টেকনাফে সনাতন পদ্ধতির লবণ উৎপাদন শুরু

teknaf-pic-25-12-16-2-copy

টেকনাফ প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের টেকনাফে মাঠ থেকে লবণ উৎপাদন শুরু করেছে চাষীরা। এ বছর প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং সবকিছু অনুকূলে থাকায় অন্য বছরের চেয়ে লবণ উৎপাদন একটু বেশী হবে বলে চাষীরা মনে করছেন। তবে বিগত বছরের তুলনায় এ বছরে লাভ একটু কম হতে পারে এমনটি মনে করছেন লবণ চাষে জড়িতরা। সাধারণত প্রতিবছর এ সময়ে পুরো টেকনাফ জুড়ে লবণ চাষের প্রতিযোগীতা চলে।

গেল বছর লবণ চাষীরা অধিক লাভবান হওয়ায় এবারে জমির দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। জমির মূল্য দ্বিগুণ হলেও বর্গা নিয়ে চাষীরা কিন্তু আগাম লবণ চাষে মাঠে নেমে পড়েছেন। লবণের মূল্য থাকায় অধিক লাভের আশায় বিভিন্ন এলাকায় চাষের জন্য নতুন ভাবে জমি আবাদের কাজ চলছে।

 দেখা গেছে, এ বছর প্রচুর পরিমাণ জমি নতুন ভাবে লবণ চাষের আওতায় এসেছে। লবণ মাঠ ঘুরে দেখা যায়, কৃষক চাষ যোগ্য জমি লবণ চাষের উপযোগী করে তুলছেন। কেউ ট্রাক্টর বা যন্ত্র দিয়ে লবণ মাঠ তেরী করছেন। কেউ কেউ পানি দিয়ে মাটি ভেজানের কাজ করছেন। অনেকে মাঠে গরা মেরে পলিথিন বিছানোর কাজ করছেন। কিছু এলাকায় চাষীরা আগাম লবণ তুলছেন। এ সময় কথা হয় রঙ্গিখালী এলাকার লবণ চাষী শাহ আলম এবং হোছনের সাথে। তারা বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং সবকিছু অনুকূলে থাকলে এ মৌসুমে আরও বেশী সুবিধা হবে।

তবে চাষীদের অনেকে অভিযোগ করে বলেন, টেকনাফের লবণ চাষীরা অনেকটা ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি। মাঠ মালিক তথা লবণ ব্যবসায়ীরা বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে অধিক টাকা আয় করে থাকেন। সাধারণত ব্যবসায়ীচক্র কমিশন ভিত্তিতে চাষীদের লবণ মাঠে কাজ করান। এ কারণে লবণের মুল্য থাকলেও চাষীরা কিন্তু যথারীতি চাহিদা মত টাকা পাচ্ছেন না। এসব এলাকার লবণ চাষীরা পুরো মৌসুমেই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি থাকে। মূল্য থাকলেও সিন্ডিকেট করে কম মূল্যে মাঠ থেকে তারা লবণ ক্রয় করে বলেও চাষীদের অভিযোগ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টেকনাফ উপজেলার সাবরাং, শাহপরীরদ্বীপ, নয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, জালিয়াপাড়া, চৌধুরীপাড়া, দমদমিয়া, জাদীমুরা, মুচনী, লেদা, আলীখালী, রঙ্গিখালী, নাটুমরাপাড়া, ফুলের ডেইল, হোয়াব্রাং, মৌলভীবাজার, খারাংখালী, নয়াবাজার, ঝিমংখালী, নোয়াপাড়া, কাঞ্জরপাড়া, উনছিপ্রাং, লম্বাবিলসহ হোয়াইক্যয়ের কিছু কিছু এলাকায় লবণ চাষ করা হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৫-২০১৬ মৌসুমে টেকনাফ উপজেলায় ২ হাজার ৭শ একর জমিতে লবণ চাষ করা হয়। ওই সময় টেকনাফ থেকে ৮৮হাজার ২শ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। ২০১৬-২০১৭ মৌসুমে চাষ এবং উৎপাদন দুটিই সমানতালে বাড়তে পারে বলে লবণ শিল্পে জড়িতরা মনে করছেন।

হ্নীলা লবণ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. ছাবের খাঁন বলেন, চাষী এবং ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় নৈতিক ভাবে লবণ মালিক সমিতি সদা সহযোগিতা করবে।

এদিকে বিসিক টেকনাফ লবণ কেন্দ্র কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন,  উপজেলার পৌরসভা ও ৪টি ইউনিয়নে লবণ চাষ হচ্ছে। গেল মৌসুমের চেয়ে এ মৌসুমে লবণ উৎপাদন বাড়তে পারে। বিভিন্ন এলাকায় নতুন ভাবে অনেক জমি চাষের জন্য আবাদ হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন ২০১৬-২০১৭ মৌসুমে লবণ শিল্পে সীমান্তের চাষীরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন