টেকনাফে যুবদল নেতার বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা, অভিযোগ পুলিশের দিকে
উখিয়া প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, হোয়াইক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদে বারবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান মরহুম মোস্তাক আহমদ চৌধুরী’র ছেলে উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জুনাইদ আহমদ চৌধুরীর বাসভবনে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার(৩০ নভেম্বর) গভীর রাতে হামলার ঘটনাটি ঘটেছে।
এ সন্ত্রাসী হামলায় পুলিশের সরাসরি সহযোগীতার অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনার বিষয়ে কক্সবাজার জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) নিহাদ আদনান তাইয়ান বলেছেন পুলিশ কোনো সন্ত্রাসী হামলার সাথে জড়িত কিনা খতিয়ে দেখা হবে। পুলিশ কোনো অসঙ্গতির সাথে জড়িত নয় বলে তিনি জানান।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরী ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, উখিয়া-টেকনাফের মানুষ শান্তিপ্রিয়। সংসদ নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে সরকার দলের সন্ত্রাসীর সাথে জড়িত এই পুলিশ কর্মকর্তা দুষ্টচক্রের হোতা বিতর্কিত ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি নির্বাচন কমিশনের কাছে। অন্যথায় নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হলে সাধারণ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না বলে আশঙ্কা করছি।
জুনাইদের মামা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (৪২) বলেন, টেকনাফ থানার বিতর্কিত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নেতৃত্বে কালো কাপড় পরিহিত ৪০জনের একটি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিত ভাবে বাড়ির দরজা ভেঙ্গে প্রবেশ করে। বাড়িতে ঢুকে মুহুর্তের মধ্যে গৃহকর্তা জুনাইদ আহমদ চৌধুরীকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে বাড়ির গৃহকর্মী জাহাঙ্গীর (১৪) ও কাজের ভুয়া দিল জুহুর (৪৮) গলা ধাক্কা দিয়ে শিশুসহ ৫জনকে একটি রুমে তালাবদ্ধ করে রাখে। এক পর্যায়ে বাড়ির আলমিরা ভেঙ্গে রক্ষিত ৭০ ভরি স্বর্ণ, নগদ ৫ লক্ষাধিক টাকা ও মূল্যবান কাপড়, ল্যাপটপ, মোবাইল লুট করে।
এরপর প্রতিটি রুমে একে একে টেলিভিশন, ফ্রিজ, আসবাবপত্র, জানালার কাঁচ ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়। সিড়ি বেয়ে বাড়ির দ্বিতীয় তলায়ও তাণ্ডব চালিয়ে এক ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি করে। এমনকি সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবে বাদ যায়নি বাথরুমের কমেড, লুকিং গ্লাস, রান্না ঘরের লবণদানি পর্যন্ত। এতে অন্তত: ৫০লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা।
ভগ্নিপতি শামশুল আলম (৪২) জানান, ভয়াবহ এমন সন্ত্রাসী হামলায় ভাংচুর ও দফায় দফায় দরজা জানালা ভাংচুরের আওয়াজ ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা এগিয়ে আসলে পুলিশ ও সন্ত্রাসীরা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে লোকজনকে কাছে আসতে বারণ করে। প্রায় ২ ঘন্টার অধিক এ তাণ্ডবের ঘটনায় এক নজিরবিহীন হিংস্রতার চিত্র ফুটে উঠে। এতে শংকিত হয়ে পড়ে উখিয়া ও টেকনাফের নির্বাচনী এলাকার মানুষের মাঝে নানা জল্পনা-কল্পনা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সরকার দলের সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি ও তার ক্যাডার বাহিনীরা কয়েকদিন ধরে এলাকায় শক্তির মহড়া প্রদর্শন করে আসছে। বিএনপির ঘাটি হিসেবে খ্যাত হোয়াইক্ষ্যং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরীর বাড়িতে এই নগ্ন হামলা মানুষের মধ্যে ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টির পায়তারা বলে মনে করেন। এছাড়াও পুরো এলাকাকে রাষ্ট্রীয় পুলিশ বাহিনী ব্যবহার করে এক তরফা নির্বাচনের স্বাদ গ্রহণের জন্য এমন ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তারা দাবি করেন।
জুনাইদের মা রাশেদা বেগম চৌধুরী (৫৫) সাংবাদিকদের জানান, পুলিশসহ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনীরা আমার ছেলে রাজনীতি করার কারণে এই হামলার ঘটনাটি ঘটিয়েছে। আমার ছেলে একজন স্বচ্ছ রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। কোনো অবৈধ ব্যবসায় সম্পৃক্ত না থাকার পরও সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে অংশগ্রহণ করবে জেনে হত্যার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত ভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আমি এই জঘন্য ও মানবতা বিরোধী নগ্ন সন্ত্রাসীরা অস্ত্র নিয়ে হামলার ঘটনায় নেতৃত্বদানকারী টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ দাশের বিরুদ্ধে সরকার ও নির্বাচন কমিশনারের কাছে বিচার দাবি করছি। পাশাপাশি পরিবার পরিজন নিয়ে জানমালের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
স্ত্রী আফব্রমা কাইফা রিফা (২৪) জানান, আমার স্বামী জুনাইদ চৌধুরী ও আমি কক্সবাজারস্থ বাবার বাড়িতে ছিলাম। আমার শ্বাশুড়ি ও মেয়ের ডেলিভারি সংক্রান্ত কাজে কক্সবাজার ছিল। বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় কেউ আমরা বাড়িতে ছিলাম না। তিনি ক্ষুদ্ধ কণ্ঠে বলেন, পুলিশ ও কালো কাপড় পরিহিত সন্ত্রাসী বাহিনীরা যে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে তা কোনো মানুষের কাজ নয়।
ঘটনার খবর পেয়ে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও উখিয়া-টেকনাফ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরী শনিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। দুপুরে জেলা শহরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ আওয়ামী লীগের বিতর্কিত সাংসদ আবদুর রহমান বদির নির্দেশে যুবদল নেতা জুনাইদ চৌধুরীর বাড়িতে ভয়াবহ নগ্ন ঘটনাটি সংঘটিত করে। তিনি অভিযুক্ত ওসি’র দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানান।