জিরো লাইন ক্রস করলেই সমুচিত জবাব- বিজিবি মহাপরিচালক


নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান:
জিরো লাইন ক্রস করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ত্বের উপর বিন্দু পরিমাণ আঘাত হলে তার সমুচিত জবাব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আবুল হোসেন। মিয়ানমার বাহিনী এবং সশস্ত্র রোহিঙ্গাদের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি এ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। সীমান্ত পরির্দশন শেষে রোববার বিকালে বান্দরবান বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়নের ঘুমধুম বিওপিতে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন বিজিবি ডিজি।

এসময় তিনি আরও বলেন, মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি) পুলিশ বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করতে চেষ্টা করলে তার দাত ভাঙ্গা জবাব দেওয়া হবে। কোনো বিদেশী আমাদের এখানে আসতে পারবে না। আমরা ইনশা’আল্লাহ সমুচিত জবাব দেওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। আমাদের বিজিবির সদস্যরা সব সময় কঠোর সর্তক অবস্থায় রয়েছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পুরো সীমান্ত এলাকায় দিবারাত্রি বিজিরি টহল জোরদার রয়েছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আবুল হোসেন বলেন, আপনার নিশ্চিত হতে পারেন আমাদের এখানে গোলাগুলি তথা আমাদের জিরো লাইন ক্রস করবে না। যদি করে থাকে আমরা সমুচিত জবাব দেব। সীমান্তে বিজিবির পদক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, সীমান্তে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে প্রস্তুত বিজিবি। বিজিবি আরও ১৫ হাজার সদস্য বাড়াবে। এর আগে বিজিবি ডিজি ঘুমধুম সীমান্তের জিরো লাইন পরিদর্শন করেন। মিয়ানমারের রাখাইনের সংঘাত থেকে বাঁচতে সেখানে বেশ কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, চলতি মাসের শুরুতে রাখাইনে সেনা মোতায়েন করে মিয়ানমার সরকার। ঘোষণা দেয় অভিযানের। এরই মধ্যে গ্রামের পর গ্রাম রোহিঙ্গাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পর বদলা নিতেই রোহিঙ্গা যোদ্ধারা অন্তত ২৫টি পুলিশ পোস্টে হামলা এবং একটি সেনা ঘাঁটিতে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ শুরু হয় বলে সূত্র জানায়।

এই সংঘর্ষে রোববার সকাল পর্যন্ত ৯৬ জন নিহতের খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। এর মধ্যে ৮৪ রোহিঙ্গা মুসলিম আর ১২ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন।

সংঘর্ষের পর স্রোতের বেগে সীমান্তে আসছে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা। মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রায় ২৭০ কিলোমিটার সীমান্ত। এসব এলাকায় বাংলাদেশ সীমান্ত বাহিনী বিজিবির কড়া নজরদারি থাকা সত্ত্বেও তারা রাতে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে আসা দুই রোহিঙ্গা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। স্থানীয়দের ধারণা, অন্তত ৩ থেকে ৫ হাজার রোহিঙ্গা নতুন করে অনুপ্রবেশ করেছে।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কক্সবাজার ৩৫ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর কাজী মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, যারা বিপদসংকুল পথ পাড়ি দিয়ে অনুপ্রবেশ করছেন, তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে না। তবে তাদের বাংলাদেশের ভেতরেও ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

গতবছরের অক্টোবরে রাখাইনে সর্বশেষ বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়। ওই সময়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলায় ৯ পুলিশ সদস্য নিহত হন বলে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ দাবি করে।

পরে মুসলিম সংখ্যালঘু রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনী অভিযান চালায়। এ সময় সেনাদে বিরুদ্ধে বহু মুসলিমকে হত্যা, বাড়িঘরে আগুন ও নারীদের ধর্ষণের মতো গুরুতর অভিযোগ ওঠে।

জীবন বাঁচাতে সে সময় প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা নাফ নদী পার হয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজার ও বান্দরবানে অবস্থান নেয়। ওই ঘটনায় জাতিসংঘ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন