‘টুরিস্ট ভিলেজ’ চালু হলে কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল নামবে

COX LOGO 3

আবদুল্লাহ নয়ন:

টুরিস্ট ভিলেজ
থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, চীন, জাপান, মালদ্বীপসহ উন্নত বিশ্বের প্রায় দেশে একাধিক ‘ট্যুরিস্ট ভিলেজ’ বা ‘পর্যটন গ্রাম’ রয়েছে। বিশ্বের যে কোন স্থান থেকে ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকরা সে দেশের গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান ঘুরে ‘ট্যুরিস্ট ভিলেজ’-এ প্রবেশ করেন। সে দেশিয় কৃষ্টি-কালচার ও বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা দর্শন পর্যটককে আরো বেশি মুগ্ধকর করে তোলে। অর্থ ব্যয় করে পর্যটকরা ওই সব ‘পর্যটন গ্রাম’ ঘুরেন। এতে সে দেশের জনগণ উপকৃত হয়। বিকশিত হয় সে দেশের পর্যটন শিল্প। বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতের নগরী হিসেবে কক্সবাজারে পর্যটক ধরে রাখার জন্য ‘ট্যুরিজম ভিলেজ’র বিকল্প নেই বলে মনে করেন পর্যটন বিশেষজ্ঞরা।

যেভাবে করা যায় : কক্সবাজারের ৮ উপজেলার গ্রামগুলো একেকটি বিভিন্ন কিছুর জন্য বিখ্যাত। মহেশখালীর পান, টেকনাফের সুপারী, কুতুবদিয়ার লবণ, রামুর রাবার বাগান প্রসিদ্ধ। তেমনি চকরিয়া, পেকুয়া ও উখিয়ার বিভিন্ন গ্রামে দেখার মতো অনেক কিছু রয়েছে।
৮ উপজেলা থেকে কয়েকটি গ্রাম বেছে নিয়ে ‘ট্যুরিজম ভিলেজ’ ঘোষণা করতে হবে। ওই সব গ্রামকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রেখে সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। কোন ধরণের বহুতল ভবন নয়; যেভাবে বাঁশ-বেড়া কিংবা টিনের ঘর গড়ে ওঠেছে সেভাবে রেখে সাজিয়ে তুলে গড়তে হবে ‘পর্যটন গ্রাম’। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করে রাস্তার মোড়ে মোড়ে সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য নানা জাতের গাছ রোপন করা। সব মিলিয়ে একটি সুন্দর এলাকা তৈরি করে ‘পর্যটন গ্রাম’ গড়ে তোলা সম্ভব।
 
পর্যটন গ্রাম-এ যা যা থাকবে : পর্যটন গ্রামে থাকবে হবে নিরাপত্তা সহকারে অল্প টাকায় রাত যাপনের ব্যবস্থা। রিক্সা কিংবা গরু/ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে ঘোরার সুযোগ থাকবে। নিরাপত্তার জন্য পুলিশ প্রশাসন কাজ করবে। পাশাপাশি জনগণকে পর্যটক বান্ধব হতে হবে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এ গ্রামে কোথায় কি আছে তার প্রচারপত্র বিতরণ করতে হবে। কোন ধরণের ওয়েস্টার্ন কালচার  নয়; থাকবে দেশিয় সংষ্কৃতির ‘সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান’।
থাকবে দেশিয় পিঠা, খাবারসহ আরো নানা আয়োজন। দেশি-বিদেশী পর্যটকরা এসব দেখেই মুগ্ধ হবেন। নিজ দেশের ভিন্ন কিছু আয়োজন উপভোগ করতে পর্যটকরা অর্থ ব্যয়ে দ্বিধাবোধ করবেন না।

‘পর্যটন গ্রাম’র সুবিধা : ‘পর্যটন গ্রাম’-এ দেশি-বিদেশী নানা পর্যটক ঘুরতে আসবেন। তাদের সাথে কথাবার্তাসহ আচার-আচরণের মাধ্যমে ওই গ্রামের শিশু-কিশোর থেকে শুরু সব বয়সের নানা নিজেদের ভাষা, কালচার ইত্যাদি ভাগাভাগি করতে পারেন। ফলে উভয় দেশের ভাল দিকটি গ্রহণ করে এ দেশের অর্থাৎ ওই পর্যটন গ্রামের ছেলেরা এগিয়ে যাবে। নিজেদেরকে উপস্থাপন করার সাহস বাড়বে। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে নিজের দেশের ঐতিহ্য রক্ষা করে বিশ্বের দরবারে প্রতিযোগিতার জন্য তৈরি হতে পারবে। এছাড়া ছোট ছোট ইকো ট্যুরিজম’র মতো আবাসিক স্থাপনা নির্মাণ করে স্থানীয় বাসিন্দারা পর্যটকদের কাছে ভাড়া দিতে পারেন। এতে রাত যাপন করবেন পর্যটকরা। কম খরচে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে গ্রামের মানুষ স্বাবলম্বী হবেন। সব মিলিয়ে ভিন দেশের ব্যতিক্রমধর্মী নানা আয়োজন ও কৃষ্টি-কালচার দেখে পর্যটকরা আনন্দ নিয়ে দেশে ফিরবেন। পরে তাদের মুখে সৌন্দর্য্যরে কথা শুনে আরো হাজার হাজার পর্যটক কক্সবাজারে আসবেন বেড়াতে। এতে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা যেমন উপকৃত হবেন। তেমনি সরকারও রাজস্ব আদায় করতে পারবে মোটা অংকের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘পর্যটন গ্রাম’ গড়ে তোলা গেলে দেশি-বিদেশি পর্যটকের ঢল নামবে কক্সবাজারে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন