‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগানে কলেজ শিক্ষকদের উপর হামলা: আহত ৩

pic-pekua-hamla-zia-copy

পেকুয়া প্রতিনিধি:

নির্বাচনী পরীক্ষায় নকল করায় দায়ে দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে বহিস্কার করার জের ধরে কক্সবাজারের পেকুয়া শহীদ জিয়াউর রহমান উপকূলীয় কলেজের শিক্ষকদের উপর অর্তিকিত হামলা চালায়। এতে কলেজের ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ আলম(৪০), বশির আলম(৩৫), জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রদর্শক এনামুল হক (৪৫) গুরুত্বর আহত হয়।

ঘটনার খবর পাওয়ার পর পরই পেকুয়া থানা পুলিশের এসআই বিমল কান্তি, টিবলু মজুমদারের নেতৃত্বে সঙ্গীয় ফোর্স দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে এবং আহত শিক্ষকদের কে দ্রুত পেকুয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার সকাল সাড়ে ৯ টায় শহীদ জিয়াউর রহমান উপকূলীয় কলেজে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানায়, সারাদেশের ন্যায় গত ৩ নভেম্বর থেকে আমাদের কলেজেও ২য় বর্ষের নির্বাচনী পরীক্ষা ও ১ম বর্ষের ২য় সাময়িক পরীক্ষা যথাসময়ে সুষ্ঠু ভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। ৫ নভেম্বর শনিবার ইংরেজী ১ম পরীক্ষা ছিল। ওই দিন ২য় বর্ষের ছাত্র মিনার হোছাইন নামের এক পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে পরীক্ষার হলরুমে একটি নকল পাওয়া যায়। এ সময় পরীক্ষার কক্ষ পরিদর্শক ওই ছাত্রকে সাময়িক বহিস্কার করে ও নকল না করার অনুরোধ করেন। এতে সে ক্ষুদ্ধ হয়ে পর দিন ৬ নভেম্বর ইংরেজি ২য় পরীক্ষার দিন হোস্টেলের আবাসিক ছাত্র সালাহউদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন আবাসিক ছাত্র পরীক্ষার আগ মূহুর্তে লাঠিসোটা নিয়ে ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগানে কলেজের শিক্ষক মিলনায়তনে শিক্ষকদের উপর হামলা চালায় এবং কলেজে তালা লাগিয়ে দেয়। পরে বিক্ষুদ্ধ ছাত্ররা উত্তেজিত হয়ে হোস্টেলের দিকে যাওয়ার পথে ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ আলম, বশির আলমকে পায় এ সময় তারা ওই শিক্ষকদের উপর এলোপাতাড়ি হামলা চালিয়ে গুরুত্বর আহত করে। তাদের বাঁচাতে কলেজের জীববিজ্ঞানের প্রদর্শক এনামুল হক আজাদ এগিয়ে আসলে তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে গুরুত্বর আহত করে। এদিকে কর্তব্যরত ডাক্তার জানিয়েছেন আহত শিক্ষকদের কে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এতে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২ শিক্ষককে চমেকে রেফার করায়। ঘটনার পর পরই উক্ত ঘটনা নিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ ওবাইদুর রহমান সাংবাদিকদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ ওবায়দুর রহমান বলেন, পরীক্ষায় নকল করার সুযোগ না দেওয়ায় এ ধরণের ঘটনা ঘটিয়েছে গুটি কয়েক ছাত্র। তিনি আরো জানান, আমরা তাদের জন্য এত কষ্ট করেও আমাদের উপর এমন হামলা মেনে নেওয়া যায়না। অনৈতিক সুযোগ সুবিধা পাওয়া এবং নির্বাচনী পরীক্ষা না দিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়ার মত সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য গুটি কয়েক ছাত্র এ ধরণের নেক্কারজনক ঘটনা জন্ম দিয়েছে। এ বলে ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান তিনি।

এরপর সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ ও পরীক্ষার্থী মিনারের নকল ও খাতাসহ সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন এবং বলেন পরীক্ষার হলে নকল ধরা কি শিক্ষকদের অপরাধ? তিনি আরো জানান, নকল করলে স্বাভাবিক ভাবে ৫-১০ মিনিট বহিস্কার করা হয়। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা উদঘাটনের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষকদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি ঘটনা করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে কলেজ থেকে বহিস্কারসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা দাবী করেন দুজন ইংরেজী প্রভাষক ইংরেজী প্রাইভেট পড়ানোর কারণে হয়ত ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে দ্বন্দ এবং শিক্ষকদেরও গ্রুপিং এর জের ধরে এ ঘটনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি অকপটে বলে দেন আমার কলেজে এ ধরণের কোন শিক্ষক গ্রুপিং নেই। তিনি আরো জানান আমরা মানুষ গড়ার কারিগর এখন আমাদের জীবনের নিরাপত্তা নেই।

এদিকে ঘটনার দিন ইংরেজী ২য় পরীক্ষা ছিল সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষা দিতে এসে এসব ঘটনা দেখে হতভম্ব হয়ে এদিক ওদিক ছুটাছুটি করতে শুরু করে। তাদের অভিযোগ গুটি কয়েক ছাত্রদের কারণে আমরা নির্বাচনী ও ২য় সাময়িক পরীক্ষা দিতে পারছি না। কেন আমরা পরীক্ষা দিতে পারব না? আমাদের জীবনের নিরাপত্তা নেই কেন? বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষা অঙ্গনে এসব কি হচ্ছে?

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নির্বাচনী পরীক্ষা দিতে আসা এক ছাত্রী জানায়, ২য় এবর্ষের ছাত্র সালাহ উদ্দিন ও মিনারসহ ছাত্রাবাসে অবস্থাররত কয়েকজন ছাত্ররা এসে আলম স্যার, বশির স্যার, এনাম স্যারকে মারধর করে তাদের প্রত্যেকের হাতে একটি করে লাঠি রয়েছে। তারা ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগান দিয়ে এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। আমরা অবিলম্বে আমাদের শিক্ষকদের উপর হামলাকারী ওই ছাত্রদের কে গ্রেফতার ও কলেজ থেকে বহিস্কার করার দাবী জানেই।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কলেজের উপধাক্ষ্য বাবু মংখেরী রাখাইন, অধ্যাপক আজম খান চৌং, মোহাম্মদ আলী, আবুল হাসেম, মোস্তাফা জামান খারেজ, জসিম উদ্দিন, প্রভাষক আজিজুর রহমান, নুরুল হুদা, নাজিম উদ্দিন, ড. জাকির হোসেন হাওলাদার, রবি, প্রদর্শক আবু হানিফ প্রমূখ। পরে শিক্ষকদের নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ এক জরুরী সভার আয়োজন করে। সভায় ঘটনায় জড়িত ছাত্র নামধারী ওই ছাত্রদেরকে সাময়িক বহিস্কারের সিদ্ধান্ত হয়।

অপরদিকে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কফিল উদ্দিন জানান, ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগান দিয়ে সালাহ উদ্দিন, মিনারসহ যারা শিক্ষকদের উপর হামলা করছে তারা উপজেলা ছাত্রলীগ তথা কলেজ ছাত্রলীগের কেউ নয়। তারা শুধু মাত্র পুলিশের কাছ থেকে বাঁচার জন্য এ শ্লোগান ব্যবহার করেছে। এ শ্লোগান দেওয়ায় ছাত্রলীগের মানহানি হয়েছে। তাই আমরা উপজেলা ছাত্রলীগ এর সবকিছু তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। পাশাপাশি উক্ত ঘটনার জন্য তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই আমরা।

এ ব্যাপার পেকুয়া থানার ওসি জিয়া মোহাম্মদ মোস্তাফিজ ভূইয়া জানান, ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনা হয়েছে। অভিযোগ পেলে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন