তাইন্দং গণহত্যার বিচায় হয়নি ৩২ বছরেও

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক, মাটিরাঙ্গা:

আজ খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার তাইন্দং ট্রাজেডির ৩২ বছর। ১৯৮৬ সালের এ দিনে মাটিরাঙ্গার দুর্গম তাইন্দং-এ তাণ্ডবলীলা চালায় বিলুপ্ত শান্তিবাহিনী। সেদিন শান্তিবাহিনীর হাতে ভয়ানক গণহত্যার শিকার হয় তাইন্দংয়ের নিরস্ত্র-নিরীহ বাঙ্গালীরা। শুধু মাটিরাঙ্গার তাইন্দং নয় সেদিন শান্তি বাহিনীর বর্বর হামলায় গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

তৎকালীন শান্তি বাহিনীর বর্বর হামলার ৩২ বছরেও তাইন্দং ট্রাজেডির বিচার হয়নি। একের পর এক সরকার বদল হলেও পাহাড়ে গণহত্যার এখনও বিচার হয়নি। স্বজন হারানোর যন্ত্রণা এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন পাহাড়ের মানুষ। এ ঘটনার ৩২ বছর পরেও বিচার হয়নি সেই নারকীয় গণহত্যার।

বিচার বদলে বহাল তবিয়তে দামী গাড়িতে দেশের পতাকা উড়িয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের নায়ক জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। ঘুমন্ত বাঙ্গালীর উপর সে দিনের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের পর ৩২ বছর শেষ হলেও বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়নি বাহিনী প্রধান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমাকে। এ নিয়ে এখনও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

তাদের মতে, একের পর এক সরকার বদল হলেও তাইন্দং হত্যাকাণ্ডের এখনও বিচার হয়নি। সেদিন ক্লান্ত মানুষগুলো যখন ঘুমে মগ্ন ঠিক তখনই রাত ৯টার দিকে পাহাড়ে বহিরাগত সন্ত্রাসী সন্তু লারমার সন্ত্রাসী বাহিনী তাইন্দং বাজার ঘেরাও করে বাজারে আগুন লাগানোর মধ্য দিয়ে শুরু করে তাদের নারকীয় হত্যাকাণ্ড। এসময় প্রাণ বাঁচাতে ছুটে চলা মানুষগুলোকে যেখানে পেয়েছে সেখানেই পাখির মতো গুলি করে মেরেছে সন্তু বাহিনী। এসময় তাদের দেয়া আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় তাইন্দং বাজারের প্রায় ১৫০টি দোকান।

তাইন্দং বাজার হত্যাযজ্ঞের পর স্বশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তাইন্দং বাজারের পূর্ব দিকে নোয়াপাড়া, বাঘমারা, মাঝপাড়া এলাকায় বাঙ্গালীদের বাড়ি-ঘর অগ্নিসংযোগ করে উল্লাস করে। এসময় তারা যাকে যেখানে পেয়েছে সেখানেই গুলি করে হত্যা করেছে। এসময় সন্তু বাহিনী তাইন্দং-এ ৫৪ জনকে হত্যা করে আর কয়েক’শ বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। তাদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ থেকে বাদ পড়েনি ছোট ছোট শিশুরাও। তারা সাধারণ মানুষকে ঘরে আটকে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মেরেছে। পুড়িয়ে মেরেছে গবাদি-পশুও। রাতব্যাপী সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন চাকমা সন্ত্রাসীদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের পর সকালে একের পর এক লাশ আনা হয় তাইন্দং মাদ্রাসা মাঠে। লাশের সারি সেদিন হতবাক করেছিল তাইন্দংয়ের সাধারণ মানুষকে। এ হত্যাকাণ্ডকে অনেকেই ৭১ সালের পাকিস্তানি বর্বরতার সাথে মুল্যায়ন করে বলেছেন, সন্তু লারমার সেই হত্যাকাণ্ড মুক্তিযুদ্ধকালীন পাকিস্তানি বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। সেদিন স্বজন হারানোর কান্না তাইন্দংয়ের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল।

তাইন্দং ট্রাজেডির ৩২ বছর পরেও এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে কিনা তা জানেনা স্বজন হারানো সেই মানুষগুলো। তবে তাদের স্বজনদের খুনী সন্তু লারমা যখন দেশের পতাকাবাহী গাড়িতে ঘুরে দেশ ও সরকার বিরোধী বক্তব্য প্রদান করেন তখন সেইসব স্বজন হারানো মানুষগুলোর বিস্মিত হওয়া ছাড়া আর কিছুই যেন করার থাকে না।

মাটিরাঙ্গার তাইন্দং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, বিভীষিকাময় সেদিনের কথা মনে হলে আজো তাইন্দংয়ের মানুষ শিহরিত হয়। স্বজন হারানোদের কান্না আজও থামেনি। বিচারের বদলে খুনীরা হয়েছে পুরস্কৃত।

মাটিরাঙ্গার তাইন্দং ট্রাজেডিকে ‘শোকাবহ দিবস’ আখ্যায়িত করে পার্বত্য নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আলকাছ আল মামুন ভুইয়া বলেন, তাইন্দংয়ে সেদিন যে নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল তা ইতিহাসের জঘন্য বর্বরতাকে হার মানায়। সেদিনের তাণ্ডবলীলার কথা উল্লেখ করে তিনি খুনী সন্তু লারমাকে দেয়া সকল সরকারি সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাহার করে তাকে গ্রেফতারের দাবি জানান। তিনি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে তার বিচার দাবি করে বলেন, পাহাড়ের মানুষ সন্তু লারমাকে দেশের পতাকাবাহী গাড়িতে চায় না।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন