জেঁকে বসেছে শীত

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

হঠাৎ করেই কক্সবাজার জেলায় জেঁকে বসেছে শীত। দিন দিন বাড়ছে শীতের তীব্রতা। শীতে কাবু সবাই, কিন্তু অসহনীয় হয়ে উঠছে খেটে খাওয়া অসহায় দরিদ্র মানুষের জীবন।

হিমেল বাতাসে গত এক সপ্তাহ ধরে জবুথবু অবস্থায় মানুষজনকে রাস্তায় চলাচল করতে দেখা গেছে। কনকনে ঠান্ডায় কাহিল হয়ে পড়েছে বৃদ্ধ ও শিশুরা। অপরদিকে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ঘন কুয়াশার কারণে সড়কে দিনের বেলা যানবাহন হেড লাইট জ্বালিয়ে অতি সাবধানে চলাচল করছে।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে ঠান্ডা, নিউমোনিয়া, সর্দি, কাশি, জ্বরসহ শীতজনিত নানা রোগ। এতে শিশুরা ব্যাপকহারে আক্রান্ত হচ্ছে। জেলার সব সদর হাসপাতালেগুলোতে এখন এসব রোগীদের ভীড়। সামনে আরও শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

গরীব মানুষেরা শহরের নামি দামী দোকানে যেতে না পেরে রাস্তার পাশের ফুটপাত থেকে শীতের জন্য গরম কাপড় সংগ্রহ করছেন। শীত বেশি পড়ায় রাস্তার পাশে শীতের গরম কাপড় বিক্রির দোকান গুলোতে উপচে পড়া ভীড়। আর যারা একদমই শীতের কাপড় কিনতে পারছেন না তাদের কাছে আগুনই একমাত্র ভরসা। এ শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ার ছিন্নমূল মানুষেরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।

শহরের বৈদ্যঘোনা এলাকার বাসিন্দা ছালেহ আহমদ বলেন, শীতের তীব্রতা বেড়ে গেছে। গরীব মানুষ, গরম কাপড় কেনার সাধ্য নেই। সকালে রোদ না উঠা পর্যন্ত আর রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত আগুনের কাছ বসে থাকি। আগে একদম সকালে কাজের সন্ধ্যানে বের হতে পারতাম আর এখন শীতের কারণে বের হওয়া অনেকটা কঠিন হয়ে পড়েছে।

বুধবার (২ জানুয়ারি) বিকেল ৫ টার দিকে শহরের নুনিয়াছড়া থেকে কাজ শেষে করে বাড়ি ফেরার পথে বাংলাবাজার এলাকার দিন মজুর মালেক মিয়া বলেন, কয়েকদিন থেকে ব্যাপক ঠান্ডা লাগছে। ঘরের বাইরে বের হলেই শীতের প্রভাব বেশি লাগে। এমনকি ভোর ও সন্ধ্যার পর তো কোনও জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকাই মুশকিল। তারপরও ভোরে কাজের সন্ধ্যানে গ্রাম থেকে শহরে ছুটে আসি। কারণ সংসারের খরচ তো আর থেমে থাকবে না।

শীতে কাবু পিএমখালী থেকে আসা আবদু জব্বারের সাথে কথা হয় শহরের দিনমজুরের হাট হিসেবে পরিচিত শহরের শহিদ সরণীর রাস্তার মাথা (ঘুমগাছ তলায়)।  তিনি বলেন, ভোরে কুয়াশা ভেঙে শহরে এসেছি। কিন্তু প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে মালিকেরা তেমন কাজ করাচ্ছেন না। কাজ করলে কিছু টাকা আয় হয়, না করলে তো টাকা পাব না।

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ মাসের শেষের দিকে কক্সবাজারে শীত আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তারই পূর্বাভাস হিসেবেই হয়ত হঠাৎ শীতের তীব্রতা বেড়েছে। কক্সবাজারে গত এক সপ্তাহ আগে থেকে ঠান্ডা বাতাস বইতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাতাসের গতি বেড়ে যায়। সেই সাথে বাড়তে থাকে শীতের তীব্রতা। দিনভর সূর্য না ওঠায় সন্ধ্যার পর শীতের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। শীতের এই তীব্রতা অব্যাহত থাকলে এসব দরিদ্র মানুষের জীবন আরও দুর্বিসহ হয়ে উঠতে পারে।

কক্সবাজার শহরের লালদীঘিপাড়ের রাস্তার পাশের ফুটপাতের শীতবস্ত্রের দোকানদার মো: আবদুল্লাহ জানান, গত ১০ দিন থেকে বেচাকেনা খুব ভালো হচ্ছে। শীত বেশি পড়লে আমাদের বেচাকেনাও খুব ভালো হয়। সব সময় ভীড় লেগেই আছে।

শহরের এন্ডারসন রোডের শীতের কাপড় ব্যবসায়ী খায়রুল জানান, শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ ছুটছে গরম কাপড় ও লেপ তোষক কিনতে। শীত বাড়ার সাথে সাথে এবার সকল পর্যায়ের মানুষ প্রচুর গরম কাপড় কিনছেন। তাই ব্যবসাও ভাল হচ্ছে।

এদিকে শহরের চেয়ে জেলার টেকনাফে আরও তীব্র শীত পড়ছে বলে জানা গেছে। এ কারণে মানুষের জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে একাধিক শ্রমিকরা জানান। তারা আরও জানান, এখনো কোনো সংস্থা বা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়নি। যার কারণে অসহায় গরীব মানুষরাই চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছে। এভাবেই শীতের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি হলে সাধারণ মানুষের প্রাণহানীরও আশঙ্কা রয়েছে।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শাহিন আবদুর রহমান চৌধুরী বলেন- কয়েকদিন ধরে ঠান্ডাজনিত রোগের অনেক শিশু ও বৃদ্ধ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। শীতের কারণে হাসপাতালগুলোতে শিশু রোগীদের চাপ একটু বেশি। তবে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও উপকরন সরবরাহ রয়েছে। ডাক্তার ও নার্স তাদের সাধ্যমত চিকিৎসা দিচ্ছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন