টেকনাফে মাদকবিরোধী অভিযান: উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ৩২ জনপ্রতিনিধি উধাও

টেকনাফ প্রতিনিধি:

দেশব্যাপী মাদক নির্মূল অভিযানের শুরুতেই তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধিরা টেকনাফ ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছে। কেউ কেউ ওমরা পালনের নামে সৌদি আরব এবং চিকিৎসার নামে ভারত ও পাশ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে পালিয়ে গেছে।

ফলে টেকনাফ উপজেলার সামাজিক বিচার ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে এবং স্থানীয় জনসাধারণ সীমাহীন কষ্ট সয়ে নাগরিক সেবা বঞ্চিত হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় স্থানীয় সাংসদসহ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি মেম্বার, পৌরসভার কাউন্সিলরসহ একাধিক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির নাম রয়েছে।

সম্প্রতি নিরপরাধ জনপ্রতিনিধি হিসেবে টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর একরামুল হক কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর থেকে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হলে অভিযান অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ইয়াবা সংশ্লিষ্টতায় অভিযুক্ত জনপ্রতিনিধিরা এখনো পলাতক রয়েছেন।

অভিযান শুরুর পর থেকে রাঘব-বোয়ালরা গা ঢাকা দিলেও আরামে রয়েছে তালিকায় নাম না থাকা আরও কয়েক’শ বোয়াল আর চুনোপুটি। এখন তাদের নিয়ন্ত্রণেই চলছে এ ব্যবসা।

স্থানীয় লোকজন জানায়, প্রায় ১ মাস হচ্ছে তাদের ভোট দেওয়া জনপ্রতিনিধিদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ঈদ উপলক্ষে সরকারের দেওয়া বিভিন্ন ত্রাণ থেকেও তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদে জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিতির কারণে প্রয়োজনীয় অনেক কাজকর্ম নিয়েও দুর্ভোগ এবং স্থানীয় শালিস, বিভিন্ন ভেরিফিকেশন্সসহ জন্ম ও নাগরিক সনদের মতো জনগুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, টেকনাফ উপজেলার জনপ্রতিনিধিগণ কালো টাকার বিনিময়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এ এলাকায় ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের হাতে। বেশিরভাগ জনপ্রতিনিধির সঙ্গে মাদকের সখ্য রয়েছে। এরা প্রত্যেকেই জনপ্রতিনিধি হওয়ার আগেই অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। অঢেল টাকার মালিক হয়ে পরে জনপ্রতিনিধি হয়েছেন সবাই।

আর এগুলো অযোগ্য, অসৎ লোকদের টাকার লোভে জন প্রতিনিধি নির্বাচিত করার কুফল বলে মত দিয়েছেন। অনেকে একসময় নিম্নবিত্ত পরিবারের থাকলেও এখন অঢেল সম্পদের মালিক। তবে কেউ কেউ রাজনৈতিক হয়রানি থেকেও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন, এটাও সত্য।’

তবে তাদের নাম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় আছে।

সরেজমিন পরিষদগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে এবং অফিসে থাকা সচিবগণ প্রতিবেদকের কাছে বিষয়টি স্বীকার করেছেন। অনেক জনপ্রতিনিধিকে তারা প্রায় ১ মাস হয় দেখেছেন। এরা হলেন, টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান মৌলভী রফিক উদ্দীন, পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহ আলম, ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হোছন আহমদ, ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রেজাউল করিম মানিক, ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাও. মুজিবুর রহমান, ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মনিরুজ্জমান লেড়ু ও ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুর বশর নুরশাদ, টেকনাফ সদরের ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়া, ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার ওমর হাকিম, ২নং ওয়ার্ডের মো. আব্দুল্লাহ, ৪নং ওয়ার্ডের আজিম উল্লাহ, ৬নং ওয়ার্ডের আবদুল হামিদ, ৮নং ওয়ার্ডের এনামুল হক ও ৯নং ওয়ার্ডের নজির আহমদ, সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান নুর হোসেন, ১নং ওয়ার্ডের মোয়াজ্জেম হোসেন দানু, ৩নং ওয়ার্ডের শামসুল আলম, ৫নং ওয়ার্ডের মাহমুদুর রহমান, ৬নং ওয়ার্ডের জাফর আলম, হোয়াইক্যং ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান ও ৭নং ওয়ার্ডের রাকিব উদ্দীন, ৬নং ওয়ার্ডের শাহ আলম, ২নং ওয়ার্ডের সিরাজুল মোস্তফা লাল্লু মেম্বার, হ্নীলা ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের নুরুল হুদা, ৭নং ওয়ার্ডের জামাল উদ্দীন, ৩নং ওয়ার্ডের শামসুল আলম প্রকাশ বাবুল মেম্বার, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ আলী মেম্বার, সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার আনোয়ারা বেগম ও মর্জিনা বেগম, বাহারছড়ার ইউপি চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজ উদ্দীন, সেন্টমার্টিন ইউপির মেম্বার আবদুর রউফ ও আবু বক্কর।

স্থানীয়দের দাবি, রাঘব-বোয়ালদের সাথে তাদেরকেও গ্রেফতার জরুরী। অন্যথায় ইয়াবা নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব। আবার অভিযোগ রয়েছে, এসব কারবারীদের বাচাঁতে একদল অপসাংবাদিক মরিয়া হয়ে উঠেছে। এদের অনেকে তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারী আবার এদের অনেকের বিরুদ্ধে ইয়াবা সংশ্লিষ্টতার সরাসরি অভিযোগ রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন ও জনগন নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হবে।

এ প্রসঙ্গে টেকনাফ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা রবিউল হাসান জানান, অনেক জনপ্রতিনিধির নাম তালিকায় থাকায় তারা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এতে করে প্রশাসনিক বিভিন্ন কাজে সমস্যা হচ্ছে। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠি এসেছে। সেই অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন