ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজ নতুন করে নির্মাণের দাবি: অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের দূর্ভোগ চরমে

chakaria-pic-16-10

চকরিয়া প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় কোনাখালী ও ঢেমুশিয়া এ দুই ইউনিয়নের ১৩ গ্রামের বাসিন্দারা প্রতিনিয়ত ঝুঁকিপূর্ণ ও ভাঙা সেতুর উপর দিয়ে যাতায়াত করছে। এতে এসব গ্রামের অন্তত অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।

জানা গেছে, মাতামুহুরীর উপ শাখা নদীর মধ্যম কোনাখালী দারুল ইরফান মাদ্রাসা সংলগ্ন (ভরামুহুরী খালের) উপর নির্মিত ঢেমুশিয়া-কোনাখালী সংযোগ সেতুটি (লাল ব্রীজ নামে পরিচিত) দীর্ঘ প্রায় একযুগের অধিক সময় চলাচল অনুপযোগী ও জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে রয়েছে। এতে দুই ইউনিয়নের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে নদীর দুই পাড়ের মানুষের মাঝে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষার্থীদের যাতায়াত, কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের চকরিয়া ও পেকুয়া সদরে যাতায়াতসহ আরো নিত্য প্রয়োজন মেটাতে দুই ইউনিয়নের অন্তত অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। উপজেলার উপকূলীয় কোনাখালী ও ঢেমুশিয়া ইউনিয়নের এসব গ্রামের মানুষের দাবি, নতুন করে সংযোগস্থলের ব্রিজটি পুন:নির্মাণ করা হউক।

স্থানীয় সূত্রে জানায়, মাতামুহুরী নদীর উপ শাখা নদী মধ্যম কোনাখালী ভরামুহুরী খালটি এক সময় খরস্রোতা নদী হিসেবে পরিচিত ছিল, এখানকার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌকা। দুই ইউনিয়নের বাসিন্দাদের নৌকা দিয়ে পারাপারই ছিল একমাত্র ভরসা। ছিলনা এলাকার মানুষের তেমন কোন যোগাযোগের রাস্তা-ঘাট ব্যবস্থা। দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও কালের পরিক্রমায় দুই ইউনিয়নের মানুষের যাতায়তের ভোগান্তি দেখে বিগত ১৯৯১ সনের ভয়াবহ প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের পরে বেসরকারী এনজিও সংস্থা কারিতাসের অর্ধায়নে ওই ব্রিজটি নির্মিত হয়।

ভুক্তভোগীরা জানান, কিন্তু ব্রিজ নির্মিত হওয়ার পর কয়েক বছর যেতে না যেতেই ওই ব্রিজের কাঠের পাতাটন, পিলারগুলোতে মরিচা এসে নষ্ট এবং অকেজো হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে ব্রিজটির উপরের এঙ্গেল সম্পূর্ণ ভেঙে যাওয়ায় এসব গ্রামের শিক্ষার্থী ও পথচারীরা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আসছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে  সেতুর উত্তর পাশ্বের অংশ দেবে পাতাটন উঠে যাওয়ার কারণে মারাত্মকভাবে চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। সেতুটি  ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত করতে ভোগান্তির যেন অন্ত নেই। শুধু একটি সেতুর অভাবে দূর্ভোগে পড়েছেন ১৩ গ্রামের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মধ্যম কোনাখালী-ঢেমুশিয়া ভরামুহুরী খালের উপর নির্মিত লাল ব্রিজ দিয়ে ১৩ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করে। এ ব্রিজের দক্ষিণে ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন। ওই ইউনিয়নের ছয় গ্রামের বাসিন্দারা সেতুর উত্তর পাশে অবস্থিত কোনাখালী ইউনিয়নে তাদের কৃষিজমিতে চাষাবাদ ও এলাকার একমাত্র ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল ইরফান মাদ্রাসার  এতিমখানা, নুরানী ও হেফজখানার প্রায় দু’শতাধিক শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে সেতুর উপর দিয়ে পারাপার করে আসতে হয়। ব্রিজটি ব্যবহার করে থাকেন, মোছার পাড়া, জমিদার পাড়া, নোয়াপাড়া, বাজারপাড়া, আম্মারডেরা ও হেতালিয়া পাড়া। এদিকে কোনাখালী ইউনিয়নের মৌলভী পাড়া, উত্তর পাড়া, কিল্লাপাড়া, খাতুর বাপের পাড়া, কুতুবদিয়া পাড়া, সিকদার পাড়া ও চড়াপাড়ার লোকজন প্রতিদিন সেতু পারাপার করে ঢেমুশিয়া হয়ে ইলিশিয়া, বদরখালী বাজার এবং চকরিয়া পৌরশহর ও উপজেলা সদরে যাতায়ত করেন। এ নদীর উপরে নির্মিত পুরাতন জরাজীর্ণ ব্রিজটি একটি পাকা সেতু নির্মাণ করা হলেই চিত্র পাল্টে দিতে পারে দুই ইউনিয়নের মানুষের জীবন যাত্রার মান, খুলে যাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের দ্বার।

স্থানীয় দারুল ইরফান মাদ্রাসার পরিচালক ও কক্সবাজার বদর মোকাম জামে মসজিদের খতিব হাফেজ মৌলানা নুরুল কাদের বলেন, এ ব্রিজটি অতি পুরাতন এবং দীর্ঘ একযুগ ধরে অকার্যকর হয়ে পড়ে রয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেতুটি মেরামতের কোন উদ্যোগ না নেওয়ার কারণে বর্তমানে সেতু দিয়ে চলাচল করা বড় ধরণের ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এ ভাঙা সেতু পারাপার করে প্রায় দু’শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীদের মাদ্রাসায় পাঠদান নিতে আসতে হয়। নিজ অর্থায়নে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে কয়েকবার মেরামত করলেও তা বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। জনগণ ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন ওই সেতু দিয়ে চলাচল করছেন।

ঢেমুশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলম জিকু বলেন, ঢেমুশিয়া এলাকার সিংহভাগ মানুষের জায়গা জমি রয়েছে কোনাখালী ইউনিয়নের মধ্যে। এই এলাকাটি হচ্ছে কৃষি নির্ভরশীল। এখানকার মানুষের প্রধান আয়ের উৎস হচ্ছে কৃষি চাষ। গ্রামের উৎপাদিত ফসল ও কৃষিপন্য শাক-সবজি বিক্রি করতে নিয়ে যেতে সেতুর অভাবে দূর্ভোগ পোহাতে হয়। ঢেমুশিয়ার ৬-৭ গ্রামের লোকজন শুধুমাত্র একটি সেতুর অভাবে উৎপাদিত কৃষিপণ্য অন্যত্র নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই এলাকাবাসীর দাবী অবিলম্বে নদীর ওপর একটি আরসিসি সেতু নির্মাণের।

এ ব্যাপারে কোনাখালী ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল হক সিকদার জানান, দুই ইউনিয়নের সংযোগ স্থাপনস্থল হল এই মধ্য কোনাখালী লালব্রিজ। এ এলাকাটি হল কৃষি প্রধান। এই অঞ্চলের কৃষকেরা সারা বছর ধরে বিভিন্ন জাতের ফসল উৎপন্ন করেন। শুধুমাত্র সেতুর অভাবে এই এলাকার কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ফসল অন্য এলাকায় নিতে পারেন না। ফলে স্বল্প মূল্যে জমি থেকে বিক্রি করতে বাধ্য হন কৃষক। এছাড়া ব্রিজ সংলগ্ন ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্টান দারুল ইরফান মাদ্রাসার অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ভাবে ঢেমুশিয়া এলাকা থেকে মাদ্রাসা আসতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। সেতুটি নতুন করে পুন:নির্মাণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মৌখিক ও লিখিতভাবে আবেদন দেওয়া হয়েছিল। যতদ্রুত সম্ভব সেতুটি নির্মাণের ব্যাপারে  প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. আমিনুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘ব্রিজটির অবস্থান দুই ইউনিয়নের সীমান্তে। তাই স্ব স্ব চেয়ারম্যান লিখিতভাবে জানালে ব্রিজটি নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ এবং অর্থ বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পত্র প্রেরণ করা হবে।’

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন