টেকনাফ সীমান্তে নৌকার মাঝিরা আনছে রোহিঙ্গা: ১১ লাশ উদ্ধার, নিখোঁজ ৩৮
টেকনাফ প্রতিনিধি:
মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া টু শাহপরীর দ্বীপ মাঝি ও রোহিঙ্গা পারাপারের নিরাপদ পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করছেন কিছু অর্থ লোভী নৌকার মাঝিমাল্লারা। তাদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন স্থানীয় একটি দালাল চক্র। নৌকার অদক্ষ মাঝির কারণে কয়েক কিলোমিটার নাফনদী ও সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে এ পর্যন্ত ২৭টি নৌকা ডুবিতে ১৮০ জন রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। এসব ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছে আরও অনেক রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গার স্রোতে তছনছ প্রশাসনিক ব্যবস্থা।
গত ১১ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেদেশের সেনা মোতায়েন করে আবারো অভিযান শুরু অজুহাতে পাশ্ববর্তী রাষ্ট্র বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা আসতে শুরু করেছেন। তাই সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ডের টহল বাড়ানোর পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় বিশেষ সর্তক অবস্থা জারি করা হয়। ওই সময় সীমান্তে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কা করা হলেও রাতের আধাঁরের বিচ্ছিন্ন ভাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর লোকজন বাংলাদেশে পালানোর চেষ্টা চালায়। বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের ২০৮ কিলোমিটার স্থল (পাহাড়, জঙ্গল, টিলা বেষ্টিত দুর্গম এলাকা) ও ৬৩ কিলোমিটার জল সীমানা রয়েছে। প্রথম দিকে রাতে আধাঁরে নৌকায় করে কিছু রোহিঙ্গা পালিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলেও গত ২৫ আগস্টের পর থেকে দিনের বেলায় দলে দলে অনুপ্রবেশ করতে থাকে।
জানতে চাইলে টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল এসএম আরিফুল ইসলাম বলেন, সীমান্তে কড়া নিরাপত্তা জোরদার করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে বাধা দেওয়া হয়। হঠাৎ সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক দিক-বিবেচনার নির্দেশ পাওয়ার পর থেকে সীমান্ত এলাকার কিছু কিছু দালালরা টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে লিপ্ত হয়। ইতিমধ্যে অনেক দালালকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে।
রোহিঙ্গারা আসছে: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মুসলিম জনগোষ্ঠির উপর দেশের সেনা বাহিনী ও নাডালা বাহিনী (উগ্রপন্থি রাখাইন যুবকদের সংগঠন) সন্ত্রাস বিরুদ্ধে অভিযানের কথা বলে রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও যুবকদের গুলি এবং আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করছে। পাশাপাশি রাখাইনের গ্রামের পর গ্রাম আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিতে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করায় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ চেষ্টায় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আসছে।
নৌকায় পারাপার ও অদক্ষ মাঝি: রোহিঙ্গাদের নিয়ে নৌকার মাঝি ও দালালদের বানিজ্য থেমে নেই। টেকনাফে শাহপরীর দ্বীপের একটি দালাল চক্র ও নৌকার সিন্ডিকেট। নৌকার মাধ্যমে প্রতি রাতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। রোহিঙ্গা পারাপারের জড়িত নৌকার মাঝিরা সাগরে প্রায় সময় মাছ ধরার কাজে এসব নৌকা ব্যবহার করে আসছিলে। কিন্তু তারা কোনো সময় নাফনদীর মোহনা বদর মোকাম এলাকায় নৌকা চালায়নি। ফলে বদর মোকাম এলাকায় জেগে উঠা চরে নৌকা আটকে ডুবির ঘটনা ঘটছে।
দালাল কারা: নৌকার মাঝি ও দালাল চক্র হলো- শাহপরীর দ্বীপের দক্ষিনপাড়ার আমান উল্লাহ মাঝি, ছলিম উল্লাহ, শামশুল আলম, কবির আহমদ ওরফে কবিরা, মো. আলম, মো. ইসলাম, নূর হাকিম মাঝি, নবী হোসেন, আবু তাহের, কোরবান আলী, মোহাম্মদ হোছেন, ডাংগর পাড়া ও মাঝেরপাড়ার আজগর আলী ,ছৈয়দ আলম, মো. মন্নান ,সব্বির আহম্মদ, মোহাম্মদ আলম, আব্দু শুকুর, নজির আহমদ, রাজু মিয়া, আহাম্মদ হোসেন, আমির হামজা, আমান উল্লাহ, করিম উল্লাহ, হাফেজ উল্লাহ, অছিউর রহমান, মোহাম্মদ আমিন, রহিম উল্লাহ, হাফেজচ্ছা মাঝি, মোহাম্মদ রফিক, মুজিব উল্লাহ, মো. মান্নান, মো. কালাম, ইসমাইল, মিস্ত্রিপাড়ার মো. ছলিম প্রকাশ লম্বা সলিম, এনায়েত উল্লাহ, রশিদ আমিন, মোহাম্মদ আমিন, শরিফ হোসেন, নূর হোসেন, নাজির হোসেন, নূরুল উল্লাহ, ডেইল পাড়ার মোহাম্মদ ইসমাইল , মোহাম্মদ আবদুল্লাহ,জসিম উদ্দীন, কোনা পাড়ার আবদুল হাই, মোহাম্মদ তৈয়ুব, মোহাম্মদ শহীদ, উত্তরপাড়ার মোহাম্মদ ইউনুছ প্রকাশ বাইল্ল্যা,মো. ছৈয়দ, জিয়াবুল, সামশুল আলম, জিয়াউর রহমান, জালিয়াপাড়ার সামশুল আলম ওরফে শামীম কাশুর, আকবর ওরফে মাইলু, শফি আলম, কামাল হোসেন, আবদুল গণি, আবদুর রশিদ, মোহাম্মদ হোসেন, সৈয়দ হোসেন, নুর মোহাম্মদ, নুরুল আলম, মো. ফজল করিম, আবু তাহের, নাজির হোসেন, নুর হোসেন, মো. জামাল, আবদুল্লাহ, আনু মিয়া ও আবদুল করিমের নেতৃত্বে নাফনদী ও সাগর উপকূল দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে বাংলাদেশে।