিত করার এ নির্দেশের কথা জানাজানি হলে বাঙালিদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুষ্ঠানে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের এই পাহাড়ি-বাঙালি বৈষম্য সৃষ্টিতে সমালোচনার ঝড় উঠে সচেতন মহলে। মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় সরকার দলীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যেও।

এ প্রসঙ্গে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি পার্বত্যনিউজকে ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, এতে তিন পার্বত্য জেলার বাঙালীরা বঞ্চিত অনুভব করছেন।স্থাপনার নাম পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স। পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল মানুষের কমপ্লেক্স এটি। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল মানুষের সমান অধিকার রয়েছে এই কমপ্লেক্সে। কিন্তু মন্ত্রণালয় পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্ধেক জনগোষ্ঠী বাঙালীদের বঞ্চিত করে এই কমপ্লেক্সকে উপজাতি কমপ্লেক্সে পরিণত করতে চাইছে। এই সাম্প্রদায়িক ও হীন উদ্যোগ বন্ধ করে পার্বত্য কমপ্রেক্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সমানুপাতিকহারে বাঙালীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা না হলে পার্বত্য বাঙালীরা এ সাম্প্রদায়িক প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।

পার্বত্য নাগরিক পরিষদের-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি প্রকৌশলী আলকাছ আল মামুন ভূঁইয়া বলেন, সরকারের এ ধরনের মহতি ও প্রশংসনীয় উদ্যোগে পাহাড়ি-বাঙালির সম্মিলন ঘটানোর সুযোগ রয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের ভেতরকার একটি অপশক্তি অনুষ্ঠানটিকে সম্প্রদায়গত বিভাজন করে সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এই আদেশ বাতিল করে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স’ নির্মাণ কাজের অনুষ্ঠানে তিন পার্বত্য জেলা থেকে সম-সংখ্যক পাহাড়ি-বাঙালি অর্ন্তভুক্তির দাবি জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

One Reply to “তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে পাঠানো মন্ত্রণালয়ের বিতর্কিত নির্দেশনাটি সংশোধন করা হয়েছে- নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা”

  1. ধন্যবাদ পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে তাদের এত বড় একটি ভুল স্বীকার করার জন্য।তবে ভবিষ্যতে উক্ত ভুলের ন্যায়ে কোন পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে আমরা বাঙ্গালী সর্বদা প্রস্তুত!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন